অবিশ্বাস্য ও যুগান্তকারী আবিস্কার : কৃত্রিম ডিম, ‘চায়নার বিষাক্ত কৃত্রিম ডিম থেকে সাবধান’

প্রিয় পাঠক, ব্যাপারটির সত্যতা স্বীকার করে বিবৃতি দিয়েছেন চায়নার রাষ্ট্রিয় টিভি। Chinese Central Television. CCTV এর সংবাদে বলা হয় ২০০৪ সালে চায়নায় কৃত্রিম ডিম আবিস্কার নিয়ে গবেষনা শুরু হয়। সর্ব প্রথম চায়নার কৃত্রিম ডিম আবিস্কারের তথ্য প্রকাশিত হয় ২০০৫ সালে The Internet Journal of Toxicology, Volume-2,Number-1 সংখ্যায়। চায়নার আবিস্কৃত কৃত্রিম ডিমের সফলতায় উৎসাহী হয়ে আমেরিকায় কৃত্রিম ডিম আবিস্কার নিয়ে গবেষনা শুরু হয়। কৃত্রিম ডিম আবিস্কার করে চায়না সফল হলেও এই ডিম খেয়ে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার ঝুঁকি অনেক বেশী রয়েছে। তাই আমেরিকা কৌশল অবলম্বন করে কৃত্রিম ডিমকে অধিক নিরাপদ ও ঝুঁকিমুক্ত করার গবেষনা করছে। সম্প্রতি হংকং ভিত্তিক চায়নিজ ম্যাগাজিন East Week এ কৃত্রিম ডিম প্রস্ত্ততের রেসিপি সহ ছবি প্রকাশ করা হয়। এছাড়াও কৃত্রিম ডিমের ক্ষতিকর দিক কিংবা ব্যবহার সম্পর্কে নিউইয়র্কের প্রেস ইউনিভার্সিটি ও সাউথ অষ্ট্রেলিয়ান রিসার্চ এন্ড ডেবেলপমেন্ট এর একদল বিজ্ঞানী কাজ করে যাচ্ছেন।

1. এই উপাদান গুলো দিয়ে কৃত্রিম ডিম প্রস্ত্তত করা হয়।

2. একটি আলাদা পাত্রে সব ক্যামিকেল মিশিয়ে ছাঁচে ঢালার জন্য প্রস্ত্তত করা হয়

3. তারপর ছাচে, মিশ্রিত রাসায়নিক ক্যামিকেল ঢালা হয়

4. ডিমের কুসুম প্রস্ত্ততির ব্যবস্থা করা হয়

5. ডিমের কুসুম প্রস্ত্তত করার পর ডিমের খোসা প্রস্ত্তত করা হয়

6. ডিম প্রস্ত্তত হয়ে গেলো

7. এবার ভাজি করে খেয়ে নেন, নয়তো ঠান্ডা হয়ে যাবে

কৃত্রিম ডিম কি?
কৃত্রিম ডিম দেখতে অবিকল মুরগীর ডিমের মতো। এই কৃত্রিম ডিমের বাহ্যিক আবরন দেখে সহযে কৃত্রিম ডিম সনাক্ত করা যায় না। কৃত্রিম ডিম প্রস্ত্তত করা হয় রাসায়নিক ভাবে। কৃত্রিম ডিমের উপরের শক্ত আবরন বা খোসা তৈরী করতে ব্যবহার করা হয় বেনজয়িক এসিড, জেলি, বেকিং পাউডার ও বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক ক্যামিকেল। কৃত্রিম ডিমের কুসুম তৈরী করতে ব্যবহার করা হয় বিভিন্ন ধরনের রং বা কালারিং এজেন্ট। যেগুলো সরাসরি ক্যালসিয়াম ক্লোরাইড সমৃদ্ধ রাসায়নিক ক্যামিকেলের সাথে মিশিয়ে লাল বা গাঢ় হলুদ রংয়ের কৃত্রিম ডিমের কুসুম প্রস্ত্তত করা হয়।

কিভাবে ডিমের কুসুম ও সাদা অংশ তৈরী হয় ঃ-
কৃত্রিম উপায়ে রাসায়নিক ক্যামিকেল ও রং দিয়ে ডিমের কুসুম ও সাদা অংশ প্রস্ত্তত করা হয়। ডিমের কুসুম ও ডিমের সাদা অংশের সমন্বয়ে কৃত্রিম ডিম তৈরী করতে প্লাষ্টিকের ছাঁচ ব্যবহার করা হয়। প্লাষ্টিকের ছাঁচে ডিমের সাদা অংশ তৈরী করে তার মাঝখানে ডিমের কুসুম তৈরী করা হয়। কৃত্রিম ভাবে প্রস্ত্তত ডিমের সাদা অংশ ও ডিমের কুসুমের মাঝখানে একটি পাতলা আবরন তৈরী করা হয় যাতে ডিমের সাদা অংশের সাথে ডিমের কুসুম মিলে না যায়। অর্থাৎ কৃত্রিম ভাবে প্রস্ত্তত ডিমের সাদা অংশকে ঐ পাতলা আবরণটি ডিমের কুসুম থেকে পৃথক রাখে। ডিমের উপরের শক্ত সাদা আবরণ তৈরী করতে ব্যবহৃত হয় ওয়াক্স এর মিশ্রন যেখানে প্যারাফিন, বেনজয়িক এসিড, বেকিং পাউডার ও রাসায়নিক ক্যামিকেল মিশ্রিত করা হয়। তারপর এই মিশ্রিত দ্রবনকে ডিম আকৃতির একটি প্লাষ্টিকের খোলা ছাঁচে ঢালা হয় এবং কিছু সময় ধরে ঐ অবস্থায় রাখা হয় ও হালকা তাপমাত্রা প্রয়োগ হয়। সামান্য তাপমাত্রায় ডিমের খোসা বা আবরণ যখন শক্ত হয় তখন তা কৃত্রিম হলেও প্রাকৃতিক ডিমের মতো মনে হয়।

কৃত্রিম ডিমের পুষ্টিগুনঃ-
ইউরোপ ও আমেরিকার পুষ্টি বিজ্ঞানীরা কৃত্রিম ডিমের পুষ্টিগুন পরীক্ষা করে বলেছেন, কৃত্রিম ভাবে প্রস্ত্তত ডিমে কোন প্রোটিনের অস্তিত্ব নেই। সূতরাং কৃত্রিম ডিমে অন্যান্য কোন পুষ্টিগুন নাই এবং এ ডিম খেলে শরীরে বাড়তি শক্তি উৎপাদনে কোন ভূমিকা রাখতে পারবে না। সূতরাং ক্ষতিকর রাসায়নিক ক্যামিকেল দিয়ে প্রস্ত্ততকৃত কৃত্রিম ডিম খেলে মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। চায়না থেকে পাচার হয়ে যে কৃত্রিম ডিমগুলো সর্বপ্রথম বার্মায় আসে তা পরীক্ষা করে দেখা যায় কৃত্রিম ডিমের ভঙ্গুরতা অনেক বেশী। অর্থাৎ অল্প চাপেই বা আঘাতেই প্রাকৃত্রিম ডিমের চেয়ে দ্রুত কৃত্রিম ডিম ভেঙ্গে যায়। কৃত্রিম ডিম দেখতে চকচকে এবং অমসৃন খসখসে। যখন কৃত্রিম ডিম সিদ্ধ করা হয় খুব দ্রুত কৃত্রিম ডিমের কুসুম সাদা অংশের সাথে মিশে বর্ণহীন হয়ে যায়।

কৃত্রিম ডিম ও আসল ডিম চেনার উপায়ঃ-
কৃত্রিম ডিম ও আসল ডিমের পার্থক্য বুঝতে হলে ডিম হাতে নিয়ে ঝাঁকুনি দিয়ে বা চাপ দিয়ে দেখতে হবে। যদি ডিমটি দ্রুত ভেঙ্গে যায় তবে সেটি নকল বা কৃত্রিম ডিম। আসল ডিমের চেয়ে কৃত্রিম ডিম দেখতে গাঢ় রঙ্গের, চকচকে। বার্মার স্বাস্থ্য বিষয়ক বিশেষজ্ঞগন কৃত্রিম ডিম পরীক্ষা করে বলেছেন, যেহেতু কৃত্রিম ডিমে কোন প্রোটিন নেই, কোন পুষ্টিকর উপাদান নেই সূতরাং কৃত্রিম ডিম খেলে রাসায়নিক ক্রিয়ায় শরীরের অঙ্গহানী সহ বিষক্রিয়ায় মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। বার্মার সরকারী কর্তৃপক্ষ সেদেশের জনগনকে কৃত্রিম ডিমের বিক্রয়দাতা, সরবোরাহকারী প্রতিষ্ঠান গুলোকে চিহ্নিত করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।

চায়নাঃ কৃত্রিম খাবারের স্বর্গভূমিঃ-
চায়নাকে কৃত্রিম খাবার প্রস্ত্ততের স্বর্গভূমি বলা হয়। কারন চায়না খাদ্য সামগ্রী বলতে যা পাওয়া যায় তার সবকিছুই কৃত্রিম। কথিত আছে চায়না এখন কৃত্রিম মানুষ ছাড়া সব কিছুই কৃত্রিমভাবে প্রস্ত্তত করতে পারে। চায়না এমন একটি দেশ যেখানে একই প্রোডাক্ট বিভিন্ন গুন ও মানের প্রস্ত্তত করা সম্ভব। যেমনঃ- যেখানে একটি আসল প্রকৃত ডিমের মূল্য যদি ৬ টাকা হয় তবে কৃত্রিম ডিমের দাম মাত্র ২ টাকা। বেশ কিছু দিন পূর্বেই চায়নার কৃত্রিম মেলামিন মিশ্রিত দুধ পান করে শতশত শিশু মৃত্যু বরণ করেছে। পৃথিবী ব্যাপী চায়নার ম্যালামিন মিশ্রিত দুধের ট্র্যাজিডির শোক না কাটতেই আবার শুরু হলো কৃত্রিম ডিম উৎপাদনের মহড়া। সূতরাং কৃত্রিম ডিমের ক্ষতিকর বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে আবারও মৃত্যুর গঠনা ঘটতে পারে। কারন ক্ষতিকর নিষিদ্ধ কিছু রাসায়নিক ক্যামিকেল যেমন- ক্যালসিয়াম কার্বনেট, স্টার্চ, রিজিন জিলাটিন, এলাম এবং অন্যান্য ক্যামিকেল সংমিশ্রনে কৃত্রিম ডিম প্রস্ত্তত করা হয়।
প্রিয় পাঠক, কৃত্রিম ডিমে ব্যবহৃত ক্যামিকেল যেমনঃ- Baifen (alumen), Gelation, Laetone, Carboxy methyl cellulose, calcium chloride, sodium alga acid, sodium benzoate, lysine, paraffin wax, calcium carbide, gypsum powder ইত্যাদি ব্যবহৃত হয়। এই ক্যামিকেল গুলো শরীরের জন্য সরাসরি ক্ষতিকর ও দীর্ঘ দিন ব্যবহার করলে স্নায়ু তন্ত্রের রোগ হতে পারে। এছাড়াও কৃত্রিম ডিমে ব্যবহৃত ক্যালসিয়াম কার্বাইড দীর্ঘ দিন ব্যবহার করলে ফুসফুসের ক্যানসার সহ জটিল রোগ হতে পারে। সূতরাং সংশ্লিষ্ট মহলের খাদ্য সামগ্রী আমদানীর নীতি মালায় সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। চায়না থেকে খাদ্য আমদানীর ক্ষেত্রে বিশেষ নীতি মেনে চলা উচিত। অন্যথায় চায়না থেকে আমদানী করা খাদ্যের বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হতে পারে শিশু থেকে শুরু করে যে কেউ। প্রিয় পাঠক, প্রতিদিনের খাদ্য তালিকা থেকে আমাদের যথাসম্ভব কৃত্রিম রাসায়নিক খাদ্য বর্জন করা উচিত। রোগমুক্ত দীর্ঘ জীবন পেতে হলে ক্যামিকেল মুক্ত সবুজ/সতেজ খাবার খাওয়া উচিত।


লেখক মাছুম চৌধুরী