ওয়াচডগের রাজনৈতিক গল্প

ট্রানসপোর্ট, ব্যঙের ছাতার মত যত্র তত্র গজিয়ে উঠেছে হাজার হাজার দালান-কোঠা, তার দেখা মানুষের চাইতে রাস্তায় দশ গুন মানুস! হঠাৎ করে ভয়টা চেপে ধরল তাকে, নিশ্চয় মস্তিস্কে কিছু একটা গোলমাল হয়েছে তার। ডাক্তার শমসের এমন একটা আশংকার কথাই বলেছিলেন শেষ সাক্ষাতে। দৃশ্যটা চোখে পড়তে পাগল হওয়ার ব্যাপারটায় নিশ্চিত হয়ে গেল গোলান্দাজ, ফুটপাথে কেউ একজন সোলার প্যানেল সহ ল্যাপটপ ফেরী করছে! ’বাংলাদেশে এ অসম্ভব’, এমনটা ভেবে নিজের চুল নিজেই টানতে শুরু করল গোলান্দাজ বয়াতী।

নিজেই থামাল রিক্সাটা, ’এই ব্যাটা, গুলসান যাবি?’। ‘ইডা আবার কোন জায়গা?’ – জিজ্ঞেষ করল রিক্সা চালক। ‘মৌচাক মোড় হয়ে সোজা রামপুরার দিকে যাবি’, তার নিজেরও ভাল করে জানা নেই পথের বর্ণনা, তবু যতটা পারল বুঝানোর চেষ্টা করল রিক্সা চালককে। ’আরে নেংটা বাবা, ওদিকি ত ককোসান, গুলসান হতি যাবি কোন দুইখ্যে!, বলেই রিক্সাওয়ালা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল গোলান্দাজের দিকে। গুলসানের নাম এখন ককোসান! গোলক ধাঁধাঁয় পরে গেল গোলান্দাজ। সম্ভাবনার কথাটা মনে হতে বিদ্যুৎ খেলে গেল শরীর জুড়ে, নিশ্চয় সামরিক অভ্যুত্থান! ’লীগ’কে সড়িয়ে ’দল’ ক্ষমতা নিয়েছে নিশ্চয়, আর তাতেই রাতারাতি বদলে দিয়েছে গুলসানের নাম। আরাফাত রহমান ককো, নামটা মনে হতেই নেতিয়ে এল গোলান্দাজের শরীর। ১২০ কোটি বিদেশে, দেশে আরও ২০০ কোটি, এতগুলো টাকার ভবিষত নিয়ে চিন্তায় পরে গেল শহর লীগের অন্যতম কর্নধার গোলান্দাজ বয়াতী। ঘামতে শুরু করল সে। চারদিক অন্ধকার হয়ে এল হঠাৎ করে, ধূলি ঝড়ে ডুবে গেল ঢাকা শহর। উড়ন্ত পত্রিকাটা ছোবল মেরে ধরে ফেলল গোলান্দাজ, তাতে মুখ ঢেকে মৃতের মত পরে রইল কিছুক্ষন। ২/৩ মিনিট স্থায়ী ঝড়টা বিদায় নিতে পত্রিকার উপর হুমড়ি খেয়ে পরল ক্যুর খবরের আশায়। কোটারা হতে চোখ বেরিয়ে আসতে চাইল গোলান্দাজের, বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেল সে! পত্রিকার প্রথম পাতায় প্রধানমন্ত্রী জামাইমা জিয়ার ছবি, বয়সের ভারে একেবারে নূয্য, জুবুজুবু। অথচ গতকালই হাসিনা মন্ত্রীসভার জনৈক উপদেষ্টা দপ্তরে ভাগ বটোয়ারা হল গুলিস্থান-যাত্রাবাড়ি ফ্লাইওভার প্রকল্পের কমিশন প্রাপ্ত ৭০ লাখ টাকা।

২০৫৯ সাল!!!!  তারিখটা এবং  সাল চোখে পরতেই মুর্ছা গেল গোলান্দাজ বয়াতী।

 



Photobucketচারদিকে চোখ বুলিয়ে অবাক হয়ে গেল গোলান্দাজ, জায়গাটা একেবারেই অপরিচিত মনে হল তার। সাদা দেয়াল, লম্বা লম্বা জানালার উপর ধবধবে সাদা পর্দা, এমনকি ঝুলন্ত ফ্যানগুলোও কেমন যেন অতিরিক্ত সাদা মনে হল তার কাছে। বিশাল আকৃতির রুমটায় নিজের খাট্‌টা ছাড়াও আরও বেশ ক’টা সরু লোহার খাট দেখে মনটা বেশ দমে গেল তার। ভাবনাটা অজান্তেই মগজে এসে চেপে বসল, নিশ্চয় ইহ জগৎ শেষে পরজগতে চলে এসেছে সে! স্কুলে ভর্তি হওয়ার আগে বেশ ক’বছর মাদ্রাসায় পড়তে হয়েছিল তাকে, বছরুদ্দিন হুজুর বেহেশতের এমন একটা ছবির কথাই ইনিয়ে বিনিয়ে হাজার বার বর্ণনা করেছিলেন। কিন্তূ তার মত আজন্ম পাপী কেন বেহেস্তে ঠাই পাবে তার কোন কুল কিনারা করতে পারলনা গোলান্দাজ। খট করে দরজা খোলার আওয়াজ হতেই শীড়দাড়া বেয়ে এক ধরনের ঠান্ডা হাওয়া নেমে গেল, নিশ্চয় ফেরেশতাদের কেউ একজন আসছেন! ফেরেশতার সাথে প্রথম সাক্ষাতের ছূরাটা মনে করার চেষ্টা করল সে। গায়ে চিমটি কাটল গোলান্দাজ, স্বপ্ন দেখছে না ত? মউতি ফেরেস্তার আগে হুরপরীর দেখা মিলবে এমন তথ্য বছরুদ্দিন কেন ওলামা লীগ প্রধানের বয়ানে ছিল এমনটা মনে করতে পারলনা সে। অতি সংক্ষিপ্ত সাদা পোশাক, কোরবানী ছুড়ির মত ধারালো শরীর আর গায়ে গতরে বংগোপসাগরের ঢেউ তুলে কেউ একজন নিঃশব্দে এগিয়ে এল গোলান্দাজের বিছানার দিকে। হূৎপিন্ডের দাপাদাপিটা কিছুতেই নিয়ন্ত্রন করতে পারলনা সে, রুমের প্রচন্ড ঠান্ডায়ও ঘাঁমতে শুরু করল গোলান্দাজ।

– শুভ সকাল মিঃ বেপারী, ভিল্লাপাল্লাই রিসার্চ & প্রটেকশন সেন্টারে আপনাকে স্বাগত জানাচ্ছি, আমি রত্মাবাঈ ভিল্লাপাল্লাই। এ মুহুর্তে আপনি যা ভাবছেন তা সত্য নয়, আপনি ইহ জগতেই আছেন এবং আমিও হুরপরী নই।

কয়েক সেকেন্ড কথা ফুটলনা গোলান্দাজের মুখে, একসাথে এতগুলো বিস্ময় সামলানোর মত শক্তি শরীরে অবশিষ্ট ছিলনা তার। ‘আমি কোথায় মিস ভিল্লাপাল্লাই?‘ – বিড়বিড় করে জিজ্ঞেষ করল।

– এ নিয়ে এখন আর কোন কথা নয়। চাইলে বিছানা ছাড়তে পারেন, আপনি এখন পুরোপুরি এন্টিডোট মুক্ত। লাঞ্চের পর কনফারেনস্‌ রুমে আসবেন, আপনার সব প্রশ্নের উত্তর তৈরী থাকবে। ও হ্যাঁ, হলরুমে পরিচিত অনেকের দেখা পাবেন, চাইলে এখনই যেতে পারেন ওখানটায়।

হাই হীল জুতার কট কট আওয়াজ আর নিতম্বে এলোমেলো ঢেউ তুলে যে পথে এসেছিল সে পথেই মিলিয়ে গেল সফেদ সুন্দরী। মুগদ্ব চোখে অনেকক্ষন তাকিয়ে রইল গোলান্দাজ।

’রত্মাবাঈ ভিল্লাপাল্লাই!‘, চোয়ালটা শক্ত করে লোভাতুর কণ্ঠে উচ্চারন করল গোলান্দাজ। হেড অফিসে ফোন করলেই সব খবর বেরিয়ে আসবে ভাবতেই চক চক করে উঠল চোখ মুখ। এদিক ওদিক ফোনের সন্ধান করল সে, না পেয়ে হতাশ হল এবং এমন একটা সফিসটেকেটেড জায়গায় ফোন না থাকায় ক্ষুদ্ব হল মনে মনে। বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়াল সে, পরনের কাপড়টা ঠিক করে বেরিয়ে পরল হলরুমের সন্ধানে।

ওসমান গনির দেখা মিলল কড়িডোরে, তিনিও হলরুমের দিকে যাচ্ছেন একই উদ্দেশ্যে। বনখেকো ওসমান গনি এখানে কি উদ্দেশ্যে তার কোন সূত্র আবিস্কার করতে ব্যর্থ হল গোলান্দাজ। দলীয় সহনেত্রী মাজেদা চৌধুরীর পেট ও পকেট ভারী করতে গিয়ে বেচারাকে জেল হাজত পর্য্যন্ত হজম করতে হয়েছে, অথচ বেগম চৌধূরী এবং তার ছেলে আদাব চৌধূরী গায়ে গতরে বাতাস লাগিয়ে দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে, ভাবতেই ওসমান গনির প্রতি একধরনের বোবা সহানুভূতি জন্মাল গোলান্দাজের মনে। হলরুমে ঢুকে বাকিদের দেখে সব চিন্তা নিমিষে দূর হয়ে গেল তার, পুরানো ইয়ার দোস্তদের দেখে উচ্ছাসে ভেসে গেল সে। সোলায়মান এল রহমান, চট্রগ্রামের নুরুজ্জামান ডাবু, ঢাকার ডাঃ এবিএইচ মোবাল, চট্টগ্রামের মেয়র কলিমউদ্দিন, ফেনীর আইনাল হাজারী, নারায়ণগঞ্জের তামিম ওসমান সহ পরচিত অপরিচিত অনেক মূখ দেখে নিজকে সহসাই আবিস্কার করে ফেল্‌ল গোলান্দাজ। বাকীদের খুব একটা উচ্ছা্সিত না দেখে একটু দমে গেল সে। কোথায় যেন কি একটা গোলমাল চলছে, চিন্তাটা ভাবিয়ে তুল্‌ল তাকে।

’আরে কলিমউদ্দিন ভাই যে, আছেন কিমুন?’- পার্টিসূরে প্রথম প্রশ্নটা ছূড়ে দিল মেয়রের দিকে। ’আর কইয়েন্‌না আন্দাজ ভাই, চাঁটাগাইয়্যা এমপিগো লইয়্যা বহুত মুসিবতে আছি, কথায় কথায় ঝামেলা পাকাতে ওস্তাদ হয়ে গেছে হারামীর বাচ্চারা, তাছাড়া টিভি চ্যানেলটা চালু রাখার মূলধন যোগাতে গিয়ে ছ্যাড়াব্যাড়া অবস্থা’- গোস্বা মূখে জবাব দিল মেয়র কলিমউদ্দিন। মনে মনে প্রমাদ গুনল গোলান্দাজ, দুই মাস আগে সিটি কর্পোরেশনের টেন্ডারে নগদ ১৩ লাখ টাকা ঘুষ দিতে হয়েছে মেয়রকে। ‘শালা শিং মাছের মত পিছলা মিথ্যুক‘ – মনে মনে ভাবল গোলান্দাজ। ’ভাইব্যেন্‌না বেয়াই সাব, সব সমস্যা দূর হইয়া যাইব ইনশাল্লাহ্‌’, তোতা পাখীর মত মুখস্ত বুলি আউড়ে গেল সে। সোলায়মান এল রহমান এগিয়ে এল হাত বাড়িয়ে, ‘আন্দাজী ভাই, হাউ ডু ইউ ডু?। একে একে সবার সাথে কুশল বিনময় করে হাপিয়ে উঠল গোলান্দাজ। ক্লান্তিতে বসে পরল পাশের সোফাটায়।

রত্মাবাঈ ভিল্লাপাল্লাইকে এগিয়ে আসতে দেখে ফিসফাস সহসাই থেমে গেল। ভেতরে ভেতরে সবাইকে কেমন উত্তেজিত মনে হল।

– জেন্টেলম্যান, আরাম করে বসুন, কোম্পানীর সিইও জনাব রামগোপাল ভিল্লাপাল্লাই কথা বলবেন আপনাদের সাথে ।

– আমাদের আটকে রাখা হয়েছে কেন? ষড়যন্ত্র করে বংগবন্ধুর স্বপ্নকে ধূলিস্যাৎ করতে পারবেনা স্বাধীনতা বিরোধীরা, আমরা আবারও রাজপথে ফিরে যাব, আন্দোলনে অচল করে সমগ্র দেশ‘, – রাগে ফেটে পরল নারায়ণগঞ্জের তামিম ওসমান। বনেদী ওসমান পরিবারের এই সদস্যকে ভীষন ভয় পায় গোলান্দাজ, টাকার দাবীতে কথায় কথায় পিস্তল ধরতে দ্বিধা করেনা রক্ত গরম এই নেতা। এক বছরও হয়নি দল ক্ষমতা ফিরে পেয়েছে অথচ ইতিমধ্যে ওসমান পরিবারকে দেড় কোটি টাকা চাঁদা দিতে হয়েছে গোলান্দাজ এন্ড এসোসিয়েট্স্‌কে, তাও আবার বিদেশী ব্যাংকে। কথাটা মনে হতে মুচকি হাসল গোলান্দাজ, নেতা নামের এই জংগীকে হাজার বছর আটকে রাখলেও তার বলার কিছু থাকবেনা! ওসমান গনী এবং মেয়র কলিমউদ্দিনকে দেখা গেল কানে কানে কি যেন ফয়সালা করতে। ’নিশ্চয় নতুন কোন চাঁদা’ – আবারও কষ্ট পেল ওসমান গনীর জন্যে।

’জেন্টেলম্যান, আপনাদের একটা জিনিষ মনে করিয়ে দিতে চাই, এটা ২০৫৯ সাল, আপনাদের ট্রাডিশনাল রাজনীতি এবং তার নেতা নেত্রীর মৃত্যু হয়েছে অনেক আগে, রক্ত গরম করে লাভ নেই, বরং ঠান্ডা হয়ে বসুন এবং উত্তরের জন্যে অপেক্ষায় করুন ভিল্লাপাল্লাইজীর।’ রত্নাবাঈয়ের মিষ্টি আওয়াজে পীন পতন নীরবতা নেমে এল হলরুমে। বিস্ময়ে থ হয়ে গেল গোলান্দাজ, ছানাবড়া চোখ দু’টো কোটারা হতে বেরিয়ে আসতে চাইল তার বিনা নোটিশে! মনে হল জ্ঞান হারাচ্ছে সে।


২০৫৯ সাল! জ্ঞান না হারালেও সালটা ভো ভো করতে থাকল গোলান্দাজের মগজে। এমনটা কি করে সম্ভব কিছুতেই মেলাতে পারলনা সে। গতকালই অনেক নেতার মাসিক মাসোহারা বাসায় পৌঁছে দিয়ে এল, অথচ এক রাতের মধ্যেই ৫০ বছর হাওয়া! কোথাও কোন ঘাপলা হচ্ছে, হয়ত বিএনপির ষড়যন্ত্র, ভাবল গোলান্দাজ। টাকার কথাটা মনে হতে ভেতরটা হায় হায় করে উঠল তার, দেশী বিদেশী ব্যাংক মিলিয়ে ৩২০ কোটি! এত বছর পর ব্যাংক কি ফিরিয়ে দেবে তার যক্ষের ধন? ভাবতেই ঘামতে শুরু করল সে। স্ত্রী জেরিন আর তার আগের স্বামীর দুই সন্তান আবুল হাবুলদের কথা মনে করে কেন জানি এতটুকু দুঃখ বোধ হলনা গোলান্দাজের, টাকা পাগল এই তিন আদম তার জীবনে বিভীষিকা বৈ অন্য কিছু আনতে পারেনি। মনে মনে হিসাব কষতে শুরু করল গোলান্দাজ, নতুন করে জীবন শুরু করবে সে।

রত্মাবাঈ ভিল্লাপাল্লাইকে দেখে রক্তের দাপাদাপিটা আরও বেড়ে গেল। এত সংক্ষিপ্ত পোশাক আর এতটা হাই হীলের জুতা পরা মহিলা আগে কখনো দেখেছে বলে মনে করতে পারলনা সে। থ হয়ে তাকিয়ে রইল তার দিকে।

– ভদ্রমহোদয়গন, এ যাত্রায় কনফারেনস্‌ রুমে যেতে হবে আমাদের, ডক্টর রামগোপাল ভিল্লাপাল্লাই অপেক্ষা করছেন সেখানটায়। আওয়াজ তো নয় যেন সেতারের মূর্ছনা, গোলান্দাজের কাছে এমনটাই মনে হল রত্মাবাঈয়ের গলা। একে অপরের দিকে তাকাল, একটা শব্দও বের হলনা কারও গলা দিয়ে। বোবার মত রত্মাবাঈয়ের পিছু নিল সবাই।

৫ ফুট ২ ইঞ্চি উচ্চতাওয়ালা টেকো মাথার ডঃ রামগোপালকে দেখে এতটুকু ইমপ্রেশড্‌ হলনা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বাঘা নেতাদের কেউ। গোলান্দাজের বুঝতে অসূবিধা হলনা এ নিশ্চয় আর্ন্তজাতিক স্ক্যাম। মৃদু হেসে সবাইকে বসার আমন্ত্রন জানাল ডঃ রামগোপাল।

– জেন্টেলম্যান, আমি রামগোপাল ভিল্লাপাল্লাই, ভিল্লাপাল্লাই রিসার্চ & প্রটেকশন সেন্টারের প্রেসিডেন্ট এন্ড সিইও। আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি আমাদের প্রতিষ্ঠানে। আমি জানি আপনাদের সবার মনে হাজারও প্রশ্ন, কিন্তূ সবগুলোর উত্তরের জন্যে আমাদের হাতে যথেষ্ট সময় নেই, তাই সবার জন্যে জেনারেল ব্রীফিং দিচ্ছি। আশাকরি মোটামুটি সব প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন। একটু বিরতি নিয়ে যেই শুরু করতে যাবেন অমনি চীৎকার করে উঠলেন চট্টগ্রামের মেয়র কলিমউদ্দিন।

– ’কোন অধিকার বলে স্বাধীনতার সূর্য্য সেনাদের এভাবে আটকে রেখেছেন জনাব বিল্লাপ্লিলাই না শুয়রপিল্লাই’? রাগে কথা বলতে অসূবিধা হল মেয়রের। ‘তত্ত্বাবধায়ক নামক ষড়যন্ত্রকারীদের পক্ষেও সম্ভব হয়নি আমাদের আটকে রাখার, বিদেশী হয়ে আপনারা এমন সাহষ কোত্থেকে পেলেন’? ক্ষোভে ফেটে পরলেন কলিমউদ্দিন।

– ’মহাশয়গন, আপনাদের রাগ আমরা বুঝতে পারি, নিজ নিজ ভাগ্যলিপির সবটুকু জানতে পারলে হয়ত কমে আসবে আপনাদের ক্ষোভ। আমি যা বলতে যাচ্ছি তা হজম করার শক্তি কার কতটুকু অবিশিষ্ট থাকবে তার উপর নির্ভর করবে আপনাদের ভবিষৎ। সুতরাং উচ্চবাচ্য না করে ধৈর্য্য ধরে শুনে যান আমার কথা।’ নড়েচড়ে বসলেন ডঃ রামগোপাল। ‘যে রাজনীতি নিয়ে আপনাদের এত হম্ভিতম্ভি তা আজ হতে ৪৬ বছর আগেই কবর রচিত হয়েছে। ২০১৩ সালে আপনাদের দল এবং নেত্রী ক্ষমতা হারায় এএনপির কাছে। কিন্তূ আপনারা কেউ মেনে নিতে পারেন্‌নি এ পরাজয়, ফলশ্রুতিতে দেশে শুরু হয় সীমাহীন নৈরাজ্য। আপনাদের প্রতিপক্ষও ছেড়ে কথা বলার দল ছিলনা, বস্তূত ক্ষমতা দখলের জন্যে বাংলাদেশে শুরু হয় গৃহযুদ্ব। এ যুদ্ব চলে ৫ বছর। এ ফাঁকে পৃথিবীতে ঘটে যায় অনেক ঘটনা যা বাংলাদেশের জন্যে বয়ে আনে সীমাহীন ধ্বংস। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে তেলের ভান্ডার ফুরিয়ে যায় বিনা নোটিশে, এবং সে সব দেশ হতে বাংলাদেশীদের ঝেটিয়ে বিদায় করা হয় অনেকটা পশুর মত। শিল্পোন্নত দেশগুলো ইসলামী জঙ্গীবাদের সাথে যুদ্বে জড়িয়ে যায় পৃথিবীর দেশে দেশে। দলীয় স্বার্থে তৎকালীন সরকার বাংলাদেশকে জংগীদের অভয়ারন্যে পরিনত করে, যার ফলশ্রুতিতে ইউরোপ আমেরিকা সহ পৃথিবীর সব দেশ হতে বাংলাদেশীদের ফেরৎ পাঠানো হয় স্বল্প নোটিশে।

দেশটাকে একঘরে বানিয়ে পরিত্যাক্ত রাষ্ট্র হিসাবে ঘোষনা দিতে বাধ্যহয় জাতিসংঘ। বন্ধ হয়ে যায় বহিঃবিশ্বের সাথে বাংলাদেশের সব ধরনের যোগাযোগ। প্রথম ধাক্কাটা আসে জ্বালানি এবং খাদ্য ভান্ডারে। ইতিমধ্যে ফুরিয়া আসে দেশটার মজুদকৃত প্রাকৃতিক সম্পদ গ্যাস। জ্বালানীর জন্যে নির্বিচারে ব্যবহার শুরু হয় গাছপালার, মানুষ হুমড়ি খেয়ে নিধন শুরু করে দেয় বন জংগল। দেশে এ মুহুর্তে গাছপালা বলতে কিছু অবশিষ্ট নেই, আপনাদের সুন্দর বন এখন ইতিহাস মাত্র। ভদ্রমহোদয়গন, আপনাদের সদয় অবগতির জন্যে জানাচ্ছি এ মুহুর্তে রাস্তার তাপমাত্রা ৫৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস, যা এ দেশের গড় তাপমাত্রার চাইতে ৫ ডিগ্রী বেশী। হয়ত শুনে হতাশ হবেন বাংলাদেশের লোক সংখা এখন ৩৩ কোটি। ভৌগলিক অর্থে বাংলাদেশ একটা দেশ হলেও রাজনৈতিক ভাবে দেশটা এখন একাধিক অঞ্চলে বিভক্ত। এই যেমন আমারা এখন বসে আছি ‘এস‘ অঞ্চলে যার হেড কোয়ার্টার অতীতের ধানমন্ডি। গোটা গুলসান এলাকা এখন ‘জেড‘ অঞ্চলের আওতাধীন যার বর্তমান নাম ককোসান। এবার আসি আপনাদের ভাগ্য নিয়ে।

আপনাদের নেত্রীই আপনাদের পূনঃজন্মের ব্যবস্থা করে গেছেন। এন্টি এইজং সিরোম এবং ডিএনএ ক্লোনিং প্রযুক্তির সহায়তায় আপনাদের ফ্রোজেন করে রাখা হয়েছে গত তিন দশক ধরে। এ মুহুর্তে কিছু রক্ষনাবেক্ষন প্রয়োজন, তাই এন্টিডোট দিয়ে জীবন্ত করা হয়েছে আপনাদের। দু’টো পছন্দ আছে আপনাদের সামনে; হয় আজ হতে মৃত্যু পর্য্যন্ত বাকি জীবন কাটিয়ে দেবেন ৩৩ কোটি মানুষের সাথে, অথবা নতুন করে হীমাগারে চলে যাবেন নেত্রীর সাথে পূনঃজন্মের সম্ভাবনা নিয়ে। বলে রাখা ভাল, আপনাদের নেত্রীকেও একই কায়দায় রাজস্থানে মরুভূমির নীচে কোন এক ল্যাবে লালন পালন করা হচ্ছে। নেত্রী বাংলাদেশকে বিশ্বাষ করতে পারেন্‌নি তাই এই বিদেশী ব্যবস্থা। আপনারা প্রশ্ন করতে পারেন এত নেতা থাকতে নেত্রী আপনাদের কেন পছন্দ করলেন? এর উত্তর খুবই সহজ, নেত্রীর দৃষ্টিতে আপনারাই ছিলেন বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ লুটেরা। আপনাদের ব্যাংক ব্যালেন্স যা ছিল তা সবই এখন নেত্রীর দখলে যা ভোগ করছে তার বংশধরেরা। হয়ত শুনে আনন্দিত হবেন যুক্তরাষ্ট্রের সব চাইতে উচু সিয়ার্স দালানের নাম এখন অভেয়মায়ের দালান, যা আপনার নেত্রীর পুত্রবধূর নামে নামকরন করা হয়েছে। এর মালিকও আপনার নেত্রী। আগামী ৩০ বছর পর বাংলাদেশে ফিরে আসার খায়েশ প্রকাশ করে উইল করে গেছেন আপনাদের মহান নেত্রী। সে উইলে আপনাদের কথাও উল্লেখ আছে, কারণ আরেক জনমে লুটপাটের জন্যে আপনাদের মত বিশ্বস্ত লুটেরাদের প্রয়োজন হবে নেত্রীর।’

একসাথে এতগুলো কথা বলে হাপিয়ে উঠলেন ডঃ ভিল্লাপাল্লাই। সবশেষে একটা খবর জানিয়ে বিদায় নিতে চাই; শুধু আপনাদের নেত্রীই নন, আপনাদের প্রতিপক্ষ নেত্রীকেও একই কায়দায় লালন করা হচ্ছে করাচীর কোন এক ল্যাবে। ও হ্যা, মালয়েশিয়ার টুইন টাওয়ারের নাম এখন রহমান টাওয়ার, এবং এই নামকরন হয়েছে নেত্রীর স্বামী এবং সন্তানদের শেষ নামে।

গোলান্দাজের মনে হল এ মুহুর্তে মহাশুন্যের কোন এক কক্ষপথে ভাসছে সে। ৩২০ কোটির সবটাই নেত্রীর পকেটে, চুরির সূযোগ করে দিয়ে তাকে ব্যবহার করা হয়েছে মাত্র! স্তব্দ হয়ে হিসাব কসতে শুরু করল সে। আগামীতে নেত্রীর সাথেই ফিরে আসার সিদ্বান্ত নিল মনে মনে, সাথে বেশ কিছু হিসাব ফয়সালা করার তাগাদা আনুভব করল গোলান্দাজ।

 

লিখেছেন : ওয়াচডগ