গৌরনদী থানার চৌকস ওসির কর্মের ফল

পুলিশ কর্মকর্তার কর্মদক্ষতা। বিভিন্ন সময় সাহসিকতার প্রমান রাখায় অল্পদিনেই পুলিশের সাবইন্সপেক্টর (এস.আই) থেকে র‌্যাবের এস.আই, ডিবি ইন্সপেক্টর সর্বশেষ থানার ওসি হিসেবে গুরু দায়িত্ব পরে তার কাঁধে। এগুলো যেন তার কর্মেরই ফল। বর্তমানে এ চৌকস পুলিশ কর্মকর্তা সর্বহারা, হিজবুত তওহীদ অধুষ্যিত ও এককালের মাদকের স্বর্গরাজ্য বলেখ্যাত বরিশালের গৌরনদী থানার ওসি হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।

 

হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর উপজেলার জয়পুর গ্রামের আব্দুল আজিজের ২ পুত্র ও ৪ কন্যার মধ্যে নুরুল ইসলাম হচ্ছেন সবার বড়। দেশ মাতৃকার টানে সন্ত্রাস মুক্ত দেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে ১৯৯৪ সালে পুলিশ বাহিনীতে যোগদান করেন। ’৯৫ সালে নারায়নগঞ্জ থানায় এস.আই হিসেবে যোগদানের মধ্য দিয়েই কর্মস্থলে তার পথচলা। নুরুল ইসলাম ওই থানায় কর্মরত অবস্থায় ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশ সরকার বহুল আলোচিত র্শীর্ষ সন্ত্রাসী গলাকাটা কাসেমকে ধরিয়ে দেয়ার জন্য ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার ঘোষনা করেন। তৎকালীন সময়ে তরুন যুবক এস.আই নুরুল ইসলাম গোপন সংবাদের ভিত্তিতে নারায়নগঞ্জ থানাধীন এলাকায় আত্মগোপনে থাকা র্শীর্ষ সন্ত্রাসী গলাকাটা কাসেমকে গ্রেফতারের জন্য অভিযান চালায়। সন্ত্রাসীদের সাথে পুলিশের বন্দুক যুদ্ধ চলাকালীন সময় এস.আই নুরুল ইসলাম র্শীর্ষ সন্ত্রাসী গলাকাটা কাসেমকে অক্ষত অবস্থায় গ্রেফতার করেন। তার এ দুরন্ত সাহসিকতায় ১৯৯৯ সালে তার সাহসিকতার স্বীকৃতি স্বরূপ দেয়া হয় রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক (পিপিএম)। চৌকস এ পুলিশ অফিসার ১৯৯৯ সালে সন্ত্রাসের জনপদ বলেখ্যাত বরিশালের গৌরনদী থানার এস.আই হিসেবে যোগদান করেন। তৎকালীন সময় এস.আই নুরুল ইসলাম গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গৌরনদী উপজেলার সরিকল এলাকা থেকে গ্রেফতার করেন দেশের ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী এরশাদ সিকদারের বড়ভাই আশ্রাব সিকদার ওরফে বড় মিয়াকে। বিভিন্ন সময় তার দুরন্ত সাহসিকতায় একাধিকবার তিনি সরকারি ভাবে নগদ অর্থ ও সম্মাননা লাভ করেন। এক পর্যায়ে চৌকস এ পুলিশ কর্মকর্তা র‌্যাব-১২’এর এস.আই ও ২০০৯ সালের জানুয়ারি মাসে সিলেট মেট্রোপলিটনের ডিবি ইন্সপেক্টর হিসেবে সততা ও নিষ্ঠার সাথে তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করেন। সর্বস্তরে সুনামের সহিত সঠিক দায়িত্ব পালন করায় অল্পদিনেই পদন্নতি পেয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি হিসেবে মোঃ নুরুল ইসলাম গত ২৬ এপ্রিল গৌরনদী থানায় যোগদান করেন।

বরিশালের রক্তঝড়া উত্তর জনপদের চরমপন্থী সর্বহারা, জঙ্গী হিজবুত তওহীদ অধুষ্যিত ও মাদকের স্বর্গরাজ্য বলেখ্যাত গৌরনদী থানায় নুরুল ইসলাম ওসি হিসেবে যোগদান করার পর পরই  তিনি উপজেলার প্রতিটি এলাকায় শান্তি সভা করেন। একে একে তিনি রোমিও পাকারাও, মাদক বিরোধী অভিযান শুরু করে সফলতা অর্জন করেন। সন্ত্রাসী গ্রেফতারে তিনি পরিচালনা করেন সাড়াষি অভিযান। আর এ অভিযানের ফলেই ইতোমধ্যে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয় একাধিক সন্ত্রাসী, মাদক বিক্রেতা ও সেবনকারী। অন্যন্যরা আত্মগোপন করে এলাকা ত্যাগ করেন। গৌরনদী থানায় পূর্বের ওসিদের আমলে প্রতিমাসে বিভিন্ন অপরাধে গড়ে প্রায় অর্ধশত মামলা রেকর্ড করা হতো। সেখানে বর্তমানে গড়ে প্রতি মাসে ২০ থেকে ২৫ টি মামলার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখা হয়। তিনি (ওসি) নিজেই যেকোন অভিযোগ পেলে মাঠ পর্যায়ে গিয়ে উভয় পক্ষের সাথে খোলামেলা আলাপ আলোচনা করে মামলা না করে স্থানীয় ভাবে নিস্ফতি করার চেষ্ঠা করেন।

যে কারনেই মামলার সংখ্যা ক্রমেই কমতে শুরু করেছে। তার সু-নিপুন দিকর্নিদেশনা ও কঠোর অভিযানে স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে এ বছরই কেবল কোনপ্রকার অপ্রতিকর ঘটনা ছাড়াই উদযাপিত হলো মুসলমান ধর্মের সর্ব বৃহৎ উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতর ও সনাতন ধর্মের সর্ব বৃহৎ উৎস শারদীয় দূর্গা পূজা। ধার্মিক এ পুলিশ কর্মকর্তা সততা ও নিষ্ঠার সাথে চলতে গিয়ে এবং থানার সকল পুলিশ অফিসারদের দিকনির্দেশনা দিতে গিয়ে পড়েন বিপাকে। যার কারনে গত ৬ মাসে ৮ জন পুলিশ অফিসার স্ব-ইচ্ছায় অন্যত্র বদলি হয়ে যান। স্ত্রী সুফিয়া বিলকিস পান্না, বড়পুত্র সাফায়েতুল ইসলাম সুপ্রিয় পিলখানা রাইফেলস্ স্কুল এন্ড কলেজের তৃতীয় শ্রেনীর মেধাবী ছাত্র, কন্যা একই বিদ্যালয়ের ওয়ানের ছাত্রী জান্নাতুল নুর শান্তা ও আড়াই বছরের শিশু কন্যা তাসমিয়া নুর সাদিয়াকে নিয়েই নুরুল ইসলামের সুখের সংসার। নুরুল ইসলাম বলেন, যতদিন আমার ওপর সরকারের অর্পিত দায়িত্ব থাকবে ততদিন নিজের জীবন বাঁজি রেখে হলেও নিষ্ঠার সাথে সমাজের অবহেলিতদের সাথে নিয়ে সন্ত্রাস, জঙ্গী ও মাদক মুক্ত দেশ গড়ার চেষ্ঠা করে যাব।