সাত শহীদের গনকবরের খবর অনেকেই জানেন না

আঘাতে প্রান হারিয়েছিল একই বাড়ির ৭ ব্যক্তি  তাদের একইস্থানে গনকবর দেয়া হয়। ওই শহীদ পরিবারের লোকজনদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, দীর্ঘদিনেও তারা সরকারের তরফ থেকে পাননি কোন আর্থিক সাহায্য। এমনকি এসব অসচ্চল পরিবারের খবর নিতে ও কেউ এগিয়ে আসেনি।

প্রত্যক্ষদর্শী শহীদ পরিবারের সদস্য বিপুল হালদার (৪৫) এর সাথে আলাপ করে জানা যায়, সেই ভয়াল দিনের কথা। এ কাহিনী ব্যক্ত করতে গিয়ে তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন, আঁতকে ওঠেন ভয়ে। স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন সময় তার বয়স ছিল মাত্র ১৩ বছর। তার চোখের সামনেই একই সাথে ব্রাশফায়ার করে নির্মমভাবে হত্যা করা হয় তার পিতা সামূয়েল হালদার, জেঠা হরলাল হালদার, নরেন্দ্র নাথ হালদার, জেঠাতো ভাই টমাস হালদার, আগাষ্টিন হালদার, বিমল ও দানিয়েল হালদারকে। ওই সময় গুলি বিদ্ধ হয়েও প্রানে বেঁচে যান বিপুলের বড় ভাই মুকুল হালদার ও জেঠাতো ভাই সুকুমার হালদার। বছর দু’য়েক আগে সুকুমার হালদার মারা যান। পঙ্গু অবস্থায় আজও বেঁচে আছেন মুকুল হালদার। বিপুল হালদার আরো জানান, তার জেঠাতো ভাই ফ্যান্সিস হালদার মুক্তিবাহিনীতে যোগ দেয়ার পর স্থানীয় রাজাকাররা সরকারি গৌরনদী কলেজ ক্যাম্পে থাকা পাকহানাদারদের এখবর জানালে তারা ক্ষুব্দ হয়ে ফ্যান্সিসকে খোঁজার জন্য ওই খ্রীষ্টান পল্লিতে একে একে ৯ বার হানা দেয়।

সর্বশেষ ’৭১ সালের ২রা আষাঢ় দু’টি ¯প্রীট বোর্ড যোগে দুপুর ১ টার দিকে হানাদাররা ওই বাড়িতে হানা দেয়। তখন বাড়ির লোকজন ভয়ে দিক বিদিক ছোটাছুটি শুরু করেন। এ সময় ওই বাড়ির সামূয়েল হালদার, হরলাল হালদার, নরেন্দ্র নাথ হালদার, টমাস, আগাষ্টিন, বিমল, দানিয়েল হালদার, সুকুমার ও মুকুল হালদারকে একত্রিত করে লাইনে দাঁড় করিয়ে ব্রাশ ফায়ার করে । সঙ্গে সঙ্গে তারা মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। ভাগ্যক্রমে গুলি বিদ্ধ হয়ে বেঁচে যান সুকুমার হালদার ও মুকুল। এ হত্যা যজ্ঞের খবর এলাকায় ছড়িয়ে পরলে জনমনে আতংক বিরাজ করে। কয়েক ঘন্টার মধ্যেই এলাকা জনশূন্য হয়ে পরে। বাড়ির আঙ্গিনায় রক্তাক্ত অবস্থায় ৭ শহীদদের লাশ পরে থাকে দুই দিন যাবত। পরবর্তীতে বাড়ির মহিলা,শিশু ও  কিশোররা মিলে বাড়ির পার্শ্বে  একটি কুপ খনন করে লাশ গুলোকে একত্রে মাটি চাপা দেয়। যুদ্ধ শেষ হওয়ার দীর্ঘদিন পরেও ওই ৭ শহীদের গন কবর সংরক্ষনের জন্য সরকারি ভাবে কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। এমনকি ওই পরিবারের সদস্যরা আজও ‘শহীদ পরিবারের মর্যদা পাননি”।

বছর দু’য়েক আগে একান্ত ব্যক্তিগত উদ্যোগে ওই বাড়ির উত্তরসূরিরা ৭ শহীদের স্মৃতি রক্ষার্থে গন কবরের ওপর স্মৃতি ফলক তৈরি করেন। প্রতি বছরের ২ রা আষাঢ় শহীদদের স্মরনে এখানে প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয়। খবর নিয়ে জানা গেছে, মুক্তিযোদ্ধা ফ্যান্সিস হালদার ৪ বছর আগে মারা যান কিন্তু রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ছাড়াই তাকে সমাহিত করা হয়। শহীদ সামূয়েল হালদারের সহধর্মিনী মারিয়া হালদার (৫৫) আজও বেঁচে আছেন। স্বামীকে হারিয়েও দেশটা যে স্বাধীন হয়েছে এজন্য তিনি গর্বিত। তবে স্বাধীনতা যুদ্ধের ৩৫ বছর পার হয়ে গেলেও আজ পর্যন্ত শহীদের পরিবারদের খোঁজ খবর কেউ না নেয়ায় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। পাকিস্তানী ঘাতকদের তৎকালীন সময়ের সহযোগী আলবদর ও রাজাকাররা সম্প্রতি সময়ে যে স্বাধীন রাষ্ট্র পরিচালনা করছেন এজন্য তিনি কষ্ট পান।