এক ঢিলে দুই পাখি মারতে চান বরিশালের এমপি মনি !

কিন্তু ঘটনাটি বরিশালে এখন টক অফ দ্য টাউন। পুলিশের পক্ষ থেকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলা হলেও এমপি মনিরের পক্ষে বরিশাল কোতোয়ালি থানায় হত্যা চেষ্টার অভিযোগ এনে একটি মামলা করা হয়েছে। মামলায় আটক যুবককে এজাহারভুক্ত আসামি করা হয়েছে। এছাড়া অজ্ঞাত অভিযুক্ত আসামির তালিকায় রয়েছে আরো চার-পাঁচজন। ধারণা করা হচ্ছে, এমপি মনি এক ঢিলে দুই পাখি মারতে চাচ্ছেন। এ নিয়ে তার নির্বাচনী এলাকায় রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের শিবিরে আতঙ্কও ছড়িয়ে পড়েছে।

Munirul Islam barisal MP

জানা গেছে, পারিবারিক বিরোধ থেকে শ্বশুর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে প্রতিবেশী এক পরিবারের ঝগড়া, হাতাহাতি ও গভীর রাতে এমপি মনির ওপর আক্রমণের ঘটনাটি নানা রহস্য ও কৌতূহলের সৃষ্টি করেছে। কারণ ঘটনার পরই সংসদ সদস্য মনিরুল ইসলাম মনি তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ছুরিকাঘাত ও এ ঘটনার সঙ্গে তার নির্বাচনী এলাকার উপজেলা চেয়ারম্যান জড়িত বলে মিডিয়ার কাছে অভিযোগ করলে রহস্য দেখা দেয়। কারন বৃহস্পতিবার রাত ২টায় বরিশাল নগরীর হাসপাতাল সড়কে ঘটনার পর সামান্য ‘আঁচড়’ লাগা এমপি মনি রাতেই স্থানীয় এক ডাক্তারের কাছ চিকিৎসা নেন। পরে তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ছুরিকাঘাত করা হয়েছে অভিযোগ করে পরদিন সকাল ৮টায় শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখানে দুপুর ২টা পর্যন্ত ভিআইপি কেবিনে শুয়ে থেকে ফিরে যান বরিশাল সার্কিট হাউসে। রাতে সার্কিট হাউসে অবস্থান করার পর গতকাল সকালে আবার ফিরে যান হাসপাতালের ভিআইপি কেবিনে। এমপি আহত হওয়ার সংবাদ পেয়ে শুক্রবার সকালে নির্বাচনী এলাকার অনেকে এমপিকে দেখতে সার্কিট হাউসে গেলেও তাকে সেখানে পাননি বলে জানা গেছে। সংসদ সদস্য মনিরুল ইসলাম মনি জানান, ডাক্তার বলেছেন তিনি আশঙ্কামুক্ত। তবে তিনি হাসপাতাল ছাড়েননি। বৃহস্পতিবার হাসপাতালে বিদ্যুৎ না থাকায় তিনি সার্কিট হাউসে গিয়েছিলেন। এলাকায় একজনের মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে সেখানেও গিয়েছিলেন। আবার ফিরে এসেছেন হাসপাতালে।

এদিকে সামান্য ‘কাটা আঁচড়’ নিয়ে হাসপাতালে শুয়ে থাকা এবং হত্যা চেষ্টার অভিযোগ এনে মামলা করায় বিষয়টি এখন অন্যদিকে প্রবাহিত হচ্ছে বলে চারদিকে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে। তার নির্বাচনী এলাকা বানারীপাড়া-উজিরপুরে এ নিয়ে নিজ দল ও প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক শিবিরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এমপি মনি এ ঘটনায় এখন ‘এক ঢিলে দুই পাখি’ মারার পথে এগিয়ে যাচ্ছেন। তিনি এ ঘটনাকে পুঁজি করে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ এবং শ্বশুরবাড়ির শত্র“ রিয়াজ পরিবারকে ঘায়েল করতে চাইছেন। এমপি মনিরুল ইসলাম মনি অভিযোগ করে বলেন, তাকে হামলার পেছনে বানারীপাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম ফারুকের হাত থাকতে পারে। আবার তার ওপর হামলার পেছনে যুদ্ধাপরাধীসহ বিএনপি-জামায়াত জোট জড়িত থাকতে পারে বলেও সন্দেহ প্রকাশ করেন। বানারীপাড়া উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মাওলাদ হোসেন সানাকেও তিনি সন্দেহ করেন।

এমপি মনি জানান, তার ওপর হামলাকারী যুবক রিয়াজের পরিবার ও উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম ফারুকের শ্বশুর পরিবার পরস্পর আত্মীয়। তবে উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম ফারুক এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, রিয়াজ ও তার পরিবারের কাউকে তিনি চেনেন না। তারা আত্মীয়ও নন। তা ছাড়া এমপি আত্মঘাতী কোনো ঘটনা ঘটিয়ে দলের নেতাকর্মীদের ফাঁসাতে পারেন, এমন আশঙ্কা তারা দীর্ঘদিন থেকেই করে আসছিলেন। বিভিন্ন মাধ্যম থেকেও তাদের সতর্ক করা হচ্ছিল।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এমপি মনিরুল ইসলাম মনি মহাজোটের মনোনয়নে বরিশাল-২ আসন থেকে নির্বাচিত হওয়ার পর এলাকায় একের পর এক বিতর্কিত কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়েন। নিজ দল আওয়ামীলীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে এমপি মনির দূরত্ব শুরু হয়ে যায়। দলের নেতাকর্মীদের নানাভাবে সাইজ করা, দলে কোণঠাসা করে রাখা, নিজস্ব বাহিনী দিয়ে হামলা করাসহ অনেক অভিযোগ রয়েছে এমপি মনিরের বিরুদ্ধে। নির্বাচনী এলাকা বানারীপাড়া উপজেলায় মাত্র দু-একজন ছাড়া আওয়ামীলীগ ও সহযোগী সংগঠনের কোনো নেতাকর্মী নেই এমপির সঙ্গে। সবার সঙ্গেই তার চরম বৈরিতা। উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানের সঙ্গে তার একাধিকবার অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটেছে। নির্বাচনী এলাকা উজিরপুর উপজেলায়ও একই অবস্থা। সেখানে উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি খালেক আজাদের ওপর এমপির উপস্থিতিতে হামলা চালায় এমপি মনির অনুগতরা। খালেক আজাদ এখন দলে নিষ্ক্রিয়। এমনি পরিস্থিতির শিকার উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদকও। ফলে বরিশালে সংঘটিত বিচ্ছিন্ন একটি ঘটনায় ঘায়েল হতে পারে এমপির প্রতিপক্ষরা এমন আশঙ্কা ও পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। নাম-পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে বানারীপাড়া উপজেলা ও পৌর আওয়ামীলীগের একাধিক নেতা জানান, মনি ব্যক্তিগত বিরোধকে কাজে লাগিয়ে তার বিরোধীদের সাইজ করার চেষ্টা করছেন। বিষয়টিকে ভালো চোখে দেখছেন না বরিশাল জেলা ও মহানগর আওয়ামীলীগের নেতারা। তবে তারা এ বিষয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলতে চাইছেন না।

অপরদিকে বৃহস্পতিবার রাতের ঘটনায় শুক্রবার মামলা হয়েছে বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানায়। বাদী হয়েছেন এমপির ব্যক্তিগত সহকারী রেজাউল করিম। মামলায় আটক যুবক রিয়াজসহ আরো অজ্ঞাত চার-পাঁচজনকে অভিযুক্ত করে আসামি করা হয়েছে। মামলায় এমপি মনিরুল ইসলাম মনিকে হত্যার উদ্দেশ্যে ধারালো চাকু দিয়ে আঘাত করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।-

সূত্র: দৈনিক যায়যায়দিন-২৫ সেপ্টেম্বর-২০১০।