মন্ত্রীর নামে প্রতিষ্ঠিত বিদ্যাপীঠে তীব্র আবাসন সংকট

প্রতিষ্ঠার পর থেকেই তীব্র আবাসন সংকট বিরাজ করছে। একাধিকবার কলেজের ভবন সম্প্রসারণ করা হলেও শিক্ষার্থীদের জন্য ছাত্রাবাস নির্মাণ না করায় বিপাকে পড়েছে দুরদুরান্ত থেকে আগত অসংখ্য শিক্ষার্থীরা। কলেজটি সরকারীকরণ ও আবাসন সংকট সমস্যা সমাধানে আ’লীগ সরকারের আমলেই যোগাযোগ মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের সহযোগীতা ও শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মোতাহার হোসেন চৌধুরীর প্রতিশ্র“তির বাস্তবায়ন চায় শিক্ষক-অভিবাবক-শিক্ষার্থীসহ সকলেই।


কালকিনি সৈয়দ আবুল হোসেন কলেজজানা গেছে, উপজেলার প্রাণ কেন্দ্রে অবস্থিত কালকিনি সৈয়দ আবুল হোসেন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ১৯৭২সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। যোগাযোগ মন্ত্রী সৈয়দ আবুল আবুল হোসেন প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে ১৯৯২সালে তার নিজের নামে নামকরণ করেন। উন্নয়ন বঞ্চিত উপজেলাবাসী প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই কলেজটির দিকে তাকিয়ে বারবার তাকে সমর্থণ দিয়ে যাচ্ছে। তিনিও গর্ব করেন প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে। সর্বশেষ পরপর ৪টি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন এক প্রকার বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায়ই। “পান্তা খেয়ে অনার্স পড়ি, সৈয়দ আবুল হোসেনকে সালাম করি” প্রথম দিকে শোনা গেলেও কলেজটি সরকারীকরণ ও বিভিন্ন সমস্যা সমাধান না হওয়ায় এখন আর কারো মুখে এই বুলি শোনা যায় না। বর্তমান সরকারের আমলে এই কলেজে সমস্যা সমাদধান না হলে আগামী সংসদ নির্বাচনে ব্যাপক প্রভাব পড়তে পারে। জেলা সদরে ও পার্শ্ববর্তী গৌরনদী উপজেলায় রয়েছে সরকারী কলেজ। বেতনসহ অন্যান্য ফি এই কলেজের তুলনায় অনেক গুন কম এবং সুযোগ-সুবিধাও বেশী। ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে আলাপকালে তারা জানান, ‘এ এলাকার অধিকাংশ ছাত্র-ছাত্রী গরীব পরিবারের হওয়ায় তাদের আর্থিক স্বচ্ছলতা না থাকায় অনেকের পক্ষে এতো বেতনসহ অন্যান্য ফি দেয়া কোনোমতেই সম্ভব হচ্ছে না। তাই তারা সম্ভব হলে এখানে ভর্তি না হয়ে পাশ্ববর্তী সরকারী কলেজে ভর্তি হয়ে থাকে। আর যারা দুর থেকে আসে তারা এ কলেজের সুনাম ও একাধিক বিষয়ে সম্মান-মাষ্টার্স শ্রেণী থাকার কারণে এসে থাকে’। তাদের দাবী, ‘এই সরকারের আমলেই কলেজটি সরকারীকরণ করা হোক’।


এ কলেজে বাংলা, গনিত, হিসাববিজ্ঞান, ব্যবস্থাপনা, মার্কেটিং, সমাজকল্যান, রাষ্ঠ্রবিজ্ঞান, দর্শণসহ ১৯৯৩সালে ১০টি বিষয়ে সম্মান শ্রেণী এবং একাধিক বিষয়ে মাষ্টার্স কোর্স চালু হয়েছে। এছাড়াও বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিক শাখায় ডিগ্রি পাস কোর্স ও একাদ্বশ-দ্বাদশ শ্রেণী তো আছেই। একাধিক বিষয়ে সম্মান ও মাষ্টার্ষ কোর্স চালু থাকায় প্রতি বছরই যশোর, খুলনা, মাগুরা, পটুয়াখালি, চুয়াডাঙ্গা, টাঙ্গাইল, জামালপুর, ঝিনাইদহ ও গোপালগঞ্চসহ বিভিন্ন জেলার শিক্ষার্থীরা এ কলেজে ভর্তি হয়ে থাকে। কিন্তু নানাবিধ সমস্যায় পরতে হচ্ছে এসব দুরদুরান্ত থেকে আগত শিক্ষার্থীদের। বর্তমানে ৩ হাজারেরও অধিক শিক্ষার্থী অধ্যয়ণরত আছে। উপজেলা পর্যায়ে বৃহত্তর দক্ষিণাঞ্চলের মধ্যে বৃহত্তম। ৩তলা ভবন বিশিষ্ট কলেজে কোনো ছাত্রাবাস নেই। ১ম ও ২য় তলার একাংশ এবং ৩তলার সম্পূর্ণ ছাত্রদের থাকার ব্যবস্থা করেছে কর্তৃপক্ষ। ক্লাশ কক্ষ ছাত্রাবাস হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ায় বিভিন্ন শ্রেণীর ক্লাশ নিতে শিক্ষকদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। ক্লাশকক্ষ ছাত্রাবাস হিসেবে ব্যবহার করলেও ছাত্রদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির শর্ত দিয়ে সিট ভাড়া ১৫০ টাকার স্থলে ৩০টাকা বৃদ্ধি করে ১৮০টাকায় করে। কিন্তু কোনো প্রকার সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা হয় নাই। প্রত্যেকটা কক্ষে গাদাগাদি করে ছাত্রদের থাকতে হয়, প্লাষ্টারবিহীন কক্ষ, খাওয়া-দাওয়ার জন্য কোনো পরিবেশ নাই, শতাধিক শিক্ষার্থীর জন্য একটি করে টয়লেট, টয়লেটের দূর্ঘন্ধসহ বিভিন্ন সমস্যার মধ্যে এক প্রকার মুখ বুঝে ধৈর্য ধারণ করে শিক্ষার্থীরা শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। ছাত্রীদের জন্য ছাত্রীনিবাস তৈরি করা হলেও তা রয়েছে অরক্ষিত। চারিদিকে দেয়াল নির্মাণ না করায় ছাত্রীদের চরম নিরাপত্তাহীনতায় থাকতে হচ্ছে। যোগাযোগ মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনকে উপজেলা আ’লীগ কর্তৃক সংবর্ধণা সমাবেশে শিক্ষার্থীরা ব্যানার ফেস্টুন দিয়ে কলেজটিকে সরকারীকরণ ও ছাত্রাবাস নির্মাণের দাবী জানালেও তিনি এ ব্যাপারে কোনো কথাই বলেননি। সম্প্রতি শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মোতাহের হোসেন চৌধুরী কলেজ পরিদর্শণে এলে শিক্ষক-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীরা সরকারীকরণ, ছাত্রাবাস সমস্যা, চারিদিকে দেয়াল ও মসজিদ নির্মাণসহ বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরলে তিনি দ্রুত সমস্যা সমাধানের প্রতিশ্র“তি দিয়ে যান। কিন্তু এসব সমস্যা সমাধানে আদৌ কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।


২০০৮-০৯ শিক্ষা বর্ষের সম্মান শ্রেণীর ব্যবস্থাপনা বিষয়ে যশোর থেকে এ কলেজে ভর্তি হয়েছেন কুদ্দস আলী নামের এক শিক্ষার্থী। গত দেড় বছর ঘুরেও তিনি একটি সিট পাননি। এখন কোনো রকমে ৪/৫জন সহপাঠী নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকছেন। তিনি বলেন, “শ‘শ‘ শিক্ষার্থী কলেজে সিট না পেয়ে বিভিন্ন বাসা বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকছে। এরা থাকে ভাড়ায় বাড়িতে কিন্তু খাবার খায় কলেজ হোস্টেলেই। এ ছাড়া তো আর কোনো উপায় নাই”। বরিশাল থেকে এসেছেন বেল্লাল হোসেন নামের আরেক শিক্ষার্থী। তিনি এখন হিসাববিজ্ঞান বিভাগের (সম্মান) ২০১০ইং সালের পরীক্ষার্থী। তিনি বলেন, “দীর্ঘদিন কর্তৃপক্ষের কাছে ঘুরেও একটি সিট বরাদ্ধ না পাওয়ায় এখন লজিং (গৃহ শিক্ষক) থাকতে হচ্ছে। যে আশা নিয়ে এসেছিলাম তা মনে হয় আর পূরণ হবে না। অসংখ্য শিক্ষার্থী এভাবে মানবেতর জীবন যাপন করছে”। বিভিন্ন জেলা থেকে আগত শিক্ষার্থীরা কর্তৃপক্ষের নিকটে ধরণা ধরে সিট না  পাওয়ায় শুধুমাত্র পরীক্ষায় উপস্থিত থাকে বলে শিক্ষার্থীরা জানিয়েছে।