যুবলীগ নেতা নিজামের দখল সন্ত্রাসের ঘটনায় চাঁদাবাজী মামলা

করে শাসক দলের ব্যানারে চাঁদাবাজদের দৌরাত্মের কারনে ক্রেতাকে বুঝিয়ে দিতে পারছে না। নির্ধারিত চাঁদার টাকা না দেয়ায় বিক্রিত সম্পত্তির ভবনে ভাড়াটিয়াদের ফ্রি ভাড়ায় থাকতে বলায় তারা নির্ভয়ে সেখানে থাকছে। দিশেহারা ক্রেতা-বিক্রেতা অবশেষে বৃহস্পতিবার দুপুরে বিক্রেতা ডাঃ হুমায়ুন কবির বাদী হয়ে বরিশাল আদালতে একটি চাঁদাবাজীর মামলা দায়ের করেছেন। বিকেলে ম্যাজিষ্ট্রেট মৃত্যুঞ্জয় মিস্ত্রির মামলাটি আমলে নিয়ে বরিশাল কোতোয়ালী মডেল থানার ওসিকে আগামী ২১ জুনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন। মামলায় চার জনকে আসামী করা হয়েছে। তারা হলো মৃত্যু সুখ রঞ্জনের পুত্র সুশান্ত কুমার সর্দার, অহেদ আলী মোল্লার পুত্র কাশেম মোল্লা, সুশান্ত শীলের পুত্র নিখিল সর্দার। এছাড়া মিলন নামের এক ব্যাক্তিকে আসামী করা হয়েছে। পিতা অজ্ঞাত। মামলা দায়েরের পর রাতে নিজাম- –হিরু  পৃথক পৃথকভাবে বিভিন্ন লোকজন দিয়ে দেখিয়ে দেবার হুমকী দিয়েছে।

অভিযোগে বলা হয়েছে স্পত্তি বিক্রি করার পর আসামীরা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি(কাউন্সিলর হিরু) ও স্থানীয় অপর এক প্রভাবশালী নেতার( যুবলীগ নেতা নিজাম) উদ্ধৃতি দিয়ে ৫ লাখ টাকা দাবী করে। ধার্যকৃত চাঁদার টাকা না পেলে ওই ভবন ত্যাগ করবে না। একই সঙ্গে সম্পত্তির বিক্রেতা হুমায়ুন কবিরকে হত্যার হুমকীও প্রদান করে। গত ২ জুন এ বিষয়ে বরিশাল কোতোয়ালী মডেল থানায় একটি সাধারন ডায়রীও করা হয়। ৭ জুন ভাড়াটিয়ারা স্টল ও ভবন ছেড়ে চলে যাবার প্রলোভন দেখিয়ে বিক্রেতাকে ঘটনাস্থলে নেয়। এরপর তারা আটক করে চাঁদার টাকা দাবী করে। কৌশলে তিনি ডেসটিনি কার্যালয়ে আশ্রয় নেন। সেখানে গিয়েও সন্ত্রাসীরা ত্রাস সৃষ্টি করে হুমায়ুনের পকেটে থাকা ২০ হাজার টাকা লুটে নেয়।

ক্রয়কৃত সম্পত্তির স্বত্তাধিকারী আমিনুল ইসলাম মুন্সী(তুহিন) জানান যুবলীগ নেতা নিজাম ও কাউন্সিল হিরু ভাড়াটিয়াদের শেল্টার দিচ্ছেন। এর নেপথ্যে রয়েছে তাদের ধার্যকৃত চাঁদার টাকা। তিনি আরো জানান নির্দিষ্টভাবে নিজাম ও হিরুরু বিরুদ্ধেু চাঁদদাবীর মালা দায়ের করা হবে। তিনি আরো জানান মামলার দায়ের করায় রাতে তাদের লোক দিয়ে হুমকী দিচ্ছে। কাউন্সিলর আকতারুজ্জামান হিরু জানান সম্পত্তি তো জোর জবরদস্তি করে দখলে নিতে পারবে না। এটা স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গের মাধ্যমে আলোচনা স্বাপেক্ষে ভাড়াটিয়াদের চলে যাবার সময় সীমা নির্ধারন করে দখলে নিবে। যুবলীগ নেতা নিজামুল ইসলাম নিজাম জানান কয়েক দিন আগে কাউন্সিলর হিরুর অফিসে জমি সংক্রান্ত বিষয়ে এক বৈঠক হয়েছে। তবে কারো নিকট কোন চাঁদার টাকা দাবী করা হয়নি বলে জানান। তিনি আরো বলেছেন গত পাঁচ বছরে তার এলাকায় কোন সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয় হয়নি আর চাঁদাবাজী বা চাঁদাদাবীরও কোন প্রশ্ন আসে না। অথচ নিজামের মিথ্যাচারে চাঁদাবাজী বা চাঁদাদাবীর বিষয়টি ফুটে উঠেছে। কারন ওই এলাকায় বিগত পাঁচ বছরে বেশ কয়েকটি সম্পত্তি ক্রয় বিক্রয় হয়েছে। প্রতিটি সম্পত্তির ক্রয় বিক্রয়ে নিজামের বিরুদ্ধে চাঁদা নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। বিশেষ করে রেফকো কোম্পানীর সম্পত্তি বিক্রিতেও তিনি এক ব্যাক্তিকে সম্পত্তি কিনে দেয়ার কথা বলে উৎকোচ গ্রহন করে। পরবর্তীতে সেই সম্পত্তি অন্য জনের নিকট থেকে বেশি উৎকোচ নিয়ে রেফকো কর্তৃক তাকে কিনে দিয়েছে। এছাড়া নিজামের অত্যচারে অতিষ্ঠ হয়ে এক ইলেকট্রনিক্্র ব্যবসায়ী ফকির বাড়ি রোডের নিজ সম্পত্তি বিক্রি করে দিয়ে রাজধানী ঢাকায় অবস্থান করছেন। তিনি জাসদ,জাতীয় পার্টি শেষে বিগত আওয়ামী সরকারের আমলে  আ’লীগে যোগদান করে। অভিযোগ রয়েছে অন্য দলে থাকাবস্থায় তিনি তৎকালীন সময়ে সহযোগীদের নিয়ে কালিবাড়ি রোডের সরস্মতী স্কুলের সামনে আ’লীগের  নৌকা প্রতীক প্রকাশ্য পুড়িয়েছিলেন।
প্রসঙ্গত গত বছরের ১১ অক্টোবর  ডাঃ হুমায়ুন কবির নগরীর ফকির বাড়ি রোডের ০.০৭ শতাংশ জমি চরকাউয়া এলাকার  মৃত্যু এছাহাক আলীর পুত্র আমিনুল ইসলাম মুন্সীর নিকট বিক্রি করেন। সম্পত্তিতে তিন তলা ভবন রয়েছে। যার নিচ তলায় দুটি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সম্পত্তি বিক্রির সময় চুক্তিতে বলা হয় দাতা ভাড়াটিয়া তুলে দিয়ে সম্পত্তি গৃহীতাকে বুঝিয়ে দিবে। চুক্তিনুযায়ী দাতা হুমায়ুন কবির ভাড়াটিয়াদের ভবন ত্যাগ করতে তিন মাসের সময়সীমা বেধে দেয়। কিন্তু সম্পত্তি বিক্রির নির্ধারিত সময়সীমা অতিক্রম হলেও ভাড়াটিয়ারা ভবন ত্যাগ করছেন না। সম্প্রতি স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরের নগরীর পৌর সুপার মার্কেটের অফিসে এক বৈঠকে বসে। সেখানে উপস্থিত ছিলেন ক্রেতা আমিনুল ইসলাম মুন্সী, বিক্রেতা হুমায়ুন কবির, যুবলীগ নেতা নিজামুল ইসলাম নিজাম ও কাউন্সিলর আকতারুজ্জামান হিরু, কালীবাড়ি রোডের ব্যবসায়ী মাহেদুর রহমান সুমন। বৈঠকে নিজাম ও হিরু বলেছে এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক ও বিসিসি মেয়র শওকত হোসেন হিরনও আমাকে না জিজ্ঞাসা করে এই এলাকার জমি ক্রয় বিক্রয়ের কোন সিদ্ধান্ত নেন না। তিনি বলেন জমি’র ক্রেতাকে পাঁচ লাখ টাকা দিতে হবে। নির্ধারিত টাকা না দেয়া পর্যন্ত জমির দখল নিতে দেয়া হবে না। ইসলাম নিজাম ও হিরু এবার ধার্যকৃত চাঁদার টাকা না পেয়ে আমিনুল ইসলামের ক্রয়কৃত সম্পত্তি দখলে রাখতে ভাড়াটিয়াদের দিয়ে লুটপাটের মামলা করিয়েছে। বুধবার দুপুরে বরিশাল আদালতে ভাড়াটিয়া কাশেম মামলাটি দায়ের করেন। মামলার আসামীরা হলেন বিক্রেতা ডাঃ হুমায়ুন কবির, ক্রেতা আমিনুল ইসলাম মুন্সী ও লুৎফর রহমান। মহাজোট নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কঠোর হুশিয়ারী ঘোষনার পরও যুবলীগ নেতা আর কাউন্সিলরের প্রকাশ্য দখল সন্ত্রাসের নতুন স্টাইলে বিস্মিত নগরীর সচেতন মহল। ক্ষোভ প্রকাশ করছেন খোদ আ’লীগের ত্যাগী নেতা-কর্মীরা। এতসবের পরও তার লাগাম টেনে ধরা সম্ভব হচ্ছে না। বিতর্কিত এই যুবলীগ নেতার দৌরাতত্ম বন্ধে আ’লীগের হাইকমান্ডসহ প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তভোগীরা। এরও আগে কোটি টাকার টেন্ডারের ভাগাভাগিকে কেন্দ্র করে কয়েক যুবলীগ নেতা ক্ষিপ্ত হয়ে রাজধানী ঢাকায় নিজামুল ইসলাম নিজামকে মারধর করে।