আনাড়ি ডা. প্রশান্তর অপ চিকিৎসায় ২ গৃহবধুর জীবন সংকটাপন্ন

খুলেছে এক আনাড়ি ডাক্তার। তিনি এখন সব রোগের বিশেষজ্ঞ ও সার্জন! গ্রামের সহজ সরল মানুষ আনাড়ি এ ডাক্তারের চিকিৎসা নিয়ে চরম দুর্দশার মুখোমুখি সহ মৃত্যুর সাথেও পাঞ্জা লড়ছে।

সার্জারি কোর্স শেষ না করেই হরহামেশা সিজারিয়ান সহ সব ধরনের অপারেশন করার সাইনবোর্ড লাগিয়ে প্রশাসনের নাকের ডগায় ব্যবসা করে আসছেন এই ডাক্তার প্রশান্ত রায়। গ্রাম্য পরিবেশে নামকাওয়াস্তে সরকারের অনুমতি বিহীন বিভিন্ন ক্লিনিকে প্রয়োজনীয় লাইফ সাপোর্ট ও অন্যান্য সহযোগি চিকিৎসক ছাড়াই কন্টাক্টে সব ধরনের অপারেশনের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।। আগৈলঝাড়ায় ডা. প্রশান্তর এহেন চিকিৎসার শিকার হয়ে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে কোন রকমে বেচে আছেন উপজেলা বাটরা গ্রামের গৃহবধু জবা রানী মন্ডল ও তার ছেলে বউ পপি রানী। এ চিকিৎসকের সর্বজ্ঞ চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে বিষ্ময় প্রকাশ করেছেন একাধিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ।

এব্যাপারে স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়, সিভিল সার্জন সহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে। লিখিত অভিযোগে জানাগেছে, চিকিৎসক প্রশান্তর অজ্ঞতাপূর্ণ চিকিৎসা এবং ত্র“টিপূর্ণ অপারেশনের কারনে তারা এখনও গুরুতর অসুস্থ্য। ওই চিকিৎসকের ভুল ও ত্র“টিপূর্ণ অপারেশনের কারনে জবা রানীকে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে নতুন করে অপারেশন করা সহ দীর্ঘদিন চিকিৎসা নিতে হয়েছে।

অভিযোগে আরও জানাগেছে, দু’বছর পূর্বে পেটের ব্যাথায় আক্রান্ত হয়ে জবা মন্ডল ডা. প্রশান্তর কাছে আসেন। প্রশান্ত তাকে একাধিকবার আল্ট্রাসনোগ্রাম সহ বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা করিয়ে এ্যাপেনডিস অপারেশন করার কথা বলেন। তার কথা মত উপজেলার রাজিহার গ্রামে অবস্থিত বেসরকারী সংস্থা আলোশিখা পরিচালিত মারিয়া মাদার এন্ড চাইল্ড হেলথ্ কেয়ার ক্লিনিকের সরকারী অনুমতি বিহীন ডায়াগনিষ্টিক সেন্টারে পরীক্ষার পর গত বছর ৩ সেপ্টেম্বর অপারেশন করা হয়। অপারেশনের পরে জবার কোন উন্নতি না হলে পুনরায় ওই ডাক্তারের কাছে এলে জবাকে আল্ট্রাসনোগ্রাম সহ একাধিক পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে ওভারী অপারেশনের পরামর্শ দেয় ডা. প্রশান্ত। পরামর্শনুযায়ী একই ক্লিনিকে ভর্তি হয়ে দ্বিতীয়বার অপারেশন হয় জবার।

দ্বিতীয় অপারেশনের ২০/২৫  দিন  পরেও অপারেশন স্থলে পুনরায় ব্যাথা শুরু হলে ব্যাথা নাশক ওষুধ দেন ডা. প্রশান্ত। অবস্থার অবনতি হলে জবাকে বরিশালে ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরবর্তিতে তাকে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি ইউনিটে ভর্তি করা হয় চলতি বছর ২৩ মার্চ। এখানে জবাকে আবারো অপারেশন করে ডাক্তাররা। অপারেশন শেষে শেবাচিমের চিকিৎসকরা তাদের জানান, পেটের নাড়ি প্যাচানো অবস্থায় থাকা এবং পেটে ফরেন বডি থাকায় এ রোগির এঅবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ওই চিকিৎসকরা এ ধরনের একটি অপারেশন গ্রামের একটি ক্লিনিকে কিভাবে করা হলো তা নিয়েও বিষ্ময় প্রকাশ করেন।

অভিযোগে আরো বলা হয় চলতি বছর একই ভাবে পেটে ব্যাথা নিয়ে জবার ছেলে বউ পপি রানী ওই চিকিৎসকের কাছে যান। ডা. প্রশান্ত একইভাবে ওই রোগীকেও একই ক্লিনিকে নিয়ে এ্যাপেনডিস অপারেশন করেন। সমস্যা সমাধান না হওয়ায় এরপর একাধিকবার ডা. প্রশান্ত ওষুধ দিলেও ব্যাথা না কমায় বরিশালে চিকিৎসা নেন পপি। বরিশালে চিকিৎসাকালীন সময়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মতে অপারেশনের জায়গায় ইনফেকশনের কারনেই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। হাসপাতালে ডাক্তার সংকট তীব্র থাকায় সাধারন মানুষের এ দূর্বলতার সুযোগ নিয়ে প্রশান্ত সব ধরনের রোগের চিকিৎসা করে আসছেন। জানাগেছে,ডা. প্রশান্ত ২০০১ সালে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাশ করেন। বিসিএস ক্যাডার পরীক্ষায় কৃতকার্য না হওয়ায় নন ক্যাডার বিসিএসএ কোয়ালিফাই হয়েছেন। সরকারী চাকুরী বঞ্চিত এ চিকিৎসক সার্জারি বিষয়ে এফসিপিএস প্রথম পর্ব শেষ করেছেন বলে জানা যায়।

এ ব্যপারে ডা. প্রশান্ত রায় বলেন,অভিযোগকারী পরিবারের সাথে তারপারিবারিক সম্পর্ক রয়েছে। তিনি বলেন, তাদের সঠিকভাবে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে এবং তাদের যে অপারেশন করা হয়েছে তা খুবই সাধারন। স্থানীয় প্রতিদন্দ্বি ও কোয়াক ডাক্তাররা রোগি না পাওয়ায় তাকে পছন্দ করেননা বলে তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।

এ ব্যপারে বরিশাল সিভিল সার্জন ডা. অনিল চন্দ্র দত্ত বলেন, ডা. প্রশান্তর ব্যাপারে অভিযোগের কপি তিনি পেয়েছেন। এঘটনায় তিনি ৩ সদস্যর তদন্ত কমিটি গঠন করবেন। তদন্ত কমিটির রিপোর্টের পরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন বলে তিনি আস্বস্থ করেন।