আনলো সুদিন ধান ভাঙ্গার ভ্রাম্যমান মেশিন

বেকার যুবক প্রবীর বিশ্বাসের। অথচ পাঁচ বছর পূর্বেও সে ছিলো বেকার। এখন গ্রামে ঘুরে ঘুরে সকল খরচ বাদে প্রতিদিন সে আয় করছেন ৪ থেকে ৫’শ টাকা। উপার্জিত অর্থ দিয়ে স্ত্রী, সন্তানদের নিয়ে প্রবীর এখন ভালোভাবেই দিন কাটাচ্ছেন। বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার প্রত্যন্ত মোল্লাপাড়া গ্রামে প্রবীর বিশ্বাসের বাড়ি।

জানা গেছে, ধান ভেঙ্গে চাল করার জন্য আগে কৃষকেরা নৌকা অথবা ভ্যান গাড়িতে করে দূর-দূরান্তের মেশিন ঘরে যেতো। এছাড়াও গ্রামবাংলার গাঁয়ের বধূরা ঢেঁকিতে ধান ভেঙ্গে চাল করতেন। আধুনিক প্রযুক্তির বদৌলতে এখন আর সেদিন নেই। প্রায় প্রতিটি হাট-বাজার কিংবা গ্রামের মোড়ে মোড়ে এখন রয়েছে ধান ভাঙ্গানোর মেশিন। এরপর এসেছে ভ্রাম্যমাণ মেশিন। কৃষকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে শ্যালোচালিত এ মেশিন দিয়ে ধান ভাঙ্গিয়ে দেয়া হচ্ছে। ধান ভাঙ্গানো এ ভ্রাম্যমান মেশিন ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে গৌরনদী ও আগৈলঝাড়া উপজেলায়।

বারপাইকা গ্রামের কৃষক রবি হালদার জানান, এ উপজেলার কৃষকেরা সেচ প্রকল্পে বছরে তিনটি (ইরি, বোরো ও আমন) ধানের আবাদ করে থাকেন। আর কৃষকেরা তাদের উৎপাদিত সোনালি ধান সিদ্ধ করে শুকিয়ে দূর-দূরান্তের বাজারে গিয়ে ধান ভাঙ্গানো মেশিনে এখন আর চাল ভাঙ্গাতে আগ্রহী নন। তাই তারা বাড়িতে ভ্রাম্যমাণ ধান ভাঙ্গানো মেশিনে ধান ভেঙ্গে চাল করতে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। আর এ সুযোগে এখন দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে ভ্রাম্যমাণ মেশিনের ব্যবহার। সম্প্রতি উপজেলার বারপাইকা গ্রামের রবি হালদারের বাড়িতে দেখা মিলে ভ্রাম্যমাণ মেশিন দিয়ে ধান ভাঙ্গানো প্রবীর বিশ্বাসের।

তিনি একই উপজেলার মোল্লাপাড়া গ্রামের এক হতদরিদ্র কৃষকের ছেলে। এক বন্ধুর পরামর্শে শ্যালোমেশিন দিয়ে ভ্রাম্যমাণ ধান ভাঙ্গানো মেশিন তৈরির উদ্যোগ নিয়েছেন প্রবীর বিশ্বাস। পাঁচ বছর আগে অনেক কষ্টে ও ধারদেনা করে প্রায় ৫০ হাজার টাকা খরচ করে ভ্রাম্যমান রাইস মিল বানিয়েছেন। প্রথমে তার ডিজেল চালিত এ মেশিন দেখে অনেকেই উপহাস করেছেন। এখন তার দেখাদেখিতে আরও ৬/৭ জনে এ ধরনের মেশিন তৈরি করেছেন। প্রবীর বিশ্বাস তার এ ইঞ্জিনচালিত শ্যালোমেশিনের তৈরি ভ্রাম্যমান ধান ভাঙ্গার মেশিন নিয়ে ধান ভাঙ্গানোর কাজে ছুঁটে যান গ্রামের পর গ্রামে। তার মেশিনের শব্দ পেয়েই লোকজন ছুঁটে আসে ধান ভাঙ্গাতে।

প্রবীর বিশ্বাস বলেন, বোরো ধান ওঠার পর কৃষাণীরা ধান সিদ্ধ করে শুকিয়ে চাল করার জন্য ভাঙ্গিয়ে নিয়েছেন। ভ্রাম্যমান এ মেশিনে প্রতি মণ ধান ভাঙ্গার (চাল করার) জন্য প্রবীর বিশ্বাসকে দিয়ে হয় ৩০ টাকা। কোনো কোনো গৃহস্থের বাড়িতে ৬০ থেকে ৭০ মণ ধান ভাঙ্গার কাজও মেলে। প্রতিদিন পাশ্ববর্তী গ্রাম ঘুরে খরচ বাদে তার ৪ থেকে ৫’শ টাকা আয় হয় বলেও তিনি উল্লেখ করেন।