স্যার নাই তাই গল্প করে সময় কাটাই

হিজলতলা, বিজ্ঞানাগার, পতাকাষ্টান্ড, করিডোর, লাইব্রেরীর সামনেসহ বিভিন্নস্থানে বিক্ষিপ্ত বিচ্ছিন্নভাবে জড়ো হয়ে গল্প করছে শিক্ষার্থীরা। কলেজের এ অবস্থা কেন জানতে চাইলে লাইব্রেরীর সামনে থাকা হিসাব বিজ্ঞান বিভাগে অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্র বিভাষ রায়, শংকর লাল হালদারসহ অনেকেই বলেন- কলেজে স্যার নাই তাই সবাই গল্প করে সময় কাটাই। শ্রেনীকক্ষ ঘুরে দেখা গেছে সব ক্লাস রুমই ফাকা, সবাই বাইরে বসে যে যার মত গল্প করেছে। সরকারি গৌরনদী কলেজে চলছে চরম শিক্ষক সংকট। শিক্ষক সংকটে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। শিক্ষককের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশসহ লাগাতার আন্দোলন করেও কোন প্রতিকার পাননি বলে শিক্ষার্থীরা জানান।

কলেজের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও সংশ্লিষ্টরা জানান, বরিশালের গৌরনদীতে ১৯৬৩ সালে কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৯৮৪ সালে গৌরনদী কলেজকে সরকারি গৌরনদী কলেজে রুপান্তরিত করা হয়। ১৯৯৮ সালে কলেজটিতে বাংলা, হিসাববিজ্ঞান, মৃত্তিকাবিজ্ঞান, উদ্ভিদবিজ্ঞানসহ ৪টি বিষয়ে অনার্স কোর্স চালু করা হয়। কলেজের উপাধ্যক্ষ মোঃ মোয়াজ্জেম হোসেন জানান,  একাদশ, দ্বাদশ, ডিগ্রি ও ৪টি বিষয়ে অনার্সসহ কলেজে সাড়ে তিন হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে। এনাম কমিটির সুপারিশ মোতাবেক কলেজটিতে শিক্ষক ১০৫টি পদ সৃষ্টির কথা থাকলেও সৃষ্ট পদ সংখ্যা ৫৫টি। সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে ৫০টি পদ সৃষ্ঠির জন্য আবেদন করে গত ১০ বছরে কোন ফল পাওয়া যায়নি। সৃষ্ট ৫৫টি শিক্ষক পদের মধ্যে দীর্ঘ দিন ধরে কলেজে মাত্র ১৮টি পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। বর্তমানে সরকারি গৌরনদী কলেজে ৩৭টি শুন্য পদ নিয়ে অনার্সসহ সাড়ে তিন হাজার শিক্ষার্থীদের পাঠদান চলছে। বাংলা, ব্যাবস্থাপনা ও মৃত্তিকাবিজ্ঞান, কম্পিউটর, দর্শন ও শরীরচর্চা বিভাগে কোন শিক্ষক নেই। ইংরেজীতে ৪ জন শিক্ষক থাকার কথা থাকলেও রয়েছে ১ জন। ইংরেজী বিভাগের সহকারী অধ্যাপক স্বরজ কুমার অধিকারী জানান, প্রতিদিন কমপক্ষে ৮টি ক্লাস নিতে হয়। একার পক্ষে তা সম্ভব হয়ে উঠে না। ফলে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা ব্যাহত হচ্ছে। গনিত বিভাগের প্রভাষক ননী গোপাল সরকার বলেন, আমাকে ডিগ্রী পাশ কোর্স ৩টি বর্ষ, অনার্স একাউনটিং, একাদশ দ্বাদশ ৪টি ক্লাস ও কম্পিউটরের ক্লাস নিতে হয়। যা খুবই কষ্টদায়ক ও অসম্ভব। যে কারনে অনেক সময়ই পাঠদান সম্ভব হয়ে উঠে না। রাষ্ট্রবিজ্ঞানে সৃষ্ট পদ ৩টি আছে ১জন, অর্থনীতিতে ৩টিতে আছে ১জন, ইতিহাস ৩টিতে আছে ১জন, ইসলামী ইতিহাসে ৩টিতে আছে ১ জন, পদার্থ বিজ্ঞান ৩টিতে আছে ১ জন, রসায়ন বিভাগে ৪টিতে আছে ১ জন, উদ্ভিদবিজ্ঞানে ৪জনে আছে ২জন, মৃত্তিকা বিজ্ঞানে ৫টি পদে আছে শুন্য। উপাধ্যক্ষ, মোঃ মোয়াজ্জেম হোসেন আরো জানান, শিক্ষক সংকটে কলেজের শিক্ষার্থীদের পাঠদানই শুধু ব্যাহত হচ্ছেনা, জনবল সংকটের কারনে এমএলএসএস দিয়ে লাইব্রেরীয়ান ও ক্লার্কের কাজ করানোহয়। ক্লার্ক দিয়ে একাউনটেন্ডের কাজ করাতে হচ্ছে। কলেজের শিক্ষার্থী মোঃ লুৎফর রহমান দ্বীপ, মোঃ সুমন মোল্লা, মোঃ খাইরুল ইসলামসহ বিক্ষুদ্ব শিক্ষার্থীরা জানান, কলেজের শিক্ষক সংকট দুরীকরনের দাবিতে দীর্ঘ দিন ধরে বিক্ষোভ, সমাবেশ, অবরোধসহ লাগাতার কর্মসূচী পালন করে আসছে শিক্ষার্থীরা কিন্তু সমস্যা সমাধানে কোন পদক্ষেপ গ্রহন করেননি কলেজ কর্তৃপক্ষ। এ ব্যপারে কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ আঃ মজিদ হাওলাদারের কাছে জানতে চাইলে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ ও শিক্ষক সংকটের স্বীকার করে তিনি বলেন, সমস্যা সমাধানে আমাদের উদ্যোগের কোন ঘাটতি নেই, বহুবার মন্ত্রনালয়ে ধর্না দিয়েছি শিক্ষক সংকটের বিষয়টি অবহিত করেছি কিন্তু কোন প্রতিকার পাইনি।

ছবি সোর্স- www.facebook.com/groups/gournadi