পরিত্যক্ত বোতল আনছে বৈদেশিক মুদ্রা – প্লাস্টিকের গুড়ো দিয়ে তৈরি সুতা রপ্তানি হচ্ছে বিদেশে

বরিশালের গৌরনদীতে সেগুলো গুড়ো করে বিদেশে রপ্তানি করা হচ্ছে। আর এ প্লাস্টিক বোতলের গুড়ো দিয়ে তৈরি হচ্ছে সুতা। ফলে প্লাস্টিকের গুড়ো বিদেশে রপ্তানি করায় দেশে বয়ে আনছে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা। আর যে কারনেই গৌরনদীতে একে একে গড়ে উঠেছে পরিত্যক্ত প্লাষ্টিক বোতল গুড়া করার ৫টি কারখানা। বর্তমানে ওইসব কারখানায় কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছে এখানকার শতাধিক বেকার ও অসহায় নারী-পুরুষ।

গৌরনদীর উত্তর পালরদী গ্রামের আব্দুর জব্বার সরদার (৫০) পেশায় ছিলেন দিনমজুর। সারাদিক অপরের জমিতে দিনমজুরের কাজ করে যা আয় করতেন তা দিয়ে তার সংসার চলতো যেমন নুন আনতে পান্তা ফুরায়। গত ৪ মাস পূর্বে সে কসবার রিপন সরদারের প্লাষ্টিক গুড়োর কারখানায় চাকুরি নিয়েছেন। এখানে সকাল আটটা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত কাজ করে এখন তিনি মাসিক বেতন হিসেবে পাচ্ছেন ৫ হাজার টাকা। তা দিয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে এখন ভাল ভাবেই কাটছে তার সংসার। কসবা গ্রামের সিমা বেগম (৩৫), উত্তর পালরদীর জরিনা বেগম (৪০)সহ ৭/৮ জন অসহায় দুঃস্থ নারীরা এ কারখানায় কাজ করে মাসিক বেতন হিসেবে পাচ্ছেন ২৫’শ থেকে তিন হাজার টাকা। প্লাষ্টিক গুড়োর কারখানা তাদের পরিবারে বাড়তি আয়ের সুযোগ করে দিয়েছে বলে তারা উল্লেখ করেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০০০ সনের প্রথম দিকে বাংলাদেশ থেকে প্লাস্টিকের গুড়ো বিদেশে রপ্তানি করা শুরু হয়। বিদেশে এ প্লাস্টিকের গুড়ো দিয়ে সুতা তৈরী করা হয়। সেই সুতা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের শিল্প প্রতিষ্ঠানের কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। এসব সুতা আমাদের দেশের বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের জন্য আমদানি করা হয়।

রপ্তানিকারক গৌরনদী উপজেলার কসবা গ্রামের রিপন সরদার জানান, এ ব্যবসায় অল্প পুঁজিতে অধিক লাভ হওয়ায় বর্তমানে অধিকাংশ লোকজনই এ ব্যবসায় ঝুঁকে পড়েছেন। পর্যায়ক্রমে গৌরনদীতে প্লাষ্টিক বোতল গুড়ো করার ৫টি কারখানা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। একটি কারখানা প্রতিষ্ঠিত করতে কাটার, ওয়াশ ও হান মেশিনসহ ১২ থেকে ১৫ লক্ষ টাকার মূলধন লাগে। এসব মেশিন ঢাকার নবাবপুর থেকে ক্রয় করা হয়। তিনি আরো জানান, তারা এ মালামাল এখান থেকে গুড়ো করে ঢাকার ইসলামবাগের পাইকারী দোকানে বিক্রি করেন। এককেজি প্লাষ্টিকের গুড়ো ৫৫ থেকে ৫৮ টাকায় বিক্রি করা হয়। প্রতিটি কারখানা থেকে গড়ে প্রতিমাসে ১৫ থেকে ২০ টন প্লাষ্টিক গুড়ো উৎপাদন হয়। রিপন আরো জানান, এলাকার বেকার ও অসহায় নারী-পুরুষদের কর্মসংস্থানের কথা চিন্তা করে তিনি প্লাষ্টিক বোতল গুড়ো করার কারখানা প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এ কারখানায় বিশেষ করে গ্রামের অসহায় মহিলারা কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। গৌরনদীর ৫টি কারখানায় শতাধিক নারী-পুরুষ কর্মরত রয়েছেন। পথ শিশুরা বিভিন্ন স্থান থেকে প্লাষ্টিকের বোতল সংগ্রহ করে ভাঙ্গারী ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে। ভাঙ্গারী ব্যবসায়ীরা সেগুলো কারখানায় বিক্রি করে দেয়। কারখানায় সে বোতল গুড়ো করে চিন, কোরিয়া, ভিয়েতনামসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এ প্লাস্টিক গুড়ো রপ্তানি করা হয়। বিদেশে যে পরিমান প্লাস্টিক গুড়োর চাহিদা রয়েছে সে পরিমান গুড়ো প্লাস্টিকের অভাবে রপ্তানি করা সম্ভব হচ্ছেনা।

অপর ব্যবসায়ী আনোয়ার হেসেন বলেন, এ ধরনের শিল্প-কারখানা প্রতিষ্ঠিত করতে বেশি মূলধনের প্রয়োজন হয় না। প্লাস্টিকের বোতল রিসাইক্লিন করার ফলে পরিবেশ দূষন মুক্ত থাকে। ময়লা আর্বজনা থেকে রক্ষা পাচ্ছে দেশের মানুষ। এ ছাড়াও জমির উর্বরতা অটুট থাকছে। আমাদের দেশ থেকে প্রতিবছর দুই হাজার টন প্লাস্টিকের গুড়ো বিদেশে রপ্তানি করে আয় হচ্ছে প্রায় এক’শ কোটি টাকা। তিনি বিদেশ থেকে পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের বোতল শুল্কমুক্ত ভাবে আমদানির সুযোগ করার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে দাবি জানিয়েছেন।