রমজান উপলক্ষে মুড়ি ভাজার উৎসব

বরিশাল সদর উপজেলার সায়স্তাবাদ ইউনিয়নের অধিকাংশ মানুষের পেশা মুড়ি ভাজা। তাই রমজানকে সামনে রেখে সায়স্তাবাদ  ইউনিয়নে মানুষরা রাত-দিন সমানতালে মুড়ি ভাজায় ব্যস্ত। বুধবার সায়স্তাবাদ ইউনিয়নে ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি ঘরে সকাল থেকে শুরু করে গভীর রাত পর্যন্ত চলছে মুড়ি ভাজার উৎসব। এ উৎসব চলে সারাবছর ধরে। তবে রোজা এলে স্বাভাবিকভাবে তাতে নতুন প্রাণ লাভ করে।

সায়স্তাবাদ  ইউনিয়নে লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দুই পদ্ধতিতে মুড়ি ভেজে তাদের জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। যারা একটু সচ্ছল তারা নিজেরা বাজার থেকে ধান কিনে তা বিশেষভাবে প্রক্রিয়াজাত করে চাল তৈরি করে মুড়ি ভেজে নিজেরাই বাজারজাত করে থাকেন। এতে স্বাভাবিকভাবেই তারা বেশি লাভবান হন। এরা প্রতি মণ মুড়ি থেকে কমবেশি ২৫০ টাকা আয় করেন। অন্যদিকে যারা আর্থিকভাবে তেমন সচ্ছল নন তাদের আড়ৎদাররা বিনামূল্যে চাল দিয়ে থাকেন। এই চাল দিয়ে তারা মুড়ি ভেজে আড়তে দিয়ে আসেন। এতে আড়ত থেকে তাদের মুড়ি ভাজার মজুরি মেলে। মজুরি হিসেবে তারা পান কেজি প্রতি ৯ টাকার মতো। তবে মুড়ি ভাজার জ্বালানি কাঠ ও আনুষঙ্গিক কিছু খরচ বাদে তাদের ১০০ থেকে ১২০ টাকার বেশি থাকে না বলে জানান সুরেশ সুত্রধর ও স্বপন সুত্রধর।

সাধারণত দুজন পূর্ণ বয়স্ক মানুষ প্রতিদিন দুই মণ পর্যন্ত মুড়ি ভাজতে সক্ষম। জানা গেছে, প্রতিটি ঘরের ছোট-বড় নারী-পুরুষ সবাই পালাক্রমে মুড়ি ভাজার কাজ করছেন। তবে এ কাজে নারীরাই বেশি সময় দেন বলে জানালেন গৃহিনী রুমা রানী। দীর্ঘক্ষণ তাদের থাকতে হয় জ্বলন্ত চুলোর কাছে। এতেও তাদের কষ্ট নেই। কারণ মুড়ি ভেজে তাদের পরিবারে সচ্ছলতা এসেছে।

এ গ্রামগুলোতে যে মুড়ি ভাজা হয় তার বেশিরভাগই মোটা চালের মুড়ি বা টাফি, বিগজ, মালা, বিআর-১৬, বিআর-১১ ও বন্ধাল ধানের মুড়ি। স্থানীয় বাজার থেকে এসব ধান সংগ্রহ করে প্রথমে অর্ধসিন্ধ করা হয়। পরে একে প্রায় ২৪ ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখা হয়। এরপর আবার পরোপুরি সিদ্ধ করে রোদে শুকিয়ে মেশিন দিয়ে তৈরি করা হয় চাল। সেই চাল বাড়িতে নিয়ে কুলায় ঝেড়ে চাল ও কুড়া আলাদা করা হয়। সে চাল থেকে তৈরি হয় মুড়ি।

সায়স্তাবাদ  ইউনিয়নে স্কুল শিক্ষক আবুল বাসার বলেন, বাজারের অন্য মুড়ির চেয়ে দাম একটু বেশি। তবে মুখে নিলে এই বেশি দামের কথাটা আর মনে থাকে না। এর স্বাদ একবার যে পেয়েছেন তার মুখে অন্য কোনো মুড়ি ভালো লাগার কথা নয়।

মুড়ি আড়তের মালিক দিপংকর সাহা ও মেহেদি হাসান বলেন, বেশিরভাগ মেশিনে ভাজা মুড়িতে সার মেশানো হয় ফলে তা থেকে কেমন যেন একটা গন্ধ আসে। কিন্তু তারপরও মানুষ কম দামে পেয়ে তা কিনে খায়। তিনি জানান, তারা যে পদ্ধতিতে মুড়ি ভেজে থাকেন তাতে খরচ একটু বেশি তাই দামও বেশি পড়ে। সাধারণত ৭৫ কেজি টাফি ধান থেকে ৫০ কেজি চাল পাওয়া যায়। যেটা সনাতন পদ্ধতিতে প্রক্রিয়াজাত করে চাল করতে খরচ পড়ে ৬০ থেকে ৭০ টাকা। একটি অটো রাইসমিল থাকলে এ খরচ ২৫ থেকে ৩০ টাকার মধ্যে হয়ে যেত। ফলে মুড়ির খুচরা দামও কমে যেত।