বরিশালের তিন উপজেলার ফের ‘সর্বহারা আতঙ্ক’

নিজস্ব সংবাদদাতাঃ নানা কু-কর্মের দায়ে দীর্ঘ ৯ বছর পালিয়ে থাকার পর অতি সম্প্রতি এলাকায় ফিরেছে বরিশালের বাবুগঞ্জ, গৌরনদী ও উজিরপুর উপজেলার নিষিদ্ধ ঘোষিত চরমপন্থী সর্বহারা নামধারী সন্ত্রাসীরা। র‌্যাব-পুলিশসহ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর ভয়ে দির্ঘ বছর পালিয়ে থাকলেও হঠাৎ করে তাদের এলাকায় আগমনে বিস্মিত এবং স্থম্ভিত জনসাধারন। কোন অদৃশ্য শক্তির বলে তারা এলাকায় ফিরে আবারো সংগঠিত হতে শুরু করেছে তা নিয়ে চিন্তিত দুর্ধর্ষ এই ক্যাডারেদের হাতে নির্যাতিতরা। যদিও আইন শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী বলছে, তারা চরমপন্থী সর্বহারা-সন্ত্রাসী দমনে তৎপর রয়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আশির দশক থেকে রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতার আর্শিবাদে বেপরোয়া হয়ে উঠে সর্বহারা নামধারী সন্ত্রাসীরা। বিশেষ করে বাবুগঞ্জ এবং গৌরনদী উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নে তারা ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিলো। হত্যা, ধর্ষন, চাঁদাবাজি, চাঁদা না দিলে পঙ্গু করে দেয়া এবং ডাকাতি ছিলো তাদের নিত্যদিনের কাজ। এমনকি তাদের ভয়ে তখন মামলা পর্যন্ত করার সাহস পায়নি অনেক নির্যাতিত পরিবার। হাতে গোনা দু’একটি পরিবার জীবনের মায়া ত্যাগ করে মামলা করলেও যথাযথ স্বাক্ষির অভাবে ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছে সবাই। কিন্তু তারপরও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সন্ত্রাসী তালিকায় স্থান পায় তারা।
এ অঞ্চলে সর্বহারা জিয়া উদ্দিন ও কামরুল গ্র“পের আধ্যিপত্য ছিলো লক্ষনীয়। তারা এলাকায় নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ড করে সাধারন মানুষকে অতিষ্ট করে তোলে। এরইমধ্যে র‌্যাব গঠিত হওয়ার পর বিভিন্ন সময় ক্রসফায়ার ও এনকাউন্টারে চিহ্নিত বেশ কয়েকজন ভয়ঙ্কর ক্যাডাররা নিহত হয়। অন্যান্যরা পালিয়ে যায়। এতে জনমনে ফিরে আসে স্বস্তি।

এরইমধ্যে দীর্ঘদিন আত্মগোপনে থাকার পর অতিসম্প্রতি এলাকায় ফিরতে শুরু করেছে পালিয়ে থাকা ওই সন্ত্রাসীরা। বিশেষ করে সম্প্রতি সমাপ্ত ইউপি নির্বাচন উপলক্ষে অনেকটা বাঁধাহীন ভাবেই স্বদর্পে এলাকায় ফিরে আসে সর্বহারার দুর্ধর্ষ ক্যাডাররা। আইনের দৃষ্টিতে সন্ত্রাসী তালিকাভুক্ত হলেও এদের মধ্যে কয়েকজন অংশ নেয় ইউপি নির্বাচনে। র‌্যাব-পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে নির্বাচনী প্রচারনায়ও অংশ নেয় তারা। কিন্তু জনগন চিহ্নিত এই সর্বহারা ক্যাডারদের ঘৃনাভরে প্রত্যাখ্যান করে।
র‌্যাব-পুলিশের শিথিলতায় নির্বাচনের পরও দাপটের সহিত এলাকায় অপতৎপরতা চালায় তারা। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দিনের বেলা এরা তেমন একটা প্রকাশ্যে না এলেও রাতে স্বশস্ত্র অবস্থায় দল বেঁধে ঘুরে বেড়ায় এলাকার নিয়ন্ত্রন বজায় রাখতে। গত ১৫ দিনের ব্যবধানে তারা দুটি গোপন সভা করে ব্রাক্ষ্মনদিয়া সাইক্লোন সেন্টারে এবং ব্রাক্ষ্মনদিয়া রেজিষ্ট্রার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। বৈঠকে ইউপি নির্বাচনে বিজয়ী সর্বহারাদের প্রতিদ্বন্ধিদের শায়েস্তা এমনকি খতম করা সিদ্ধান্ত হয় বলে জানিয়েছেন এক জনপ্রতিনিধি। দীর্ঘ কয়েক বছর ফের তাদের স্বশস্ত্র তৎপরতায় মানুষের মাঝে ফের জেঁকে বসেছে ‘সর্বহারা আতঙ্ক’।

বরিশালের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুজাহিদুল ইসলাম জানান, সর্বহারা, সন্ত্রাসী ও জঙ্গি দমনে এমনিতেই পুলিশ তৎপর। এসব এলাকায় গোয়েন্দা নিয়োগ করা আছে। নির্ভরযোগ্য তথ্য পেলে পুলিশ সেভাবেই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক পরিচয় কিংবা মদদ কোন বাঁধা হবেনা বলে তিনি মনে উল্লেখ করেন।