একজন ফেরেশতা বনাম দন্তহীন দুদক, মহিউদ্দিন খান আলমগীর উপাখ্যান…

সরকারী ভৃত্যগীরি হতে প্রমোশন পেয়ে ব্যাক্তিগত ভৃত্যগীরিতে নাম লেখানো আলমগীর সাহেবের মনিব নিজেই এ ব্যাপারে মুখে কুলুপ এটে চেপে যাচ্ছেন প্রসঙ্গটা। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, উনি কথা বলছেন প্রতিপক্ষের ভাষায় আর তাদের মুখে তুলে দিচ্ছেন সরকারকে অস্থির করার লোভনীয় আহার। এই সেই প্রতিপক্ষ যাদের ক্ষমতাচ্যুত করার জন্যে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হয়েও তিনি অচল করে দিয়েছিলেন সচিবালয়। যতদূর জানি গণতান্ত্রিক নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ম্যান্ডেট নিয়েই ক্ষমতায় এসেছিল ঐ প্রতিপক্ষ। গণতন্ত্রকে ধর্ষণ করার উর্দিওয়ালাদের যেমন অধিকার নেই, তেমনি নেই প্রজাতন্ত্রের চাকরদেরও। জনাব আলমগীর রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছিলেন যা ছিল দণ্ডযোগ্য অপরাধ।

খান সাহেবের আহাজারির কারণ বুঝতে খুব যে একটা অসুবিধা হয় ব্যাপারটা তেমন নয়। উনার হুমকি ধামকির ভেতরে ঢুকলে একটা বাস্তবতা সহজেই প্রতীয়মান হবে, খালেদা জিয়ার বর্তমান অবস্থার সাথে এই বিপ্লবীর অবস্থার খুব একটা তফাৎ নেই। উভয়ই ঢাল নাই তলোয়ার নাই নিধিরাম সর্দারের অবস্থার মত। পার্থক্য একটা আছে অবশ্য, খালেদা জিয়ার দল ক্ষমতায় নেই, খান সাহেবের দল এখন ক্ষমতার ভরা যৌবনে। এ বিবেচনায় আমলার কষ্টটা আরও একটু বেশি হওয়ার কথা। এত কাছে অথচ ধরা ছোঁয়ার এত বাইরে! ক্ষমতা নামের সোনার হরিণ যা বাংলাদেশের রাজনীতিবিদদের ফকির হতে বাদশাহ বানায়, আসমানের চাঁদ মাটিয়ে নামিয়ে আনে, বঙ্গোপসাগরের পানি আঙিনায় বইয়ে দেয়, সে ক্ষমতা হারিয়ে মহিউদ্দিন খান আলমগীরের মত প্রফেশনাল চোর হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলবেন তাতে ম্যাংগোবিদ্‌দের অবাক হওয়ার কিছু নেই। খান সাহেব একটা সত্য মনে করতে নিশ্চয় সময় পান না, বাংলাদেশ দুর্নীতিবাজদের প্রতিযোগীতায় পরপর ৪ বার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। আর তাতে খান আলমগীর আর তেনার মনিবদের অবদান খাটো করার কোন ফাঁক ফোকর নেই। দুই আহমদ আর এক মোজাফরের কারণে বাংলাদেশ এ ’সন্মান’ অর্জন করেনি, এ সম্মানের মাঠ প্রসারিত টেকনাফ হতে তেতুলিয়া পর্যন্ত, যার আসল আর্কিটেক্ট আলমগীর সাহেবের মত ধূর্ত শিয়ালের দল। দুদককে অবশ্যই জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে, তবে তা আলমগীর সাহেবদের মত ’ফেরেশতাদের’ বন্দী করার জন্যে নয়, বরং এদের মত সমাজিক ক্যান্সারদের স্বাধীনভাবে বিচরণ করতে দেয়ার জন্যে।

সাংবাদিকরা খান সাহেবকে প্রশ্ন করেছিলেন দুদক না থাকলে দুর্নীতি দমন করবে কে? এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন চুড়ান্ত পর্যায়ে দুর্নীতি দমিত হবে জনতার আদালতে। ফিলসফিক্যাল উত্তর! বাংলা ভাইও কিন্তু নিজের আদালতকে জনতার আদালত বলতেন। মুরগির মত হাত- পা বেধে উলটো করে গাছে ঝুলিয়ে নির্মম অত্যাচারের মাধ্যমে রায় কার্যকর করা হতো সে আদালতে। আলমগী সাহেবের উচিৎ হবে জনতার আদালতের একটা প্রাথমিক ধারণা আগ বাড়িয়ে তৈরী করে রাখা। বলা যায়না, এই জনতার আদালতই হয়ত একদিন দুদকের ১০ গুন ক্ষমতা নিয়ে তাড়া করতে পারে চোর, বাটপার আর রাষ্ট্রদ্রোহীদের।

Writer / Source : WatchDog| AmiBangladesho.OrG