দেখার যেন কেউ নেই – লক্ষ্মীপুরে নামিদামী হোটেলগুলো ভেজাল খাদ্যে সয়লাব

বাপসনিঊজ/এলএনএসঃ লক্ষ্মীপুরের অধিকাংশ নামিদামী হোটেলগুলোতে ভেজাল খাদ্য পরিবেশন ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ বিরাজ করছে। হোটেলের সংখ্যা দিন দিন বাড়লেও বাড়ছেনা খাবারের মান। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার পরিবেশন করছে জেলার অধিকাংশ নামিদামী হোটেলগুলো। কিছু কিছু হোটেলের বাহিরের পরিবেশ ভাল হলেও ভেতরের পরিবেশ একবারেই নাজুক। অস্বাস্থকর পরিবেশে রান্নার কাজ করতে দেখা যায় হোটেলের বাবুর্চিদের। শুধু রান্না ঘরের পরিবেশই খারাপ নয়, হোটেল বাবুর্চিদের পোশাক-আশাক এবং দেহের অবস্থা থাকে একেবারেই নাজুক। খালি গায়ে রান্না এবং তা পরিবেশন করার সময় গায়ের ঘাম ঝরতে দেখা যায় তৈরী খাবারের মধ্যে। অধিকাংশ হোটেলের রান্না ঘর অপরিচ্ছন্ন। রান্না ঘরের পাশেই থাকে ময়লা আবর্জনার স্তুপ। অনেক হোটেলে রয়েছে পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানির সংকট। নোংরা পানি দিয়ে চলে রান্নাবান্নার কাজ। অধিকাংশ হোটেলের রান্নাঘর স্যাঁতস্যাঁতে ও অপরিচ্ছন্ন। খাবার টেবিলগুলোর নীচে থাকে ময়লা আবর্জনার ঝঁড়ি। আবার কোন কোন হোটেলের খাবার টেবিলের উপর দেখা যায় ময়লা পানি ও উচ্ছিষ্ট খাবার রাখার পাত্র। বেশির ভাগ হোটেল বয়দের থাকেনা নির্দিষ্ট পোশাক।

শনিবার সরেজমিনে শহরের উত্তর তেমুহনীস্থ রাজীবপুর হোটেলে গিয়ে দেখা যায়, খাবার টেবিলের উপর ময়লা-আবর্জনার বালতি এবং নীচে পঁচা খাবারসহ বিভিন্ন আবর্জনার ঝুঁড়ি। একই এলাকার মোহাম্মদিয়া হোটেলের পরিবেশন এবং আভ্যন্তরীন পরিবেশ চকচকে দেখা গেলেও রান্না ঘরের নাজুক অবস্থা। অস্বাস্থকর পরিবেশে খালি গায়ে রান্নার কাজ করতে দেখা গেছে বাবুর্চিদের। এদিকে শহরের চক বাজারস্থ হোটেল ক্যাফে কুইন এর অবস্থা একেবারেই নাজুক। রান্নাঘর থেকে শুরু করে হোটেলে ভেতরের পরিবেশ একেবারেই নোংরা ও স্যাঁতস্যাঁতে। হাসপাতাল রোডের তৃপ্তি হোটেলের রান্না ঘরে দেখা যায় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে রান্না করছে বাবুর্চিরা। এছাড়া মোরগ হাঁটা’র গ্রামীণ হোটেল, পুরাতন আদালত রোডের গ্র্যান্ড হোটেল, চক বাজার মসজিদের পেছনের নিউ গ্র্যান্ড, কোর্ট চত্বরের ঝুমুর ও রহমানিয়া হোটেলসহ অনান্য হোটেল গুলোতে দেখা গেছে একই চিত্র।

এদিকে আগের দিনের পঁচা-বাসী খাবারগুলো পরের দিন বিক্রি করতে দেখা যায় শহরের নামিদামী হোটেল গুলোতে। হোটেলের জন্য নিম্ম মানের মাছ, মাংস এবং শাকসবজি গভীর রাতে বাজার থেকে ক্রয় করতে দেখা যায়। বাজারের অবিক্রিত পণ্য মাছ, মাংস, সবজি সরবারহ হচ্ছে হোটেল গুলোতে। অধিকাংশ হোটেল গুলোর সাথে চুক্তি থাকে কসাই, মাছ ব্যবসায়ী, মুরগির পোল্ট্রি ফার্ম মালিকদের সাথে। পোল্টি ফার্মের রোগ বালাইকৃত অসুস্থ্য মোরগ গুলোকে সরবরাহ করা হয় এ সকল হোটেল গুলোতে। রোগাক্রান্ত গরু-মহিষের মাংসও কম দামে সরবরাহ হয় হোটেলগুলোতে। অনেক সময় হোটেলে ভোক্তার মাঝে পরিবেশন করা মাছ, মাংস থেকে দূর্গন্ধ পাওয়া যায়। প্রায় সবগুলো হোটেলে রয়েছে ৪/৫টি ডিপ ফ্রিজ। অধিকাংশ হোটেল মালিকদের রয়েছে ডজনখানেরক ডিফফ্রিজ। কোন কোন হোটেল মালিক নিজ বাসায় বা ভাড়া নেয়া গুদামে ডিপ ফ্রিজ রাখে। এসব ডিপ ফ্রিজে বাজার থেকে কম দামে কেনা মাছ, মুরগী, গরু, খাসির গোস্ত মাসের পর মাস সংরক্ষণ করে  ভোক্তাদের মাঝে পরিবেশন করা হয়। যাতে কোন খাদ্যগুণ থাকেনা বলে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন। কোন ধরণের নিয়ম নীতি ছাড়াই চলছে এসব হোটেলগুলো। রান্নার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে বাসী এবং নিম্ম মানের তেল। একবারের ব্যবহার হওয়া তেল দিয়ে ধারাবাহিক রান্না বান্না করতে দেখা যায়। অনেক সময় হোটেল গুলোতে ক্রেতারা খাবার খাওয়ার সময় ঝাড় দিতে দেখা যায়। এতে বালিতে সয়লাব হয় খাবার। ভেজাল এবং অস্বাস্থকর খাবার পরিবেশনের কারণে অহরহ ডায়রিয়া, আমাশয়, পেটেরপীড়া দেখা দেয়। প্রভাবশালী হোটেল মালিকদের কাছে ভোক্তারা যেন একেবারেই অসহায়। কেউ হোটেলের পরিবেশ বা খাবারের মান নিয়ে প্রতিবাদ করলে তাকে নাজেহাল হতে হয়। প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাঝে মাঝে এসব হোটেলে লোক দেখানে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা হলেও অধিকাংশ প্রভাবশালী হোটেল মালিকরা অভিযান থেকে সবসময় নিরাপদে থেকে যায় বলে অভিযোগ রয়েছে।

নাম প্রকাশে একজন হোটেল মালিক জানান, একজন হোটেল মালিকের বাসায় কমপক্ষে ১০টি ডিপ ফ্রিজ রয়েছে। তিনি যখন যে পণ্যের দাম কম থাকে তখন সে পণ্য কিনে ফ্রিজে সংরক্ষণ করে রাখেন এবং এ খাদ্য সারা বছর পরিবেশন করেন। কোন মুরগীর ফার্মে মড়ক দেখা দিলে কম দামে জীবিত মৃত সব মুরগী কিনে এনে ফ্রিজে সংরক্ষণ করে রাখেন। তিনি আরও জানান উক্ত হোটেল মালিক গত বছর মাঝারো সাইজের একট্রাক ইলিশ মাছ কম দামে খরিদ করে ফ্রিজে সংরক্ষণ করে সারা বছর এ মাছ ছড়া দামে বিক্রি করেছেন। এভাবে তিনি জিরো থেকে হীরো হয়েছেন বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উক্ত হোটেল মালিক জানান। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, অথচ ভ্রাম্যমান আদালত কখনো উক্ত হোটেল বা তার বাসায় অভিযান পরিচালনা  করেন না। তার  হোটেলে অভিযান পরিচালনা করলে অসাস্থ্যকর পরিবেশ এবং বাসায় তল্লাশী করলে ফ্রিজে রাখা অনেক মাছ মাংসের সন্ধান পাওয়া যাবে।