কেয়ার টেকার সরকার ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন ছাড়া এদেশে কোনো নির্বাচন হবেনা -খালেদা জিয়া

খোন্দকার কাওছার হোসেন : বিএনপি চেয়ারপারসন ও সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা খালেদা জিয়া বলেছেন, কেয়ার টেকার সরকার ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন ছাড়া এদেশে কোনো নির্বাচন হবেনা। হতে দেয়া হবেনা। নির্বাচন কমিশন নিয়োগ দেয়ার আগে সকলের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে সকলের কাছে গ্রহনযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। এ লক্ষে তিনি রোডমার্চ ও জনসভার কর্মসূচি ঘোষণা করেন। ঘোষিত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে আগামী ১০ অক্টোবর সিলেটের উদ্দেশ্যে রোডমার্চ, ১১ অক্টোবর সিলেটে জনসভা। ১৮ অক্টোবর রাজশাহীর উদ্দেশ্যে রোডমার্চ, বগুড়ায় জনসভা। ১৯ অক্টোবর রাজশাহীতে জনসভা। ২৫ অক্টোবর চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রোডমার্চ, ফেনীতে জনসভা। ২৬ অক্টোবর চট্টগ্রামে জনসভা।

মঙ্গলবার বিকেলে নয়া পল্টনে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত চার দলীয় জোটের জনসভায় প্রধান অতিথির ভাষনে  তিনি এ কর্মসূচি ঘোষনা করেন।

ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ও ঢাকার মেয়র সাদেক হোসেন খোকার সভাপতিত্বে এ সমাবেশে জামাতের ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহমদ, বিজেপির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ, খেলাফত মজলিশের আমির অধ্যক্ষ মাওলানা মুহম্মদ ইসহাকসহ চার দলীয় জোট ও সমমনা রাজনৈতিক দলের সিনিয়র নেতারা বক্তৃতা করেন।

খালেদা জিয়া বলেন, এ সরকার প্রতিদিন সকালে আল্লাহর নাম নিয়ে মিথ্যা কথা বলা শুরু করে। এবং সারা দিন সেই মিথ্যাই চলতে থাকে।

তিনি বলেন, সরকার ভয় ভীতি দেখিয়ে ক্ষমতায় থাকতে চায়। কিন্তু ভয়-ভীতি দেখিয়ে ক্ষমতায় থাকা যায় না। সরকার বলছে- দেশ নাকি খুব ভালোভাবে চলছে। খালেদা বলেন, মানুষ ভালোভাবেই জানে দেশ কিভাবে চলছে।

তিনি বলেন, আমাদের সরকারের সময়ে আমরা কিছু শিল্পকে অগ্রাধিকার দিয়েছিলাম। যাতে গার্মেন্টস শিল্পের বিকাশ হয়। আমরা বস্ত্র শিল্পকে প্রাধান্য দিয়েছিলাম। সরকারের ভুল নীতি ও ভারত প্রীতির কারণে বস্ত্র শিল্প ধ্বংস হয়ে গেছে। রাস্তা খুলে দেয়া হয়েছে যাতে অবাধে ভারত থেকে সুতা আমদানি করা য়ায়। এতে দেশিয় বস্ত্র খাত বিকাশ লাভ করতে পারছে না। তিনি বলেন, দেশ জাহান্নামে যাক, মুরুব্বীরা খুশি থাকলে তারা খুশি।

তিনি বলেন, দ্রব্যমূল্য লাগামহীনভাবে বাড়ছে। এতে জনজীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠছে। এ সরকার সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে না। সরকার শুধু নিজেদের নিয়েই ব্যস্ত। দেশে সন্ত্রাস, লুটপাট ও ত্রাসের রাজত্ব চলছে। ছাত্রলীগ দেশে সন্ত্রাস চালিয়ে এক ভীতিকর অবস্থা তৈরি করেছে। দেশের লুটপাট ও টেন্টারবাজি চলছে। কিন্তু সরকারের সেদিকে কোন খেয়াল নেই।

জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির সমালোচনা করে তিনি বলেন, দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো নয়। তিন বছরে নতুন কোনো শিল্প স্থাপন হয়নি। অনেক প্রতিষ্ঠান গ্যাস বিদ্যুতের অভাবে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, ৭২ থেকে ৭৫ পর্যন্ত দেশে যে অবস্থা ছিলো দেশে সেই অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। দেশে তখন লুটপাট হয়েছে। এখনো লুটপাট করছে। তিনি নতুন প্রজন্মের উদ্দেশে বলেন, অতীত ইতিহাস জানা দরকার। র্বতমান সরকারের আমলে দেশে ১৯৭২-৭৫ সালের মতো লুটপাট হচ্ছে।

বিএনপি হরতাল দিলে দলীয় কার্যালয় অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। নেতাকর্মীদের রাস্তায় নামতে দেয়া হয়না। একই সময় আওয়ামী লীগের মিছিলের সামনে পেছনে পুলিশ পাহারা দিতে হয়। আপনাদের সরকার, আপনাদের পুলিশ তারপরও কেন এই পুলিশ পাহারা, ছি ছি লজ্জা। তিনি বলেন, পুলিশ পাহারায় মিছিল করে রক্ষা পাওয়া যাবেনা।

গনতন্ত্র পুলিশের বুটের নীচে পিস্ট
তিনি বলেন, দেশের গনতন্ত্র পুলিশের বুটের নীচে পিস্ট হয়ে আছে। এই বুটের নীচ থেকে গনতন্ত্র মুক্ত করতে হবে। এডভোকেট এম ইউ আহমেদের মৃত্যু ও চৌধুরী আলমের নিখোজ হওয়াকে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ সরকারের আমলে আইন শৃঙ্খলার চরম অবনতি হয়েছে। পুলিশ সাধারণ মানুষের ওপর কীভাবে নির্যাতন করছে তা আপনারা দেখেছেন। পুলিশ ও র‌্যাবকে তারা দলীয় ক্যাডার হিসেবে ব্যবহার করছে। পুলিশকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আপনারা সাধারণ মানুষের ওপর নির্যাতন বন্ধ করুন। এ দিন, দিন না একদিন দিন আসবে সেদিন বিচারের কাঠগড়ায় দাড়াতে হবে।

র‌্যাবকে প্রশিক্ষন ও জাতিসংঘ মিশনে না নেয়ার আহ্বান
তিনি বলেন, র‌্যাবকে বিদেশে প্রশিক্ষন ও জাতিসংঘ মিশনে না নেয়ার জন্য বিদেশীদের প্রতি আহ্বান জানান। পুলিশ ও র‌্যাবকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, সামনে কঠিন দিন আপনাদের সামনে অপেক্ষা করছে।
তিনি আরও বলেন, শুনি পুলিশ না-কি জনগণের সেবক। যদি পুলিশ জনগণের সেবক হয়েই থাকে তবে আপনারা সবার সঙ্গে একই আচরণ করুন।

শেয়ার বাজার লুট হয়
তিনি বলেন, যখনই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে তখনই শেয়ার বাজার লুট হয়। ’৯৬ সালেও তারা শেয়ারবাজার থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করেছিলো। সেই লুটের টাকা দেশেও রাখে নাই। ডলার পাউন্ড করে বিদেশে পাচার করেছে। এই কারণে আমাদের দেশে বিদেশী টাকার দাম বেড়েছে। তিনি বলেন, দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো নয়, মানুষ খেতে পারছেনা, কিন্তু প্রধানমন্ত্রী বিরাট দল নিয়ে বিদেশ ঘুরে বেড়াচ্ছেন-এই হলো দেশের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব। তিনি সরকারকে অবিলম্বে পদত্যাগ করে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি জানান।

দাবিসমুহ
পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল, ত্রয়োদশ সংশোধনী পুনর্বহাল, সংবিধানে ভোটের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা, আলোচনার মাধ্যমে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন, ইলেক্ট্রনিক ভোটিং পদ্ধতি বাতিল করা করার দাবি জানান তিনি।

ক্ষমতায় গেলে কি করবে
বিএনপির ওপর আস্থা রাখার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আগামীতে বিএনপি ক্ষমতায় এলে দ্রব্যমূল্য জনগণের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে আনা হবে, দুর্নীতি দূর করবো। শেয়ারবাজারকে ঠিক করা হবে। প্রশাসনে দলীয়করণ বন্ধ করা হবে। বিএনপি জনগণের আশা-আকাক্ষার প্রতিফলন ঘটিয়ে সংবিধানে সংশোধনী আনবে বলে সমাবেশে ঘোষণা দেন।

ন্যায় বিচার বলে কিছু নেই
ন্যায় বিচার বলে কিছু নেই, মানুষ বিচার পাচ্ছেনা, বিচার হচ্ছে দুই রকম এ অভিযোগ করে তিনি বলেন, বর্তমান সরকার লুটপাট করলেও তাদের কোনো বিচার হচ্ছে না, বিচার হবে কিভাবে। তারা বিচার বিভাগকে দলীয়করণ করে রেখেছে। সেখানে গেলে আওয়ামী লীগ হলেই সব মাফ। কিন্তু বিএনপি জামাত কিংবা জাতীয় পার্টির নেতারা অন্যায় না করলেও তাদের সাজা দেয়া হয়, জামিন দেয়া হয়না। দলীয় করণের মাধ্যমে বিচার বিভাগকে নষ্ট করা হয়েছে।

তাদের কেন ওএসডি করা হয়েছে
তিনি বলেন, প্রশাসন দলীয় করণ করা হয়েছে, ৪৬০ জন যোগ্য অফিসারকে ও এস ডি করা হয়েছে, তাদের কেন ওএসডি করা হয়েছে তা জানাতে চাই। তারা আওয়ামী লীগের দালালী করেনা বলেই কি তাদের ওএসডি করা হয়েছে। তিনি অবিলম্বে এসব কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দিয়ে প্রশাসনের স্থবিরতা দুর করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, সামরিক বাহিনীতেও দলীয় করণ চলছে।

তখন শান্তি কোথায় থাকে
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে অশান্তি সৃষ্টি করে এখন বিশ্ব শান্তির মডেল দিচ্ছেন। এটা জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। স্বাধীনতার পর ৪০ হাজার মানুষ হত্যা করেছে। তখন আপনার  শান্তি প্রক্রিয়া কোথায় ছিলো। হরতালে সময়ে বিরোধী দলের ওপর নির্যাতন চালানো হয়েছে। আপনার শাসনামলে অনেক মানুষকে হত্যা-গুম করা হয়েছে। তখন এই শান্তি প্রক্রিয়া কোথায় থাকে।

যুদ্ধাপরাধ বিচারের সমালোচনা
তিনি বলেন, একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের নামে চলছে রাজনৈতিক প্রহসন। গঠিত ট্রাইবুনালের সমালোচনা করে তিনি এটাকে দলীয় ট্রাইবুনাল হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি এ অভিযোগে আটক বিএনপি ও জামাত নেতাদের মুক্তি দাবি করেন।
 
তিনি বলেন, অবশ্যই  আন্তর্জাতিক ট্রাইবুনালে আন্তর্জাতিক মানের বিচার হতে হবে। আওয়ামী লীগের যুদ্ধাপরাধীদেরও বিচার করতে হবে।

জামাতকে সমাবেশ-মিছিল না করতে দেয়ার সমালোচনা করে বলেন, তারা কোনো নিষিদ্ধ সংগঠন নয়। তারা নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত দল। তারপরও কেন তাদের ওপর এতো নির্যাতন।

১৯৯৬ সালের আগে জামাতকে নিয়ে আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন গড়ে তোলার প্রসঙ্গটি উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, তখন এক সঙ্গে মতিউর রহমান নিজামী সাহেবসহ আজকের প্রধানমন্ত্রী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন করেছেন। রাষ্ট্রের অনেক সম্পদ বিনষ্ট করেছেন তারা। ওই আন্দোলনে অনেক মানুষ হত্যা হয়েছে। তখন নিজামী সাহেব আওয়ামী লীগের কাছে যুদ্ধাপরাধী ছিলেন না। এখন তিনি তাদের কাছে যুদ্ধাপরাধী হয়ে গেছেন।