জ্বালানী তেলের মূল্য বৃদ্ধিতে ক্ষুব্ধ দক্ষিণাঞ্চলবাসী

উম্মে রুম্মান, বরিশাল ॥ মাত্র ৭ মাসের মধ্যে পরপর তিন বার জ্বালানী তেলের মূল্য বৃদ্ধিতে ক্ষুব্ধ গোটা দক্ষিণাঞ্চলবাসী। তেলের মূল্য বৃদ্ধির সাথে সাথে বিদুৎ ও বাসা বাড়ীতে এলপি গ্রাসেরও মূল্য বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। পাশাপাশি জ্বালানী তেলের উপর নির্ভর সকল প্রকার যানবাহনের ভাড়া বৃদ্ধিসহ দ্রব্যমূল বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু জনগনের আয় মোটেই বাড়েনি। ফলে দফায় দফায় সরকারের জ্বালানী তেলের মূল্য বৃদ্ধির ঘোষনাকে জনগনের দূর্ভোগ আরো বেড়ে যাচ্ছে। এদিকে সরকারের এ স্বিধান্তকে এ অঞ্চলবাসী সমার্থন না করলেও স্বাগত জানিয়েছে  এ অঞ্চলের ফিলিং স্টেশন মালিকসহ জ্বালাণী  তেল বিক্রেতারা। কেনান মাত্র ৭ মাসে পরপর তিনবার জ্বালানী তেলের মুল্য বৃদ্ধির ঘোষনায় মজুদ রাখা তেল বিক্রি করে শুধুমাত্র বরিশাল জেলাতেই অর্ধ কোটি টাকা আয় করে নিয়েছে তারা। এটিকে তারা তেল ব্যবসায় ভাগ্য বলে দাবী করেছে।

জানাগেছে, বিশ্ব বাজারে জ্বালানী তেলের মূল্য বৃদ্ধির অজুহাত তুলে বৃহস্পতিবার রাতে আবরও দেশ ব্যপি জ্বালীনী তেলের মূল্য বৃদ্ধি’র ঘোষনা দেয়া হয়। ১৮ সেপ্টম্বেররের ন্যায়ে এবারেও কেরসিন, ডিজেল, অকটেন ও পেট্রল লিটার প্রতি ৫ টাকা বৃদ্ধি করা হয়েছে। এর আগে গত ৫ মে সকল প্রকার জ্বালানী তেলের লিটার প্রতি ২ টাকা বৃদ্ধি করা হয়। তাই মাত্র ৭ মাসের ব্যবধানে ৭৪ টাকার পেট্রল গতকাল থেকে বিক্রি হচ্ছে ৮৬ টাকা, ৭৮ টাকার অক্টেন ৯০ টাকা ও মাত্র ৪৪ টাকার ডিজেল এখন বিক্রি করা হচ্ছে ৫৬ টাকা। একই ভাবে গৃহস্থলীর কাজ ও গ্রামের মানুষের অতি প্রয়োজনীয় ৪৮ টাকা কেরোসিন গতকাল থেকে বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা লিটার প্রতি।

অনসন্ধানে জানাগেছে, বরিশাল জেলায় প্রতিদিন প্রায় ১ লাখ ২৫ হাজার লিটার জ্বালানী তেলের প্রয়োজন হয়। এর মধ্যে পেট্রল ২৫ হাজার লিটার, অক্টেন ২০ হাজার লিটার, ডিজেল ৮০ হাজার লিটার ও কেরোসিন ২০ হাজার এবং অন্যান্য ৫ হাজার লিটার। বরিশাল থেকে চলাচলকারী অধিকাংশ লঞ্চ, ট্রলার, স্পিড বোড, বাস, ট্রাক, মাক্রোবাসসহ অন্যান তেলে চলিত যানবাহন এ জেলার প্রায় ২০টি ফিলিং স্টেসন ও খচড়া বিক্রেতাদের কাছ থেকে এ তেল সরবরাহ করে থাকে।

অপরএক তথ্যসূত্রে জানাগেছে, পরপর তিনবার হঠাৎ করে সরকার জ্বালানী তেলের মূল্য বৃদ্ধির ঘোষনা দেয়ায় দক্ষিণাঞ্চলসহ সারা দেশের মানুষ এ স্বিধান্তকে স্বাগত না জানালেও বিভিন্ন ফিলিং স্টেশন মালিক ও তেল বিক্রেতারা এটিকে স্বগত জানিয়েছে। কেননা ওই তিন দফা তেলের মূল্য বৃদ্ধিতে শুধু মাত্র বরিশালের বিভিন্ন ফিলিং স্ট্রেশনে মজুদ রাখা তেল নতুন মূল্যে বিক্রি করে বাড়তি অর্ধ কোটি টাকা আয় করে নিয়েছে।

বরিশালের যমুনা ডিপো সূত্রে জানাগেছে, শুক্র ও শনিবার ডিপো থেকে তেল সরবরাহ না করায় বৃসস্পতিবার ফিলিং স্টেশন গুলোতে ৪ দিনের তেল মজুদ করে রাখা হয়। সে সূত্রে গত বৃহস্পতিবার জ্বালানী তেলের লিটার প্রতি ৫ টাকা মুল্য বৃদ্ধিতে শুধু মাত্র ৪ দিনের জন্য মজুদ রাখা তেল বিক্রি কর লক্ষ লক্ষ টাকা বাড়তি আয় করতে পারবে ফিলিং স্ট্রেশন মালিকরা। এছাড়া গত ৫ মে জ্বালানী তেলের মূল্য বৃদ্ধি করায় একই ভাবে মজুদ রাখা তেল বিক্রি করে বাড়তি আয় করে নিয়েছে ফিলিং স্টেশন মালিকরা। সব মিলিয়ে তিন বারে লিটার প্রতি ১২ টাকা মূল্য বৃদ্ধিতে বরিশালের অর্ধ কোটি টাকা লাভ করেছে ফিলিং স্টেশন মালিক ও তেল বিক্রেতারা। এটিকে তারা তেল ব্যবসায় ভাগ্য বলে দাবী করেছে।

অপর দিকে গত ৫ মে ও ১৭ সেপ্টম্বর জ্বালানী তেলের মূল্য লিটার প্রতি যথাক্রমে ২ টাকা ও ৫ টাকা মূল্য বৃদ্ধির সাথে পাল্লা দিয়ে দ্রাব্য মূল্য বৃদ্ধি থেকে শুরু করে বিদ্যু ও এলপি গ্রাসের মূল্য কয়েক দফা বৃদ্ধি পেয়েছে। একই সাথে বৃদ্ধি পেয়েছে বিভিন্ন রুটের বাস ও লঞ্চ এবং মালবাহী ট্রাকের ভাড়া। তাই ১০ নভেম্বর আবারও এক দফা জ্বালানী তেলের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় পূর্বের ন্যায়ে দ্রব্য মূল্য থেকে শুরু করে বাস, লঞ্চ ও ট্রাকসহ সবধরনের যানবাহনের যাত্রী ভাড়া বৃদ্ধির অশংকার করা যাচ্ছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই নতুন ভাড়া দিয়ে যানবাহনে চলাচল করতে হবে এ অঞ্চলের মানুষকে। কিন্তু জনগনের আয় মোটেই বাড়েনি। তাই মাত্র ৭ মাসের মধ্যে পরপর তিন বার জ্বালানী তেলের মূল্য বৃদ্ধিতে ক্ষুব্ধ গোটা দক্ষিণাঞ্চলবাসী।