গৌরনদী-আগৈলঝাড়ায় পোল্টি মুরগীর বর্জ এখন আর ফেলনা নয় ॥ বিক্রি হচ্ছে মাছের খাবার হিসেবে

নিজস্ব সংবাদদাতা ॥ বরিশালের গৌরনদী ও আগৈলঝাড়া উপজেলার পোল্টি খামারের মুরগীর বর্জ (বিষ্টা) এখন আর ফেলনা নয়। ব্যবহার হচ্ছে এসব উপজেলার গৌরনদী-আগৈলঝাড়ায় পোল্টি মুরগীর বর্জ এখন আর ফেলনা নয় ॥ বিক্রি হচ্ছে মাছের খাবার হিসেবেমৎস্য খামারের মাছের খাবার হিসেবে। এসব মুরগীর খামারের বর্জ কেনাবেচা হচ্ছে অন্যান্য পন্যের মতো।

আগৈলঝাড়া উপজেলার গৈলা নিমতলা গ্রামের নান্নু বেপারী (৪৫) গত দু’বছর পূর্বে এ ব্যবসা শুরু করেন। দিন দিন তার বর্জ ব্যবসা জমজমাট হয়ে ওঠায় এখন তিনি গৌরনদী ও আগৈলঝাড়ার সীমানা পেড়িয়ে গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়া ও কোটালীপাড়া এলাকার মৎস্য খামারে মুরগীর বর্জ সরবরাহ শুরু করেছেন। নান্নু বেপারী জানান, এ ব্যবসায় কম পুঁজিতে লাভ হয় বেশি। দৈনিক খরচ বাদে তার গড়ে এক থেকে দেড় হাজার টাকা আয় হয়। তার এ ব্যবসার কাজে শ্রমিক হিসেবে নিযুক্ত রয়েছেন একই গ্রামের মুরাদ হোসেন, নাঠৈ গ্রামের শাহাদাত হোসেন, শহিদুল ইসলাম ও ইমাম হোসেন। তাদের প্রত্যেককে দৈনিক মজুরি হিসেবে আড়াই’শ টাকা করে দেয়া হয়। এরা নসিমনযোগে গৌরনদী ও আগৈলঝাড়ার বিভিন্ন পোল্টি খামার থেকে মুরগীর বর্জ (পায়খানা) সংগ্রহ করে মাছের খামারে দিয়ে আসে।

ওইসব শ্রমিকেরা জানান, মাসে একবার তারা প্রতিটি পোল্টি খামারে গিয়ে প্রতি ড্রাম মুরগীর বর্জ দুই’শ টাকা দরে ক্রয় করে। ওই বর্জ ড্রাম ভর্তি করে তারা নান্নু মিয়ার কথা অনুযায়ী বিভিন্ন মৎস্য খামারে পৌঁছে দিয়ে আসেন। মৎস্য খামারে প্রতি ড্রাম মুরগীর বর্জ ৭ থেকে ৮’শ টাকায় বিক্রি করা হয় বলেও তারা উল্লেখ করেন।

নান্নু বেপারীর দেখাদেখি এখন এ ব্যবসা শুরু করেছেন ঘাঘর গ্রামের আতিয়ার রহমান, নিত্যানন্দ বাড়ৈ, কৃষ্ণ কান্ত, ইব্রাহিমসহ অনেকেই। তারা অল্প দিনেই এ ব্যবসায় অধিক লাভবান হয়েছেন বলে জানিয়েছেন।

গৌরনদীর দিয়াশুর গ্রামের পোল্টি মুরগীর খামারের স্বত্তাধীকারি উমার আলী, মোশারফ হোসেন ও রুহুল আমীন হাওলাদার জানান, পূর্বে মুরগীর বর্জ বিভিন্ন ডোবা ও নালায় ফেলে দেয়া হতো। বর্জ পরিস্কার করতেও তাদের অতিরিক্ত শ্রমিক নিয়োগ করা হতো। বর্তমানে মুরগীর বর্জ ক্রয় করে নেয়ায় তারা যেমন কিছু টাকাও পাচ্ছেন তেমনি অতিরিক্ত শ্রমিক নিয়োগের ঝামেলাও কমে গেছে।

গৌরনদীর টিকাসার গ্রামের মৎস্য খামারের মালিক মোঃ লিটন হাওলাদার জানান, মাছের খাবার হিসেবে তিনি পূর্বে খৈল, সার ও মৎস্য ফিড ব্যবহার করতেন। বর্তমানে ওইসব জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় এখন তিনি মাছের খাবার হিসেবে কম টাকায় মুরগীর বর্জ ব্যবহার করছেন। অল্প টাকায় এটি মাছের জন্য উত্তম খাবার বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

পোল্টি মালিক সমিতির সভাপতি মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান জানান, বিভিন্ন স্থানের মৎস্য খামারী ও বর্জ বিক্রেতারা গৌরনদী শতাধিক পোল্টি খামারের বর্জ কম টাকায় ক্রয় করে নিয়ে মাছের খাবার হিসেবে ব্যবহার করছে। এতে একদিকে যেমন পোল্টি খামারীরা কিছু টাকা পাচ্ছেন তেমনি মৎস্য খামারীদেরও অর্থ সাশ্রয় হচ্ছে। পূর্বে পোল্টি খামারীরা যত্রতত্র ভাবে মুরগীর বর্জ ফেলায় দুর্গন্ধের পাশাপাশি খামারে নানা রোগবালাই লেগেই ছিলো। বর্তমানে সে সব সমস্যা নেই।