পর্যটন সমৃদ্ধ বৃহত্তর ময়মনসিংহের গড়

মোশাররফ হোসেন শুভ, ময়মনসিংহ ॥ বৃহত্তর ময়মনসিংহের গড়ের ফকির ও সন্যাস আন্দোলন দমনের জন্য ব্রিটিশ সরকার ১৭৮৭ সালের ১লা এপ্রিল ময়মনসিংহকে জেলা ঘোষনা করেন। নোয়াখালির কালেক্টর মি: রোটন ছিলেন ময়মনসিংহের প্রথম জেলা প্রশাসক । এর আগে ফকির নেতা শাহমজরদের সাথে ইংরেজ কুঠি প্রধান হেনরী লজের সাথে যুদ্ধে ফকির ও সন্যাসরা পরাজিত হয়ে মধুপুর রসুলপুর জঙ্গলে আশ্রয় গ্রহন করেন। ফকিরা পরবর্তীতে শেরপুর ও রংপুরে গিয়ে আশ্রয় গ্রহন করলেও সন্যাসরা এই জঙ্গলে থেকেই ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন অব্যাহত রাখে।  সন্যাস নেতা জয় জয়সিংহগির ও আনন্দগির বনার ও বংশাই নদীর উভয় তীরে আস্তানা গড়ে তোলে। এই আস্তানান নাম ছিলো আনন্দমঠ। বঙ্কিম চন্দ্র চট্রোপাধ্যায় ময়মনসিংহে চাকরি করতে এসে জঙ্গলের সন্যাসীদের আস্তানাকে কেন্দ্র করে রচনা করেন তার বিখ্যাত উপন্যাস আনন্দমঠ। মধুপুর রসুলপুর গড় প্রাচীন পলল গঠিত চত্বর ভূমির অন্তর্গত।

ভূগোলবিদরা উত্তরে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র হতে দক্ষিণে বুড়িগঙ্গা পর্যন্ত বি¯তৃত ১৫৮৫ বর্গমাইল আয়তনের প্রাচীন পলল গঠিত চত্বরের পুরোটাই মধুপুর রসুলপুর বেল্ট হিসেবে অভিহিত করে থাকেন। সুলতানী ও মোগল আমলে এই গড় আলেপশাহী বা আলাপশিং, জয়েনশাহী, আটিয়া, কাগমারী ও ভাওয়াল পরগনায় বিভক্ত ছিল। ব্রিটিশ রাজত্বে এই গড় নাটোরের জমিদার রানীভবানী, মুক্তাগাছা, ভাওয়াল,করটিয়া ওআটিয়ার জমিদার এবং ঢাকার নবাব বাহাদুরের সম্পত্তি ছিল। ভূগোলবিদ টি এইচ ডিলাটুসে ১৯১০ সালে অভিমত দেন যে, এই গড়ের লালমাটির আবির্ভাব ঘটে মহা হিমযুগে বা পিষ্টোসিন যুগে। অপর ভূগোলবিদ এফ সি হার্ষ্ট এই মতকে সমর্থন করেছেন। গড়  প্লাবনভূমি থেকে ২০ থেকে ১শ” ফুট। মর্গান ও রম্যাকিটায়ারের মতে, গড়ের মৃত্তিকায় স্তারায়ন এখনো শেষ হয়নি। মূলতঃ ভূকম্পন এবং বিপর্যয়ের ফলে অববাহিকা হতে উচ্চ ভূমিতে পরিণত হয়েছে এই গড়। ভূতত্ত্ববিদরা এই গড়কে ভূকম্পের দিক থেকে বেশী মাত্রায় চিহ্নিত করেছেন ।

১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পে গড় এলাকার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয় । এই মৃত্তিকার আস্তরন বহুলাঙশে জারিত, এজন্য মাটি লালচে বাদামী। অসংখ্য লৌহ ঘটিত বা চুনে শিলার খন্ডাদি মিশ্রিত। এমাটিতে জলীয় ভাগ কম থাকায় মাটি অনেকটা কঠিন ও নিরেট। মৃত্তিকার উপরের স্তরে জৈব উপাদান দেখা যায় না। ক্রান্তিয় মৌসুমীর মৌসুমীর অন্তর্গত হলেও ষড় ঋতুর মধ্যে প্রধানত তিনটি মৌসুমে জোড়ালোবাবে রয়েছে এই অঞ্চলে। মে হতে অক্টোবর পর্যন্ত বর্ষা মৌসুম । শতকরা ৯২ ভাগ বর্ষন এসময় হয়। নভেম্বর হতে ফেব্র“য়ারী পর্যন্ত শীতকাল। এসময় আবহাওয়া থাকে শুষ্ক ও শীতল এবং সামান্য বৃষ্টি হয়। মার্চ ও এপ্রিল গ্রীষ্মকাল। এসময় বাতাস থাকে খুবই উত্তপ্ত এবং জলীয় বাষ্প থাকে কম। মাঝে মধ্যেই আসে বর্ষনসহ ঝর ও শিলা বৃষ্টি। ১৯১৩ সালে ঘূর্ণিঝড় মুক্তাগাছার অংশে ৫টি গ্রাম লন্ডভন্ড হয়ে যায়। এতে ৫০ জন নিহত এবং সহস্রাধিক আহত হয়। তাপমাত্রার উপাত্ত বিশ্লেষনে দেখা যায়, ডিসেম্বর ও জানুয়ারী মাসে এখানে নিন্মতম তাপমাত্রা পরিলক্ষিত হয়, যার গড় প্রায় ১৯.১ ডিগ্রি সেলসিযাস। চরম উষ্ণ তাপমাত্রা এপ্রিল মাসে ৪২.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।চরম শীতল তাপমাত্রা জানুয়ারী ও ফেব্রুয়ারী মাসে ৪.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবহাওয়া অধিদপ্তরের উপাত্ত অনুযায়ী কৃষি মৌসুম ভিত্তিক রবি মৌসুমে ৫৯ মিলিমিটার, প্রাক খরিপ মৌসুমে ৪৬৫ মিলিমিটার এবং খরিপ মৌসুমে ১৭৫১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। পৌষ মাসে মাটির রস শুকিয়ে যায়। জৈব পদার্থের স্বল্পতা, ফসলের পুষ্টি গাটতি পুষ্টি ধরে রাখার সীমিত ক্ষমতা, ব্যবহৃত রাসায়নিক সার পানির সাথে দ্রুত নিষ্কাষিত হয়ে যাওয়া এবং মাটির অম্লত্ব সমস্যার সৃষ্টি করে।

ইকোলজিক্যাল মানচিত্রে উত্তর দক্ষিনে ১১০ কি:মি:দীর্ঘ এবং ২০ থেকে ৭৫ কি:মি: প্রশস্ত দেখানো হয়েছে।গাজীপুর  এলাকাকাকে এই বেল্টে চিহ্নিত করা হয়েছে । গড় এলাকার যোগ্র নদী হলো বংশাই, বানার, ফুটাজানি ও খিরু নদী।তন্মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘ বংশাই জামালপুরের আদি ব্রহ্মপুত্র হতে সৃষ্টি হয়ে সাভারের কাছে ধলেশ্বরীতে মিলেছে। পূর্ব বানার এবং পশ্চিমে বংশাই নদীর মধ্যবর্তী অঞ্চলে মূল শালবনের অবস্থান ছিলো । এক সময় এটি ছিল দেশের বৃহত্তম শালবন। উপত্তকার মধ্য ভুমিতে চালা এবং নীচু জমিকে বাইদ বলা হয়। গড় এলাকা মূলত চালা আর বাইদ ঢেউ খেলানো এক সমতল প্রান্তর ।বাপসনিঊজ.