কুমিল্লায় দু ‘পক্ষে মারামারি, ফেনীতে ছাত্রদল-শিবির সংঘর্ষ

নিজস্ব সংবাদদাতা ॥ রোডমার্চের পথসভার মঞ্চে বসা নিয়ে কুমিল্লায় বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও মারামারির ঘটনা ঘটেছে। এতে আহত হয়েছে অন্তত ২০ জন। রোববার দুপুর দেড়টার দিকে পদুয়ার বাজারে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাজী ইয়াসিন এবং বিএনপির সাবেক নেতা ও সদ্য নির্বাচিত সিটি মেয়র মনিরুল হক সাক্কুর সমর্থকদের মধ্যে এ ঘটনা ঘটে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনকে চূড়ান্ত রূপ দিতে বিরোধী দলীয় নেতা খালেদা জিয়া সকাল ১০টায় ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম অভিমুখে রোডমার্চ শুরু করেছেন। পদুয়ার বাজারে রোডমার্চের নির্ধারিত পদসভা রয়েছে, যেখানে খালেদা জিয়া বক্তব্য রাখবেন।

এই সভামঞ্চের সামনেই দুই পক্ষের কর্মী-সমর্থকরা মারামারিতে জড়িয়ে পড়েন। এসময় মঞ্চে জেলা বিএনপির সভাপতি রাবেয়া চৌধুরী, বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব বরকতউল্লাহ বুলু, মো. শাহজাহানসহ জেলা ও কেন্দ্রীয় বিএনপি নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

বিএনপি থেকে অব্যাহতি নিয়ে মনিবরুল হক সাক্কু নাগরিক কমিটির প্রার্থী হিসেবে বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে প্রথম মেয়র নির্বাচিত হন। মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি দলে ফেরার ব্যাপারে এরইমধ্যে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সকাল থেকেই সাক্কুর সমর্থকরা মঞ্চ ও আশপাশের এলাকায় রোডমার্চকে স্বাগত জানিয়ে স্লোগান ও বক্তব্য দিতে থাকে। দুপুর সোয়া ১টার দিকে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাজী ইয়াসিন মঞ্চে আসেন। এসময় মেয়র মঞ্চে ছিলেন না। তখন সাক্কুকে মঞ্চে তোলার দাবিতে তার সমর্থকরা স্লোগান দিলে দুই পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।

এক পর্যায়ে সমর্থকরা একে অপরের দিকে চেয়ার ছুঁড়ে মারে ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চালায়। প্রায় দুইশ চেয়ার ভাংচুর করা হয়। এসময় আহত হয় অন্তত ১৫-২০ জন। প্রায় ১৫ মিনিট ধরে এই ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনার পর হাজী ইয়াসিন ও মেয়র সাক্কু বক্তব্য রেখে উত্তেজিত জনতাকে শান্ত করেন বলে জানায় প্রত্যক্ষদর্শীরা। পুলিশ প্রথমে নীবর থাকলেও পরে মৃদু লাঠিপেটা করে বিএনপি কর্মী-সমর্থকদের সড়ক থেকে সরিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক করে। পদুয়ার বাজারে বিশৃঙ্খলার সময় দলের চেয়ারর্পাসন খালেদা জিয়া চান্দিনায় নির্ধারিত পথসভায় বক্তব্য রাখছিলেন।

এদিকে রোববার দুপুরে ফেনী পাইলট হাইস্কুল মাঠের জনসভাস্থলে সংঘর্ষের সূত্রপাত হলেও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় তা আশপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে বলে জানায় প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনকে চূড়ান্ত রূপ দিতে বিরোধী দলীয় নেতা খালেদা জিয়া সকাল ১০টায় ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম অভিমুখে রোডমার্চ শুরু করেছেন। ফেনীতে রোডমার্চের নির্ধারিত জনসভা রয়েছে, যেখানে খালেদা জিয়া বক্তব্য রাখবেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, রোডমার্চে নির্ধারিত জনসভার জন্য ফেনী পাইলট হাইস্কুল মাঠে মঞ্চ তৈরি করা হয়। দুপুর ১২টার দিকে মাঠে স্থান দখল করাকে কেন্দ্র করে ইসলামী ছাত্রশিবির ও ছাত্রদলের মধ্যে সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটে। এ সময় দুই পক্ষ একে অপরের দিকে চেয়ার ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। পরে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় তা কলেজ রোড, স্টেশন রোড, জেল রোডসহ আশপাশে ছড়িয়ে পড়ে এবং জনমনে আতঙ্ক দেখা দেয়।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত সাংবাদিকরা জানায়, সংঘর্ষে দুই পক্ষের বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে। দুপুরের পরও থেমে থেমে সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়।

আহতদের মধ্যে মোহনা টিভির জেলা প্রতিনিধি নাজমুল হক শামীম, জেলা ছাত্রদলের প্রচার সম্পাদক সালাহউদ্দিন মামুন, ছাত্রদল কর্মী সাইদুর রহমান শান্ত, মেজবাহ উদ্দিন, মুরাদ, কামাল, ফয়সাল এবং ছাত্রশিবিরের ফেনী শহর শাখার সভাপতি রাশেদুল হাসানের নাম জানা গেছে। এরা স্থানীয় বিভিন্ন ক্লিনিকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।পরে দুপুর আড়াইটার দিকে পরিবেশ শান্ত হলে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আব্দুল আওয়াল মিন্টুর সভাপতিত্বে জনসভা শুরু হয়।

জামায়াতের ফেনী শহর শাখার সেক্রেটারি আ ন ম আব্দুর রহিম আজকের বাংলাকে জানান, সকাল থেকে জামায়াত ও ছাত্রশিবিরের কর্মী-সমর্থকরা জনসভারস্থলে গিয়ে সামনের দিকে অবস্থান নেয়।

১২টার দিকে ছাত্রদলের একটি বিশাল মিছিল মাঠে প্রবেশ করে শিবির কর্মীদের ঠেলে সামনে যেতে চাইলে সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটে। ফেনী থানার ওসি নাজিম উদ্দিন আজকের বাংলাকে জানান, পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে।
ফেনীতে ছাত্রদল-শিবির সংঘর্ষের সময় বিএনপি চেয়ারর্পাসন খালেদা জিয়া চান্দিনায় নির্ধারিত পথসভায় বক্তব্য রাখছিলেন। কাছাকাছি সময়ে কুমিল্লার পদুয়ার বাজারেও বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় অন্তত ২০ জন আহত হয়। রোডমার্চ চট্টগ্রাম পৌঁছানোর পর সোমবার বিকালে পলোগ্রাউন্ড মাঠে সর্বশেষ জনসভায় বক্তব্য দেবেন বিএনপি চেয়ারপার্সন।

তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা ফেরানোর দাবিতে এর আগে গত বছরের অক্টোবর মাসে সিলেট ও উত্তরাঞ্চলের চাঁপাই নবাবগঞ্জ এবং নভেম্বরে খুলনা অভিমুখে রোড মার্চ করেন বিএনপি চেয়ারপার্সন।

তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা ফেরানোর দাবিতে ৬ বিভাগেই রোড মার্চ করার ঘোষণা থাকলেও পরে রংপুর ও বরিশালের কর্মসূচি বাতিল করা হয়।

পদুয়ার বাজারে বিশৃঙ্খলার সময় দলের চেয়ারর্পাসন খালেদা জিয়া চান্দিনায় নির্ধারিত পথসভায় বক্তব্য রাখছিলেন। এটি শেষ হওয়ার পর পদুয়ার বাজার পথসভায় ভাষণ দেবেন তিনি।

রোডমার্চ করে চট্টগ্রাম যাওয়ার পর সোমবার বন্দর নগরীর পলোগ্রাউন্ডে জনসভায় খালেদার নতুন কর্মসূচি ঘোষণার কথা রয়েছে।

গত বছরের অক্টোবর মাসে সিলেট ও উত্তরাঞ্চলের চাঁপাইনবাবগঞ্জ এবং নভেম্বরে খুলনা অভিমুখে রোডমার্চ করেন বিএনপি চেয়ারপার্সন। তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা ফেরানোর দাবিতে ৬ বিভাগেই রোড মার্চ করার ঘোষণা থাকলেও পরে রংপুর ও বরিশালের কর্মসূচি বাতিল করা হয়।

বিএনপি নেতারা বলছেন, চট্টগ্রাম রোডমার্চের মধ্য দিয়েই রোডমার্চ কর্মসূচির সমাপ্তি টানবেন খালেদা জিয়া। এরপর শুরু হবে সরকার পতনের চূড়ান্ত আন্দোলন।