দক্ষিণাঞ্চলের তিল রপ্তানি হচ্ছে বিদেশে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ তিল থেকে তেল হয়। এমন কথা সবারই জানা। কিন্তু উন্নত বিশ্বে ফাষ্ট ফুড আইটেমে তিল সবচেয়ে বেশি খাবার হিসেবে ব্যবহার করার কথা আমাদের অনেকের কাছেই অজানা। তিল থেকে যে আরো অনেক কিছুই উৎপাদন হয়। যেমন তিলের সুস্বাদু নাড়– সবার কাছেই মজাদার খাবার হিসেবে পরিচিত। তিলে রয়েছে অতি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন ভেষজগুন। বাংলাদেশের তিল এখন দেশের বাজার ছাড়িয়ে প্রক্রিয়ার জাতের মাধ্যমে রপ্তানি হচ্ছে বিদেশে। ফলে তিলের মাধ্যমেই দেশে আয় হচ্ছে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা। এমনই একটি তিল প্রক্রিয়ার করন মিল রয়েছে বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার নিমতলা নামকস্থানে।

জানা গেছে, বরিশালের একমাত্র তিল প্রক্রিয়াজাতকরণ মিল প্রতিষ্ঠান হচ্ছে আগৈলঝাড়ার নিমতলার ‘বরিশাল ডাল ও অয়েল মিল’। এ মিলটি উদ্বোধন থেকে গত নয় মাস যাবত চীন, কোরিয়া, ভিয়েতনামসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রক্রিয়াজাত করনের মাধ্যমে তিল রপ্তানি করা হচ্ছে। মিল মালিক  সুশান্ত মন্ডল ও বজলুর রহমান জানান, দেশের উত্তরাঞ্চলের মাগুরা জেলা থেকে মিলের শ্রমিকদের আনা হয়েছে। তাদের মিলে বর্তমানে ১৫ জন শ্রমিক কাজ করছেন। মিলের কর্মরত শ্রমিকেরা জানিয়েছেন, দক্ষিণাঞ্চলের ভোলা, পটুয়াখালী, গলাচিপা, ঝালকাঠি, আমতলী, খেপুপাড়া, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুরসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে পাইকারিভাবে তিল সংগ্রহ করা হয়। সংগৃহিত তিল তাদের মিলে যান্ত্রিকভাবে পরিশোধন করে বিশেষ প্রক্রিয়ায় বাজারজাত করণের উপযোগী করা হয়। এজন্য শ্রমিকদের মজুরি হিসেবে দেয়া হয় বস্তা প্রতি ৪০ টাকা করে। মিলের ১৫ জন শ্রমিক গড়ে প্রতিদিন ৩৫০ বস্তা তিল বাজারজাত করণের উপযোগী করে প্রস্তুত করতে পারেন। মিলে আমদানিকৃত বিভিন্ন প্রজাতির তিলের মধ্যে কালো তিল, লাল তিল ও সাদা তিল অন্যতম। এরমধ্যে কালো তিলের চাহিদা সবচেয়ে বেশি, ফলে এর দামও পাওয়া যায় ভাল। মিলের ব্যবসায়ী পটুয়াখালী জেলার দশমিনা থানার বেতাগী গ্রামের সুমন আহম্মেদ বলেন, এক বছর হল তিনি মিলের সাথে ব্যবসা করছেন। বছরের জুন মাস তাদের তিল আহরণের সর্বোত্তম সময়। এর আগে বছরের মার্চ থেকে মে মাস তাদের কাজ বন্ধ থাকে। কারন এ সময়ে বাজারে তিলের তেমন আমদানি থাকেনা। তারা বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে ও হাট-বাজার থেকে তিল ক্রয় করে থাকেন। গ্রাম বা হাট-বাজার থেকে প্রতি মন তিল ১৭’শ থেকে ১৮’শ টাকা দরে তারা ক্রয় করেন। বাজারে তেলের দাম বেশি হলে তিলের দামও বেড়ে যায়। তারা মন প্রতি ৫০ থেকে ১’শ টাকা লাভে ওই তিল মিলে বিক্রি করে থাকেন। তিল প্রক্রিয়াকরণের কাজ শেষে হওয়ার পর ট্রাকযোগে তা রপ্তানীর জন্য পাঠিয়ে দেয়া হয় চট্টগ্রামে। সেখান থেকে জাহাজে করে ওইসব তিল পাঠিয়ে দেয়া হয় চিন সহ বিভিন্ন দেশে। প্রধানতঃ ফুড আইটেম হিসেবেই বিদেশে তিলের সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয়ে আসছে। ফাষ্ট ফুড আইটেম ছাড়াও তেল হিসেবেও বিদেশে রয়েছে তিলের ব্যাপক চাহিদা। বিদেশে তিল রপ্তানীকারক প্রতিষ্ঠান স্যামস্ কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, বরিশাল ডাল ও অয়েল মিল থেকে তারা অর্ডারকৃত তিল প্রতি বস্তা দু’হাজার টাকা দরে ক্রয় করে থাকেন। তারা এ তিল বিভিন্ন দেশের চাহিদা অনুয়ায়ী রপ্তানী করেন। সূত্রে আরো জানা গেছে, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলসহ উত্তরাঞ্চলের খুলনা, কুষ্টিয়া, পঞ্চগর থেকেও তিল সংগ্রহ করে বিদেশে রপ্তানী করেন তারা। বরিশাল ডাল ও অয়েল মিল গত নয় মাস যাবৎ তিল রপ্তানী করে শ্রমিকদের কর্মসংস্থান করে শ্রমিকদের আর্থিক স্বচ্ছলতা বাড়িয়ে দেয়ার পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে আসছেন। সরকারিভাবে পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এমন আরো অনেক প্রতিষ্ঠান তৈরিসহ দেশে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে বড় ধরনের অবদান রাখতে পারবে বলে মিল মালিকেরা উল্লেখ করেন।