গাজীপুরে সীগাল পার্কে অনুষ্ঠান দেখাকে কেন্দ্র করে রণক্ষেত্র আহত শতাধিক

তুহিন আহামেদ, গাজীপুর ॥ গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার সীগাল পার্কে ঢাকার সাভার আশুলিয়া থেকে বনভোজন করতে আসা পোষাক শ্রমিকদের সঙ্গে কয়েকটি গ্রামের মানুষের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। শ্রমিক ও গ্রামবাসীর মধ্যে দফায় দফায় সংর্ঘষে ফলে পুরো পিকনিক স্পটে কয়েক ঘন্টার জন্য রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।

প্রত্যক্ষদর্শী সুত্রে জানা যায়,উপজেলার সিংগারদিঘী গ্রামের সীগাল নামক পিকনিক স্পটে শুক্রবার সন্ধ্যায় সাড়ে ৭টার দিকে ভয়াবহ ওই সংঘর্ষে ঘটনা ঘটে। সাভার আশুলিয়া থেকে আট হাজার পোষাক শ্রমিক ও আশ-পাশের গ্রামের কয়েক হাজার মানুষের মধ্যে ওই সংর্ঘষ জড়িয়ে পড়ে। পরে সিংগারদিঘী ছাড়াও আশ-পাশের কপাটিয়াপাড়া, চকপাড়া, আক্তাপাড়া, সংদিঘীসহ কয়েকটি গ্রামের মানুষ ওই সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এ সময় বিক্ষুব্ধ গ্রামের লোকজন ওই পার্কে থাকা বনভোজনে আসা শ্রমিকবাহী ৬০/৭০টি বাস ভাংচুর করে। এ সংঘর্ষের ঘটনায় উভয় পক্ষে দেড় শতাধিক লোকজন আহত হয়।

আহতদের মধ্যে গুরুতর অবস্থায় ৭০/৮০ জনকে মাওনা চৌরাস্তা আলহেরা, বিল্লাল মাস্টার,নোভা,একে মেমোরিয়াল ও ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এদের মধ্যে গ্রামবাসী ও পোষাক কারখানার শ্রমিক দু-গ্রুপের ১০ জনের অবস্থা আশংকাজনক।

গ্রামবাসী,শ্রমিক ও পুলিশ সুত্রে জানা যায়,ঢাকার আশুলিয়া এলাকার টুঙ্গাবাড়ি, কাঠগড়া ও জামগড়া গ্রামে অবস্থিত গ্রীনলাইফ গ্রুপের পাঁচটি পোষাক কারখানার প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার শ্রমিক-কর্মচারি শুক্রবার সকালে বার্ষিক বনভোজন হিসেবে  ওই সীগাল পার্কে আসেন। সারাদিন আনন্দ উল্লাস করে বনভোজনের শেষ পর্যায় ওই পার্কে মাঠে তাদের নিজেস্ব ব্যবস্থাপনায় একটি সাংকৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে কর্তৃপক্ষ। ওই সময় স্থানীয় ৫/৬ জন ছেলে অনুষ্ঠানে যেতে চাইলে শ্রমিকদের সঙ্গে তাদের রাগারাগি হয়। পরে স্থানীয় ওই ছেলেগুলো অনুষ্ঠানস্থল থেকে দুই শ্রমিককে ডেকে নিয়ে মারধর করে। একটু পরেই এ খবর হাজার হাজার শ্রমিকদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে অনুষ্ঠান শেষে প্রধান ফটক দিয়ে বের হওয়ার সময় স্থানীয় কয়েকটি ছেলেকে মারধর করে তারা। এ খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে শ্রমিকদের সঙ্গে গ্রামবাসীর সংঘর্ষ বাধে। এ সময় ওই পার্কের ভিতরে থাকা শ্রমিক ও তাদের শিশু সন্তানসহ আতংকে ছুটাছুটি করে। মুহুর্তের মধ্যে ওই সীগাল পার্ক রণক্ষেত্রে পরিণত হয়ে যায়। ওই পার্কে থাকা শ্রমিকবহন করা ৯০টি গাড়ির মধ্যে ৭০টি গাড়ি ভাংচুর করে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। এতে কারখানার ব্যাস্থাপনা পরিচালক আবু ফয়সাল মোসাব্বের সাইমন,সিইও পাকিস্তানের নাগরিক জাওয়াদ জালাল সাকিব,কর্মকর্তা ও গ্রামবাসীর মধ্যে কাউসার মাহমুদ,আবুল হোসেন,হাবিব,কুদ্দুস সহ নাম না জানা শতাধিক শ্রমিক ও এলাকাবাসী আহত হয়েছে।

স্থানীয় ছেলেদের মারধরের  খবর কয়েকটি এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে হাজারো গ্রামবাসী বিক্ষুব্ধ হয়ে শ্রমিকদের ওপর হামলা ও তাদের বহন করা গাড়ি ভাংচুর করে। এরপর হাজার হাজার গ্রামবাসী ওই পার্কে থাকা আট হাজার শ্রমিকদের অবরোধ করে ও তাদের গাড়ি ভাংচুর করে। রাত ১০টা পর্যন্ত ৪/৫ গ্রামের লোকজন শ্রমিকদের ওই পার্কে অবরোধ করে রাখে। খবর পেয়ে পুলিশ ও র‌্যাব ঘটনাস্থলে পৌঁছে প্রায় দুই ঘন্টা চেষ্টার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। পরে পুলিশ ও র‌্যাবের মধ্যস্থতায় রাত ১২টার দিকে তারা মুক্ত হয়ে নিজ নিজ গাড়িতে করে বাড়ি ফিরে যান।

এ ব্যাপারে শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমির হোসেন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন,শ্রমিকরা তাদের নিজ নিজ বাসে করে ফিরে গেছেন। ওই ঘটনায় কোনো মামলা বা কাউকে আটক করা হয়নি বলে জানান তিনি।