পুরুষ নির্যাতনঃ উৎসর্গ দেশের সমস্ত নির্যাতিত পুরুষদের

 

প্রিয় পাঠক বন্ধুরা আমার এই লেখা নারী নির্যাতনের পক্ষে নয়, নারী নির্যাতন কারীদের উৎসাহিত করার জন্যও নয়। যারা মায়ের জাতিকে নির্যাতন করে আমি তাদের গু খাওয়া কুকুরের চেয়েও বেশী ঘৃণা করি। তাদেরকে আমার মানুষ ভাবতেও ঘৃণা হয়। সর্বোপরি ঐ সব কুলাঙ্গার পুরুষদের জন্য নিজেকে পুরুষ বলে পরিচয় দিতে লজ্জা বোধ করি। আমি আমার লেখার মাধ্যমে শুধু এইটুকু বোঝাতে চাচ্ছি যে, খারাপ মন মানসিকতার লোকদের কোনো লিঙ্গ নেই। খারাপ যেমন একজন পুরুষ হতে পারে, তেমনি হতে পারে একজন নারীও। আমি কখনো একমত হতে পারি না যে শুধু নারীরা নির্যাতনের স্বীকার হয়, পুরুষ হয় না। পুরুষরাও ঘরে নীরবে নারী কর্তৃক নির্যাতিত হয়। আমি তার কিছু ঘটনা উল্লেখ করে আমার লেখার যৌক্তিকতা তুলে ধরার চেষ্টা করব। হয়তো সবাই আমার সাথে একমত হবেন না, আবার হয়তো কেউ কেউ হবেন। বেশী কথা না বলে মূল বিষয়ের দিকে আগানো যাক।

নারী নির্যাতন কি?
আমার মতে, নারীকে তার প্রাপ্ত অধিকার থেকে বঞ্চিত করা, তার স্বাধীনতা হরণ করা, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা, নিগৃহীত করা, সর্বোপরি নারী হিসাবে তাকে অবজ্ঞা করা। জ্ঞানী লোকেরা হয়তো আর ভাল এবং ব্যাপক ভাবে এর সংজ্ঞা দিতে পারবেন, আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে মনে হয় এই টুকুতে সমস্ত কিছু বুঝা যায়।

একজন নারী জীবনের শুরুতে থেকে নির্যাতিত হয়ে আসে। এটা শুরু হয় নিজের বাপের বাড়ি থেকে, শেষ হয় স্বামীর বাড়িতে এসে মৃত্যু অথবা অমানবিক নির্যাতনের পর বিচ্ছেদের মাধ্যমে অথবা কখনো আইনের মাধ্যমে।

নারী নির্যাতনের ধরন, ব্যাপ্তি বা ফলাফল নিয়ে আমি এখানে লিখতে চাইনা, কারণ এই নিয়ে পাঠকের আমার চেয়ে বেশী জ্ঞান আছে । পুরুষ নির্যাতনের ব্যাপারেও সবার জ্ঞান আমার চেয়ে পরিপক্ব, তারপরও কলম ধরলাম সাহস নিয়ে কারণ স্বজাতির এই মর্ম বেদনা নিয়ে কেউ লিখেনা বলে।

পুরুষতান্ত্রিক সমাজ বলে এটা মোটামুটি সিদ্ধ যে পুরুষরাই কেবল নারীকে নির্যাতন করে। তাই নারী মুক্তির জন্য গড়ে উঠে বিভিন্ন ধরনের সরকারী, বেসরকারী এনজিও সংস্থা। এরা নারী অধিকার আদায়ে আন্দোলনে নিয়োজিত থাকে, যদিও নিজের ঘরে অধিকার নাই। এমন কি রাষ্ট্রীয় ভাবেও আলাদা ভাবে মহিলা বিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। সম অধিকার আদায়ে নারী নেত্রীরা রাজপথে সভা-সমাবেশে সোচ্চার থাকে সব সময়। কিন্তু পুরুষরা দাম্ভিকতা দেখিয়ে ঘরে নারী নির্যাতন সয্য করে আর বাইরে এসে বলে নারী নির্যাতন বন্ধে সরকারকে ব্যবস্থা নিতে হবে। এইভাবে নারী নির্যাতন চলতে পারেনা। টিভি টক শো থেকে সেমিনারে, যেখানে যখন সুযোগ পায় নিজের নির্যাতনের কথা ভুলে গিয়ে, নারী নির্যাতনের বিষয়ে কথা বলে মুখে ফেনা তুলে বাসায় গেলে স্ত্রীর হাতে গাল মন্দ খেতে হবে সেই ভয়ে।

আমি এবার চেষ্টা করব পুরুষরা কীভাবে নির্যাতনের স্বীকার হয়। বন্ধু আমি দ্ব্যর্থহীনভাবে স্বীকার করে নিচ্ছি পুরুষরা শারীরিক ভাবে তেমন একটা নির্যাতনের স্বীকার হন না, কিন্তু মানসিক ভাবে প্রচুর নির্যাতনের স্বীকার হয়, সটা কয়েটা খন্ড ঘটনা দিয়ে বোঝাবার চেষ্টা করব।

১। আমি এখনো ভাই একা মানুষ স্ত্রী কি জিনিস বোঝার সু-বা দুর্ভাগ্য কোনটাই হয়নি। আমরা ১০/১২ জনের একটা ফ্রেন্ড সার্কেল ছিলাম, ৪/৫ জন ছাড়া বাকী সবাই বিবাহিত। এক সময় আমাদের আড্ডা চলত রাত ১১টা, কখন কখন ১২টা পর্যন্ত। কিন্তু এখন রাত ৮টা বাজলে আর কাউকে রাখা যায় না। কারণ বলে -“বিয়ে কর নাইত বউয়ের ঢেলা বুঝবে কি? বিয়ে কর তখন টের পাবা” – তার মানে কি, তার স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ? নারী স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করলে যদি নারী নির্যাতন হয় তাহলে পুরুষের বেলায় কেন পুরুষ নির্যাতন হবেনা? প্রিয় পাঠক কখন ভেবেছেন কি?

২। আপনার স্ত্রী যখন আপনার বেতনের স্বাস্থ্য সম্পর্কে জেনেও আপনার উপর চাপিয়া দিয়ে বলে আমাকে যেই করে হউক ১০০০০ টাকা দামের শাড়ী কিনে দিতে হবে, তখন কি আপনাকে মানসিক ভাবে নির্যাতন করা হয় না? আপনি যদি দিতে অপরাগতা প্রকাশ করেন তখন আপনার উপর যে মানসিক টর্চারটা হয় সেটা কি নির্যাতন না?

৩। আপনার বউ যখন কুঁকড়ানো চুল সোজা করার জন্য ৬০০০ থেকে ৮০০০ টাকা বায়না ধরে, আর আপনি দিতে না পারলে, গোমড়া মুখে বসে থেকে, আপনার সাথে খারাপ ব্যবহার করে সেটা কি নির্যাতনের মধ্যে পরে না?

৪। আপনার বাবা -মা আপনাকে অনেক কষ্ট করে লেখা পড়া শিখিয়ে বড় করেছে, কারণ বৃদ্ধ কালে আপনি যেন তাদের দেখা শুনা করেন। আপনাকে আজকের পর্যায়ে আনার জন্য আপনার বাবা-মার যে অবদান সেটা কি অস্বীকার করতে পারবেন? পারবেন না। আপনার বাবা মা আপনার সুখের জন্য দেখে শুনে(যদি আপনার নিজের পছন্দ না থাকে) একটা ভাল ঘরের মেয়ের সাথে আপনার বিয়ে দেয়, একটা সুন্দর সংসারের আশায়। বছর ঘুরতে না ঘুরতে যখন এই মেয়েটাই বলে -“আমার এখানে ভাল লাগে না চল আলাদা হয়ে যাই। তোমার বাবা-মার সাথে আমার পক্ষে থাকা সম্ভব না। তোমার ভাই-বোনের সাথে আমার বনিবনা হচ্ছেনা।” প্রতিদিন যদি এই রকম নানা ধরনের অভিযোগের কথা শোনেন, এবং শুনতে শুনতে আপনি যদি একদিন বিরক্ত হয়ে বাবা মার থেকে আলাদা হয়ে যান, তখন আপনার মানসিক অবস্থাটা চিন্তা করুন? আপনাকে যে ত্যক্ত-বিরক্ত করে বাবা-মার থেকে আলাদা করে নিয়ে এল, এটা কি নির্যাতন না? এর চেয়ে কঠিন এবং অমানুষিক নির্যাতন আর কি হতে পারে? বলুন বন্ধুরা আর কি হতে পারে? এটা কি শারীরিক নির্যাতনের চেয়ে কোন অংশে কম?

৫। আপনি বাজার থেকে নিজের পছন্দমত জিনিস কিনে এনেছেন, আপনার স্ত্রীর পছন্দ হল না, রেগে- মেগে আপনার চেহারা বরাবর ছুঁড়ে দিলেন, এটা কি নির্যাতন নয়?

৬। পরকীয়া বিবাহিত জীবনের এক অভিশাপ। পুরুষ এই কু-কর্মটি করলে যেমন নারীকে অপমানিত করা হয় ঠিক তেমনি নারী করলে পুরুষকে অপমানিত করা হয়। কিন্তু দুঃখের বিষয় পুরুষ করলে নারী নির্যাতন বলে কিন্তু নারী করলে কি পুরুষ নির্যাতন হয় না?

৭। আপনি কোথাও বেড় হবেন, নিজের পছন্দমত জামা-কাপড় পরেছেন, আপনার স্ত্রীর পছন্দ হলো না, তাহলে আর রক্ষা নেই, আপনাকে সেই জামা পরিবর্তন করতে হবেই, আপনার স্বাধীনতা এখানে ভূলুণ্ঠিত হবেই, এটা কি মানসিক নির্যাতন নয়?

৮। আপনার স্ত্রী আপনার আয় সম্পর্কে সম্পূর্ণভাবে ওয়াকিবহাল, তারপরও আপনাকে সব সময় উচ্চ আয়ের লোকের সাথে তুলনা করবে, তাঁদের সাথে তুলনা করে জিনিস পত্র কিনতে চাইবে বা কিনে দিতে বলবে, আপনার উপর মানসিক চাপ প্রয়োগ করবে, এটা কি নির্যাতন নয়?

প্রিয় পাঠক এই রকম আরো হাজার লুক্কায়িত নির্যাতন আছে যা নারীরা ঘরে নিরীহ পুরুষটির উপর করে, আর নিরীহ পুরুষটি নিতান্তই মান সম্মানের কথা ভেবে মুখে কুলুপ দিয়ে সয্য করে যায়। পুরুষ নির্যাতন বলে আন্দোলন করে না, সভা-সমাবেশ করে না। পুরুষকে উদ্ধারের জন্য সংগঠন গড়ে তুলে না। সরকারও পুরুষ বিষয়ক কোনো আলাদা মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করে না।

প্রিয় পাঠক বন্ধুরা আমাদের দেশে যে ধরনের শারীরিক ও মানসিক নারী নির্যাতন হয় সেটা কোনো সভ্য মানুষের কাম্য নয়। নারী নির্যাতনের এই মাত্রা মাঝে মাঝে এত ভয়াবহ হয় যে অনেকে মৃত্যু কোলে ঢলে পরে। অনেকের সুন্দর সাজানো সুখের সংসার হয়ে যায় নরক। আর এর প্রধান কারণ হল অবৈধ যৌতুক প্রথা।

আর একটা কথা না বলে পারছি না, আমাদের দেশে যে নারীরা নির্যাতন হয় তার প্রাথমিক সূচনা এই নারীরাই করে। দেখবেন আপনার স্ত্রীর সাথে আপনার মা বা বোনের যতটা কলহ লাগে তার চেয়ে অনেক কম লাগে আপনার ভাই বা বাবার সাথে। আপনার মা বা বোন দেখবেন সারাক্ষণ চেষ্টা করবে আপনার স্ত্রীর দোষ খোঁজার, যেটা আপনার বাবা বা ভাই খুব কম করে। দেখবেন শ্বশুর বাড়ি থেকে যৌতুক আনার কথাটাও প্রথম তুলবে আপনার মা। এখানেও কিন্তু প্রকারান্তরে পুরুষকে নির্যাতন করে এই নারীরা।

প্রিয় পাঠক বন্ধুরা আমরা আর কোন বোনকে নির্যাতিত দেখতে চাইনা, কোন সন্তানের মাকে যৌতুকের বলি হিসাবে দেখতে চায়না। চাইনা কোন বোনের এসিডে ঝলসানো মুখ দেখতে। কোন লাবণ্যময়ী স্ত্রীকে অধিকার আদায়ের জন্য তার প্রিয়তম স্বামীর বিরুদ্ধে আদালতে দেখতে চাই না। আমরা চাই বাংলাদেশের প্রতিটি ঘরে শান্তির সুবাতাস বহমান থাক সারাজীবন।

ঠিক পাশাপাশি আমরা চাইনা বাংলাদেশের ঘরে ঘরে পুরুষরা নারীদের দ্বারা নীরবে নির্যাতিত হউক। চাইনা কোন মেয়ের স্বেচ্ছাচারিতার কারণে পুরুষ তার বাবা-মাকে ছেড়ে আলাদা বাসায় থাকুক। দেখতে চাইনা বন্ধুরা স্ত্রীর ভয়ে আড্ডা থেকে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে যাক। দেখতে চাইনা পুরুষের স্বাধীনতা নারীর দ্বারা ভূলুণ্ঠিত হউক। তাই বলে পুরুষ স্বেচ্ছাচারি হবে তা কাম্য নয়। আমরা সবার মিলিত প্রয়াসে একটা সুন্দর সাজান বাগান গড়তে চাই। যেখানে অধিকার আদায়ের জন্য কোনো নারীকে রাজপথে প্লাকার্ড নিয়ে দাঁড়াতে হবে না। নারীর জন্য আলাদা মন্ত্রণালয় লাগবে না। যেন নজরুলের মত বলতে পারি-“এই পৃথিবীর যা কিছু সৃষ্টি কল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, আর অর্ধেক তার নর।”


 

Writer : স্বাধীন কামরুজ্জামান