বরিশালে খাঁচার মাধ্যমে মাছ চাষে স্বাবলম্বী হচ্ছে মেধাবী যুবসমাজ

নিজস্ব সংবাদদাতা ॥ বরিশাল জেলার বিভিন্ন উপজেলার নদ-নদীতে আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে খাঁচায় মাছ চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন একাধিক মেধাবী যুব সমাজ। মাছ চাষের আধুনিক এ প্রযুক্তিটির জনপ্রীয়তা দিন দিন বাড়ছে। সূত্রে পাওয়া তথ্যানুযায়ী জানাগেছে, বর্তমানে জেলায় ৬’শ ৬৩টি খাঁচায় মাছের চাষ করা হচ্ছে। প্রতিটি খাঁচা থেকে ৩ মাস অন্তর প্রায় ১টন মাছ উৎপাদন করা হয়।

জেলা মৎস্য ভবন সূত্র জানায়, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই দেশের মৎস্য সম্পদ উন্নয়ন ও উৎপাদনের মাত্রা বৃদ্ধি করতে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। ২০০৯ সাল থেকে জেলায় খাঁচায় মাছ চাষের উদ্যোগ গ্রহন করে মৎস্য ভবন। এ লক্ষ্যে মাছ চাষীদের নিয়ে বিভিন্ন মতবিনিময় সভা, সচেতনতা বৃদ্ধি ও কারিগরি বিষয়ের উপর প্রশিক্ষন দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া অগ্রানী ব্যাংকের মাধ্যমে মাছ চাষিদের জন্য বিশেষ ঋনের ব্যাবস্থা রয়েছে।

এব্যপারে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো: সামসুল করিম বলেন, সদর উপজেলায় খাঁচার মাধ্যমে মাছ চাষে চাষীদের উদ্বুদ্ধ করতে আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহন করেছি। মৎস্য ভবনের নিয়মিত প্রশিক্ষনের মাধ্যমে খাচায় যে কেউ মাছ চাষ করে লাভবান হতে পারেন। খাঁচার মধ্যে মাছ চাষের প্রক্রিয়া বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসে আরো সম্প্রসারিত করেছে। আগামী অর্থবছর মৎস্য ভবনের পক্ষ থেকে প্রায় ৫’শ খাচা মাছ চাষিদের দেওয়া হবে। তিনি আরো বলেন, খাঁচায় মাছ চাষে লাগসই কারিগরী প্রযুক্তি প্রয়োগে জনসমষ্টিকে টেকসই সেবা প্রদান করাই আমাদের লক্ষ্য। খাঁচার মাধ্যমে মাছ চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছে জেলার অনেক বেকার যুবসমাজ। বর্তমানে জেলার বেকার সমস্যা সমাধানে খাঁচায় মাছ চাষ গুরুত্বপুর্ন ভুমিকা রাখছে বলে তিনি মনে করেন।

উজিরপুর উপজেলার সফল মাছ চাষি আবুল কালাম বলেন, সন্ধ্যা নদীতে তার ৪০টি মাছের খাঁচা রয়েছে। এসব খাঁচায় তিনি তেলাপিয়া ও পাঙ্গাস মাছের চাষ করেন। উৎপাদন খরচ বাদ দিয়ে গত মৌসুমে তার লাভ হয়েছে লাখ টাকার উপরে।

অপরদিকে, সদর উপজেলার মাছ চাষি নূরে আলম বলেন, বিগত বছরে তিনটি পুকুর লিজ নিয়ে মাছ চাষ শুরু করি। কিন্তু অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতে পুকুরের সব মাছ ভেষে যায়। তাই এবছর কির্তনখোলা নদীতে খাঁচার মাধ্যমে মাছ চাষ শুরু করেছি। মৎস্য ভবন থেকে মাছ চাষের বিষয়ে প্রশিক্ষন নিয়েই এবার খাঁচার মাধ্যমে মাছ চাষ শুরু করেছি। আশা করি সফল হবো।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ওহিদুজ্জামান বলেন, ২০০৯ সাল থেকে জেলায় সরকারিভাবে খাঁচায় মাছ চাষ আরম্ভ করা হয়। প্রতিবছরই খাঁচার সংখ্যা বাড়ছে। এসব খাঁচায় তেলাপিয়া, পাঙ্গাস, রুই, মৃগেল ও কার্প জাতীয় মাছের চাষ করা হয়। তিনি বলেন, বর্তমানে সবচে বেশি খাঁচায় মাছ চাষ হয় উজিরপুর জেলায়। তবে অল্প সময়ে অধিক লাভের জন্য চাষিরা হাইব্রীড তেলাপিয়া ও পাঙ্গাস মাছের চাষ বেশি করছে বলে তিনি জানান।

মৎস্য কর্মকর্তারা আরো জানান, সাম্প্রতিক সময়ে খাঁচায় মাছ চাষ করে লাভের মুখ দেখায় অনেকেই এখন খাঁচায় মাছ চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছে। ২০ফুট লম্বা, ১০ফুট চওড়া ও ৬ফিট উচ্চতার এসব খাঁচায় নিয়মিত পরিচর্যার মাধ্যমে খুব দ্রুত মাছ বড় হতে থাকে। মাত্র দেড় থেকে দুই মাসে এসব মাছ বিক্রির উপযোগী হয়ে উঠে। তাই খাঁচায় মাছ চাষের জনপ্রীয়তা দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বরিশালে খাঁচার মাধ্যমে মাছ চাষে স্বাবলম্বী হচ্ছে মেধাবী যুবসমাজ