ওমরাহ করতে সৌদি আরব যাচ্ছেন তারেক রহমান

নিজস্ব সংবাদদাতা ॥ প্রথমবারের মতো যুক্তরাজ্যের বাইরে গেলেন বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ২৯ মার্চ বৃহস্পতিবার ভোর রাতে এক সফরে তিনি সৌদি আরবের উদ্দেশ্যে লন্ডন ছেড়েছেন। তাঁর সফর সঙ্গী হিসেবে রয়েছেন স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমান ও কন্যা জাইমা রহমান। সৌদি আরবে তাঁদের হজ্ব পালনের কথা রয়েছে। যুক্তরাজ্য বিএনপির প্রথম সারির কোন নেতাকে সঙ্গে না নিলেও আজ কালকের মধ্যে একাধিক নেতা সৌদি আরবের উদ্দেশ্যে যাত্রা করবেন বলে জানা গেছে। যুক্তরাজ্যে তারেক রহমানের ঘনিষ্ট ও নির্ভরযোগ্য কিছু সূত্র এসব তথ্য নিশ্চিত করে।

২০০৮ সালের ১২ সেপ্টেম্বর চিকিৎসার জন্য গুরুতর অসুস্থ্য অবস্থায় লন্ডনে আসেন তারেক রহমান । প্রায় ৫ বছর ধরে লন্ডনে অবস্থান করলেও কখনো প্রকাশ্যে জনসম্মুখে আসেননি তিনি। একান্ত জরুরী প্রয়োজন না হলে তিনি বাইরে বের হচ্ছেন না। ২০১০ সালে যুক্তরাজ্য বিএনপির সাবেক সভাপতি মরহুম কমর উদ্দিনের জানাযায় ও গত বছরের সেপ্টেম্বরে মরহুমের মেয়ের বিবাহ অনুষ্ঠানে তাঁকে উপস্থিত হতে দেখা যায়। বিশেষ কারণেই আপাতত প্রকাশ্যে আসছেন না তারেক। দিনের বেশিরভাগ সময়ই পত্র-পত্রিকা আর বই পড়ে সময় কাটান তিনি।
মাঝে মাঝে পারিবারিক প্রয়োজনে স্ত্রী কন্যাকে নিয়ে বাইরে যান। সবকিছুতেই এখন তাঁর আগের চেয়ে সজাগ দৃষ্টি। তাঁকে নিয়ে যেন কোন বিতর্ক সৃষ্টি না হয় সে ব্যাপারে খুবই সতর্ক তিনি।

সূত্র জানায়, প্রকাশ্যে জনসস্মুখে না আসলেও যুক্তরাজ্যে বসবাসরত তারেক রহমানের ঘনিষ্ট কয়েকজন বন্ধু ও যুক্তরাজ্য বিএনপির প্রথম সারির দুই নেতার নির্বিঘ্নে যাতায়ত রয়েছে তারেকের বাসায়। আর বাংলাদেশ থেকে তার আইনজীবি ও বিশ্বস্থ্ কয়েকজন বিএনপি নেতা নিয়মিত লন্ডনে এসে তাঁর সাথে দেখা করছেন । এছাড়া আর কেউই যোগাযোগ রাখতে পারছেন না তাঁর সঙ্গে। নানাকারণে অনেকটা আড়ালে থাকলেও বিএনপি হাইকমান্ডের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রয়েছে তাঁর।

তারেক জিয়া তাঁর ঘনিষ্টদের জানান, জিয়াউর রহমান দেশের প্রেসিডেন্ট ছিলেন, বেগম খালেদা জিয়া তিনবারের প্রধানমন্ত্রী। তাঁর প্রেসিডেন্ট বা প্রধানমন্ত্রী হবার ইচ্ছা নেই। তিনি মানুষের ভালবাসা নিয়েই বাকি জীবন কাটিয়ে দিতে চান। তিনি জানান, ১/১১ এর সময় তাঁকে নিয়ে যে ষড়যন্ত্র হয়েছে, সে ষড়যন্ত্রের খেলা এখনও দেশে বিদেশে অব্যাহত আছে।
সুত্র জানায়, ২০০৮ সালে লন্ডনে আসার পর হতে অতি গোপনীয়তার সাথে কুটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে গেলেও গত বছরের শেষের দিকে রাজনৈতিক আশ্রয় পাবার পর অনেকটা নড়েচড়ে বসেছেন তারেক রহমান। সম্প্রতি দেশের সংকটময় পরিস্থিতিতে দেশে ফেরার জন্য অস্থির হয়ে পড়েছেন তিনি। বিশেষ করে রাষ্ট্রপতি জিল্লূর রহমানের মৃত্যুর পর নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে দেশের রাজনীতি নতুন মোড় নিতে পারে বলে মনে করছেন তিনি । 

দেশে ফিরে গেলে যাতে তাঁকে রাজনৈতিক হয়রানি করা না হয় সে লক্ষ্যে কাজ করছে একটি টিম। কুটনৈতিক ও আইনজীবির সমন্বয়ে গঠিত এই টিম যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও মধ্যপ্রাচ্যের শীর্ষ পর্যায়ে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে। ইতিমধ্যে যুক্তরাজ্যের শীর্ষ পর্যায়, বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা ও মধ্যপ্রাচ্যের একাধিক দেশ তারেক রহমান দেশে ফিরে গেলে যাতে অযথা ও বেআইনীভাবে হয়রানি করা না হয়, সে লক্ষ্যে ইতিবাচক পদক্ষেপ নিবে বলে জানিয়েছে। এ ব্যাপারে সৌদি সফরকালে তারেক রহমানের উপস্থিতিতে একটি বৈঠকও হবার কথা রয়েছে। ইতিপূর্বে বাংলাদেশ থেকে বিএনপির উপদেষ্টা পর্যায়ের এক ব্যক্তি ও একাধিক বিএনপি নেতা সৌদি আরব পৌঁছেছেন বলে জানা গেছে। তারেক রহমানের ঘনিষ্ট সূত্র এসব তথ্য জানায়।
বাংলাদেশে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে এক ডজনেরও বেশী মামলা চললে এ নিয়ে ভীত নন তিনি। প্রকৃত আইনী প্রক্রিয়ায় মামলা চললে তিনি আইনগতভাবে মামলা মোকাবেলার সাহস রাখেন। তারেক রহমান চাইছেন, দেশে ফেরার পর যেন তাকে অহেতুক হয়রানি করা না হয়। অন্যান্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে এ ব্যাপারে আশ্বাস পেলে খুব শীঘ্রই দেশে ফিরবেন তারেক।

বাংলাদেশে সকল দলের অংশগ্রহনে একটি অবাধ সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন না হলে তা যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না বিভিন্ন শীর্ষ পর্যায় থেকে তা ইতিমধ্যে তারেক রহমানকে আশ্বস্থ্য করা হয়েছে। বাংলাদেশে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতায় ব্যথিত তারেক রহমান। তিনি জাতীয় স্বার্থে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ইস্যূ নিয়ে সংলাপ অতিব জরুরী বলে মনে করেন। তিনি মনে করেন দেশের জন্য জিয়াউর রহমান শহীদ হয়েছেন, বেগম খালেদা জিয়া প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে কষ্ট করে যাচ্ছেন । তিনি বিনা অপরাধে এতো শাস্তি পেয়েছেন, আজও বহুদুর পরবাসে পড়ে থাকতে হচ্ছে। এসব বিচারের ভার তিনি বাংলাদেশের জনগনের কাছেই দিতে চান।