যুবলীগ-যুবদল ভাই ভাই অবৈধ ব্যবসায় দল নাই

মোঃ গিয়াস উদ্দিন মিয়া ॥  বরিশালের গৌরনদী উপজেলার তিন যুবলীগ ও চার যুবদল নেতারা আড়িয়াল খাঁর শাখা পালরদী নদীর আড়াই কিলোমিটার জায়গায় সাতটি ড্রেজিং মেশিন বসিয়ে দিনরাত নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে তা বিক্রি করে হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা। বালু উত্তোলনের ফলে ইতোমধ্যে জনগুরুতপূর্ণ গৌরনদী থেকে টরকী সড়কের অধিকাংশ এলাকার সড়ক ভেঙ্গে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। হুমকির মুখে পরেছে নদীর টরকী বন্দর এলাকার বড় ব্রিজ ও বড় কসবা আবাসন প্রকল্পটি।

সরেজমিন ঘুরে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, পালরদী নদীর আড়াই কিলোমিটার এলাকায় প্রভাবশালী যুবলীগ ও যুবদল নেতারা সাতটি ড্রেজিং মেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করেছে। স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, গত তিন মাস ধরে অব্যাহতভাবে দিনরাত অবৈধভাবে গৌরনদী উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক কমিটির সদস্য সলেমান হাওলাদার, রনি খান, ইমাম ও গৌরনদী উপজেলা যুবদলের সদস্য এম.এ গফুর সরদার, নান্নু খান, খোকন খান ও সালাউদ্দিন এ বালু উত্তোলন করে বিক্রি করছেন। বড় কসবা গ্রামের আঃ রশিদ, জাহাঙ্গীর হোসেন, রমজানপুর গ্রামের জানে আলমসহ অনেকেই জানান, গত তিন মাস ধরে সাতটি মেশিন দিয়ে অবিরাম বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। ফলে ইতোমধ্যে নদীর পাড়সহ টরকী-গৌরনদীর জনগুরুতপূর্ণ সড়কটির বিভিন্ন অংশে ভেঙ্গে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। রমজানপুর গ্রামের আকতার হোসেন, উত্তর রমজানপুর গ্রামের বশির আহম্মেদ, মশিউল আলম জানান, বরিশাল এলজিইডি বিভাগ থেকে বিগত ১৯৯৯-২০০০ অর্থ বছরে আড়াই কোটি টাকা ব্যয়ে টরকীরচর এলাকায় গৌরনদী-কালকিনি সংযোগ ব্রিজ নির্মান করা হয়। ব্রিজ সংলগ্ন নদী থেকে অবৈভভাবে বালু উত্তোলন করায় বর্তমানে ব্রিজটি চরম হুমকির মুখে রয়েছে। বড় কসবা গ্রামে সরকারিভাবে নির্মিত আবাসন প্রকল্পের সভাপতি আবুল কাসেম অভিযোগ করেন, প্রভাবশালীদের ড্রেজিং মেশিন লাগিয়ে বালু উত্তোলনে তাদের আবাসন প্রকল্পের পশ্চিম পাশে ইতোমধ্যে ভাঙ্গন শুরু হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, যুবদল নেতা এম.এ গফুর ও যুবলীগ নেতা সলেমান হাওলাদারের লোকজন মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করছে। এছাড়া কিছু দুরত্বে অন্য মেশিনগুলো দিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। নদীর দু’পাশে বিভিন্ন পয়েন্টে বালু স্তুপ করে রাখা হয় যা ট্রাকে করে বিভিন্নস্থানে সরবারহ করা হয়। কোন কোন মেশিনে সরসরি নদীতে রাখা ট্রলারে বালু ভর্তি করা হচ্ছে। মেশিনে কর্মরত শ্রমিকদের সাথে কথা বলতে চাইলে তারা এ বিষয়ে কোন কথা বলতে অপরাগতা প্রকাশ করে বলেন, যদি কোন কথা থাকে তাহলে মালিকদের সাথে কথা বলুন। গৌরনদী-টরকী সড়কের পাল পাড়ায় দেখা গেছে, ৮ ফুট চওড়া সড়কটির প্রায় ৫ফুট ভেঙ্গে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়া সড়কের বিভিন্ন অংশে ইতোমধ্যে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। স্থানীয় আলমগীর তালুকদার, জরিনা বেগম, রাসু বেগম, রেবা বেগম, নিলুফা বেগমসহ অনেকেই অভিযোগ করেন, প্রভাবশালী যুবলীগ ও যুবদল নেতাদের বালু উত্তোলনে বাঁধা দেয়া হলে তারা তাদের বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতিসহ হুমকি প্রদান করে।

অবৈধ বালু উত্তোলন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে যুবদল নেতা এম.এ গফুর সরদার, সালাউদ্দিন হাওলাদার, নান্নু খান ও খোকন খান বলেন, বালু উত্তোলনে নদীর কোন ক্ষতি হচ্ছে না। সলেমান হাওলাদার ও ইমাম হোসেন বলেন, বালু তোলায় ভরাট নদী খনন হয়, এতে ক্ষতি কি বরং সরকারের উপকারই হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী বলেন, কোন নদী থেকে বালু উত্তোলন সম্পূন অবৈধ। বিষয়টি সম্পর্কে তিনি নিজেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবেন বলেও উল্লেখ করেন।