স্বস্তির বৃষ্টি ॥ আউশ চাষীদের জন্য আর্শীবাদ

প্রেমানন্দ ঘরামী ॥  চৈত্রের প্রচন্ড খরতাপে পানির অভাবে মাঠ-ঘাট ফেঁটে যখন চৌঁচির হয়ে গিয়েছিলো তখন একপ্রকার আউশ চাষের আশা ছেড়েই দিয়েছিলেন বরিশালসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলের হাজার-হাজার চাষীরা। হতাশা দেখা দিয়েছিলো রবিশ্যষের চাষীদেরও। এরইমধ্যে বৈশাখের আগমনের পর এসব এলাকায় চাষীদের জন্য আর্শীবাদ নিয়ে এসেছে বৃষ্টি। গত তিনদিন থেকে বৃষ্টি শুরু হওয়ায় পর আউশ চাষীদের মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে। শীতল বৃষ্টিতে প্রাণ ফিরে পেয়েছে পানির অভাবে ফেঁটে যখন চৌঁচির হওয়া শুষ্ক জমি। ফলে বর্তমানে গোটা দক্ষিণাঞ্চলের কৃষকদের মাঝে দেখা দিয়েছে খুশির আমেজ। পুরোদমে শুরু হয়ে গেছে আউশ চাষের প্রস্তুতি। 

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এবার জেলায় মোট ৩৫ হাজার ১৭৭ হেক্টর জমিতে আউশ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সম্ভাব্য এই লক্ষ্যমাত্রা সামনে রেখে ইতোমধ্যে আউশ আবাদের পদ্ধতি, সুষম সার, গুটি ইউরিয়া ও জৈব সার ব্যবহারের উপকারিতা, আলোক ফাঁদ ব্যবহার, রোগ-বালাই ব্যবস্থাপনা, আগাছা দমনসহ বিভিন্ন বিষয়ের ওপর কৃষকদের নিয়ে সভা ও সেমিনার করা হয়েছে। সূত্রে আরো জানা গেছে, আবহাওয়া অনূকুলে না থাকায় এতোদিন বৃষ্টিপাত না থাকায় আউশ ধান আবাদে কৃষকদের বেগ পেতে হয়েছিলো। অবশেষে গত তিনদিন থেকে প্রশান্তির বৃষ্টির মাধ্যমে মাটি নরম হওয়ায় স্বস্তি ফিরে আসে কৃষককুলের মাঝে। ফলে বর্তমানে আউশ আবাদে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন কৃষকেরা।

বরিশালের কৃষকদের বন্ধু গৌরনদী উপজেলা উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা মোঃ সিরাজুল ইসলাম সিরাজ বলেন, সাধারণত দক্ষিণাঞ্চলীয় জেলাগুলোতে অনেকটা বৃষ্টির ওপর নির্ভর করেই আউশ ধানের চাষ করা হয়। কারণ শুষ্ক মৌসুমে ডিজেল ক্রয় করে সেচ যন্ত্রের মাধ্যমে জমিতে নিয়মিত সেচ দেয়া অনেক কৃষকের পক্ষেই সম্ভব হয় না। তাই অসংখ্য কৃষককে প্রকৃতির ওপর নির্ভর করতে হয়। আর বৃষ্টির মাধ্যমে গাছের পাতা ধুয়ে মুছে রোগ-বালাই ও পোকা-মাকড় পরিষ্কার হয়ে যায়। তিনি  আরো বলেন, এবার বহু প্রতীক্ষিত বৃষ্টির কল্যাণে গতি ফিরে পেয়েছে জেলার আউশ চাষ।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সূত্রমতে, বরিশাল জেলায় এবার মোট আউশ আবাদের লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে রয়েছে উফশী ১৫ হাজার ৮৭ হেক্টর ও স্থানীয় জাত ২০ হাজার ৯০ হেক্টর। এরমধ্যে সদরে লক্ষ্যমাত্রা ৫ হাজার ৪২৫ হেক্টর, বাবুগঞ্জে ৬’শ ২৫ হেক্টর, উজিরপুরে ৩’শ ৩৭ হেক্টর, বাকেরগঞ্জে ১৪ হাজার ৮৪৪ হেক্টর, গৌরনদীতে ৪’শ ৫৮ হেক্টর, আগৈলঝাড়ায় ১ হাজার ৮৩০ হেক্টর, মুলাদীতে ২ হাজার ৮৬ হেক্টর, হিজলায় ২ হাজার ৬৫৫ হেক্টর, মেহেন্দীগঞ্জে ৬ হাজার ৩০৫ হেক্টর ও বানরীপাড়ায় ৬১২ হেক্টরসহ মোট ৩৫ হাজার ১৭৭ হেক্টর।

একাধিক কৃষকেরা জানিয়েছেন, ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি ও ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে জমিতে সময়মত সেচ দিতে না পারায় প্রতিবছরই আউশ আবাদে সমস্যায় পড়তে হয় তাদের। একদিকে প্রখর রৌদ্রের তাপ অন্যদিকে কচি আউশের চারা নিয়ে বিপাকে পড়তে হয়। কিন্তু গত তিন দিনের বৃষ্টিপাতে মাটি অনেক নরম হয়ে আছে। তাই অনেকটা নির্বিঘেœ বর্তমানে তারা আউশ আবাদ শুরু করেছেন। সদর উপজেলার আউশ চাষী ফরিদ হাসান, বুলবুল মিয়া, ফিরোজ রহমান জানান, নিয়মিত জমিতে সেচ দিয়ে আউশ আবাদ করা তাদের পক্ষে সম্ভব হয় না। এবার চৈত্র মাসে কোন বৃষ্টি না হওয়ায় তারা আউশ চাষ নিয়ে মহাদুচিন্তায় পরেছিলেন।  অবশেষে স্বত্তির বৃষ্টির ধারায় হাঁসি ফুটেছে তাদের মুখে। বাকেরগঞ্জের কৃষক জিন্নাত আলী বলেন, আউশ চাষের জন্য আমরা সবাই বৃষ্টির অপেক্ষায় ছিলাম। অবশেষে বৃষ্টি হওয়ার পর স্বস্তি ফিরে এসেছে। কৃষক এনায়েতউল¬াহ জানান, তিনি এক একর জমি আউশ আবাদের জন্য নির্ধারণ করেছেন। কিন্তু চৈত্রের খরতাপের কারণে আবাদ শুরু করতে পারেননি। অবশেষে বৃষ্টি হওয়ায় এখন তিনি জমিতে আউশ আবাদে ব্যস্ত হয়ে পরেছেন।

জেলা আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র অবজার্ভার মোঃ ইউসুফ আলী বলেন, এখন বৃষ্টির সময় না। জ্যৈষ্ঠ মাস থেকে মূলত বৃষ্টিপাত আরম্ভ হয়। তারপরেও গত কয়েকদিন যাবৎ বরিশাল এলাকায় বৃষ্টিপাত হয়েছে। বৈশাখের বাকি দিনগুলোতে থেমে থেমে ঝড়ো কিংবা দমকা হাওয়ার সাথে হাল্কা থেকে মাঝারি অথবা ভারি বৃষ্টিপাত হতে পারে বলেও তিনি উল্লে¬খ করেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্ভিদ সংরক্ষণ বিশেষজ্ঞ রমেন বড়াই বলেন, বরিশাল জেলায় আউশ আবাদ শুরু হয়েছে। বৃষ্টিপাত হওয়ায় জমির মাটি অনেক নরম হয়ে আছে। এতে এবার কৃষকদের জন্য আউশ আবাদ অনেক সহজ হয়েছে। আগামি মাসের মধ্যে জেলায় আউশ আবাদ কার্যক্রম সম্পন্ন হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।