বাবুগঞ্জে হাইস্কুল এন্ড কলেজের ভবন ধ্বসে প্রাণহানির আশংকা

এনায়েত হোসেন মুন্না, বাবুগঞ্জ থেকে ফিরে ॥  বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার প্রায় শত বছরের পুরানো ঐতিহ্যবাহী মাধবপাশা চন্দ্রদ্বীপ হাইস্কুল এন্ড কলেজের ভবনটি যেকোন মুহুর্তে ধ্বসে পরে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের প্রাণহানির আশংকা দেখা দিয়েছে। দীর্ঘ আট বছর পূর্বে ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হলেও জরাজীর্ন ভবনটিতেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাঠদান করাচ্ছেন স্কুল এন্ড কলেজ কর্তৃপক্ষ।

সংশ্লিষ্ট ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, তৎকালীন বাংলার বার ভুইয়াদের এক ভুইয়া রাজা কন্দর্প নারায়ন রায় ১৯২৬ সনের ৮ জানুয়ারি বাবুগঞ্জ উপজেলার ঐতিহ্যবাহী মাধবপাশায় চন্দ্রদ্বীপ হাইস্কুল ভবনটি নির্মান করেন। তৎকালীন সময়ের ১৯২৭ সনের ৫ জানুয়ারি কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি মাধবপাশা চন্দ্রদ্বীপ হাইস্কুলটি সরেজমিনে পরিদর্শন করে বিদ্যালয়টির স্বীকৃতি দেন। ঐতিহ্যবাহী মাধবপাশা চন্দ্রদ্বীপ হাইস্কুলের প্রায় শত বছরের পুরাতন প্রতিষ্ঠানের ভবনটির অবকাঠামোর তেমন কোন উন্নয়ন হয়নি।ওই স্কুলের মুল ভবনটি ৮০বছর পূর্বে নির্মিত হয়। এরইমধ্যে গত আট বছর পূর্বে বরিশালের প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রকৌশলীরা সরেজমিন পরিদর্শন করে বিদ্যালয়ের মূল ভবনটি ব্যবহারের অনুপযোগী (পরিত্যক্ত) ঘোষনা করেন। গত ২০০২ সনে মাধবপাশা হাইস্কুলের সাথে কলেজের কার্যক্রম শুরু হয়। হাইস্কুল এন্ড কলেজের কার্যক্রম শুরু হলেও শিক্ষার্থীদের পাঠদান করানোর জন্য ওই ঝুঁকিপূর্ন ভবন ছাড়া অন্যকোন ভবন কিংবা আসবাবপত্র জোটেনি স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ভাগ্যে। বর্তমানে মাধবপাশা হাইস্কুল এন্ড কলেজের প্রায় সহস্রাধিক শিক্ষার্থীরা পরিত্যক্ত ঝুঁকিপূর্ণ ভবনেই প্রতিনিয়ত পাঠদান করে আসছে।
সূত্রে আরো জানা গেছে, প্রায় ১১বছর পূর্বে মাধবপাশা হাইস্কুলের সাথে কলেজের কার্যক্রম শুরু করা হলেও এর জন্য আলাদা কোন ভবন কিংবা আসবাবপত্র না থাকায় হাইস্কুল এন্ড কলেজ কর্তৃপক্ষ শিক্ষক ও শির্ক্ষাীথীদের নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন। বিদ্যালয়ের ওই পুরাতন ভবনটির ছাদ ধ্বসে পড়ছে, চারিদিকের দেয়ালের পলেস্তার ও ইট খসে পরে ইতোমধ্যে ছোট-বড় অসংখ্য দুর্ঘটনাও ঘটেছে।

কলেজ অধ্যক্ষ প্রনব কুমার জানান, মাধবপাশা হাইস্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা ফলাফলের দিক দিয়ে অনেক এগিয়ে রয়েছে। সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে শিক্ষাকে পাঁচ স্তরে ভাগ করা হয়। এরমধ্যে বরিশাল শিক্ষাবোর্ডে ঐতিহ্যাবাহী মাধবপাশা হাইস্কুল এন্ড কলেজ দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। পরীক্ষার ফলাফলের দিক দিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি এগিয়ে থাকলেও জরার্জীর্ন ও অধিক ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের কারনেই প্রতিষ্ঠানটি রয়েছেন অনেকটা পিছিয়ে। নতুন ভবন র্নিমানের জন্য ইতোমধ্যে একাধিকবার সংশ্লিষ্ট বিভাগে আবেদন-নিবেদন করেও কোন সুফল মেলেনি। অধ্যক্ষ আরো জানান, প্রতিনিয়ত অধিক ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে পাঠদান করার সময় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা ছোট-বড় দূর্ঘটনার স্বীকার হচ্ছেন। এহেন পরিস্থিতিতে আসছে বর্ষা মৌসুমকে সামনে রেখে তাদের দুশ্চিন্তা আরো বেড়ে গেছে। যেকোন মুহুর্তে ভবনটি ধ্বসে পরে বড় ধরনের দূর্ঘটনার আশংকা দেখা দিয়েছে। তিনি জরুরি ভিত্তিতে পরিত্যক্ত ভবনটি ভেঙ্গে নুতন ভবন নির্মানের জন্য প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী ও সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন।

উল্লেখিত ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে স্থানীয় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব গোলাম কিবরিয়া টিপু বলেন, শিক্ষা-দিক্ষায় এগিয়ে থাকা মাধবপাশা হাইস্কুল এন্ড কলেজের ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ থেকে এখন ভয়ংঙ্করে রূপ নিয়েছে। স্কুল ও কলেজের জরাজীর্ন ভবনে শিক্ষকরা প্রতিনিয়ত আতংকের মাঝে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করাচ্ছেন। তেমনি শিক্ষার্থীরাও রয়েছেন চরম আতংকে। বিষয়টি সরকারের সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।