ইজারাবিহীন ব্যবস্থাপনায় বদলে গেছে সদরঘাটের চিত্র

বদলে গেছে সদরঘাটের চিত্র। নেই কোন লাগেজ টানাটানি। নেই কোন কুলির দৌরাত্ম্য, যাত্রী হয়রানি, জুলুম। হকার নেই পন্টুনে। যাত্রী সচেতনতা-নির্দেশনামূলক রং-বেরং-এর ফেস্টুন, ব্যানার ঝুলছে সারা টার্মিনালে। যাত্রীদের উদ্দেশ্যে চলছে মাইকিং, বিলি করা হচ্ছে লিফলেট, কুলির রেট চার্ট টানিয়ে দেয়া হয়েছে প্রতিটি গেটে। আকাশী রংয়ের পোশাকে নম্বরযুক্ত কুলিরা দাঁড়িয়ে আছে গেটে গেটে। কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে চলছে মনিটরিং টিমের কার্যক্রম। যেখানেই কোন সমস্যা, ছুটে যাচ্ছে বিআইডব্লিউটিএ’র বিশেষ টিমের কর্মকর্তাবৃন্দ। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন টার্মিনাল, এ যেন অন্য রকম এক সদরঘাট। যাত্রী হয়রানি বন্ধের উদ্দেশ্যে শ্রম যার মজুরি তার নীতিতে গত ১ জুলাই থেকে সদরঘাট নৌ-টার্র্মিনালে চলছে ইজারাবিহীন শ্রম ব্যবস্থাপনা। নানা পর্যায়ে মত বিনিময় শেষে সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাহজাহান খান এমপি ১ জুলাই আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেছেন এই শ্রম ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি। নতুন এই ব্যবস্থাপনা থেকে যাতে কোনক্রমেই পিছু হটতে না হয় তার জন্য সার্বক্ষণিক তদারকি করছেন, খোঁজ-খবর রাখছেন বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুল মালেক মিয়া।
বুড়িগঙ্গাকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা ঢাকা শহরের সভ্যতা, সংস্কৃতি, ব্যবসা-বাণিজ্য সব কিছুরই গোড়াপত্তন হয় সদরঘাট এলাকাকে ঘিরে। মোঘল যুগ থেকে শুরু করে ব্রিটিশ আমলের অনেক ঐতিহাসিক নিদর্শন রয়েছে সদরঘাট এলাকায়। ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় নৌ-পথে যাতায়াতকারী যাত্রীসাধারণের উন্নত ও আধুনিক সেবা প্রদান এবং সুষ্ঠু বন্দর ব্যবস্থাপনার জন্য ১৯৬৭ সালে বিআইডব্লিউটিএ সদরঘাট নৌ-টার্মিনাল নির্মাণ করে। সেই থেকে সদরঘাট টার্মিনালের কুলি ব্যবস্থাপনা ইজারার মাধ্যমে পরিচালিত হয়ে আসছিল। কিন্তু একশ্রেণীর মধ্যস্বত্ব সুবিধাভোগী ইজারাদারের কারনে কুলি তার শ্রমের ন্যায্য পারিশ্রমিক থেকে বঞ্চিত হচ্ছিল। ইজারা ব্যবস্থার কারনে কুলিদের দৌরাত্ম্য এবং ইজারাদারের ছত্রচ্ছায়ায় অবৈধ হকার, পকেটমার, ছিঁচকে চোরদের অত্যাচারে যাত্রীদেরকে চরম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছিল দীর্ঘদিন থেকে। যাত্রী হয়রানি বন্ধের উদ্দেশ্যে ও শ্রমিকের আয়কৃত মজুরি পুরোটাই যাতে শ্রমিক পায় এজন্য প্রাথমিক পর্যায়ে সদরঘাট টার্মিনাল ভবন ইজারামুক্ত করে বিআইডব্লিউটিএ বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের কুলি নিয়ে শ্রম ব্যবস্থাপনা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে এনেছে।
সরেজমিনে সদরঘাট টার্মিনালে ঘুরে বেশ কিছুসংখ্যক যাত্রীর সাথে আলাপ করে নতুন এ ব্যবস্থায় তাদের সন্তুষ্টির কথা জানা যায়। নতুন এ ব্যবস্থা প্রণয়নের জন্য তারা বর্তমান মহাজোট সরকারকে ধন্যবাদ জানান। টার্মিনালে রক্ষিত অভিযোগ বাক্সসমূহে অবশ্য যাত্রীসাধারণ বেশ কিছু পরামর্শ প্রদান করেছেন বলে বন্দরের নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা শরীফ মোঃ আফজাল হোসেন জানান। তারা টার্মিনালের প্রতিটি গেটে ওজন মাপার যন্ত্র দ্রুত স্থাপন, টার্মিনালে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ, পর্যাপ্ত পরিচ্ছন্ন টয়লেটসহ পার্কিং ইয়ার্ডের পার্শ্ববর্তী দুইটি গেট দিয়ে প্রবেশকারী যাত্রীদের ক্ষেত্রেও একই ব্যবস্থাপনা প্রবর্তনের দাবী জানিয়েছেন। যাত্রীসাধারণের এসব দাবী পূরণসহ ধীরে ধীরে আরো উন্নত যাত্রীসেবা প্রদানের অঙ্গীকার করেছেন বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান।