লাশের অপেক্ষায় বানারীপাড়ার দুটি পরিবার

রাহাত সুমন, বানারীপাড়া ॥  “আমনে গো হাতেও ধরি, পায়েও পরি, মোর সোনার চাঁন পুতের লাশটা অন্তত ফেরত আইনা দেন। তবু মুই মরার আগে পুত্রের লাশটাতো শেষবারের মতো দেইখা দাফন করতে পারমু”। স্থানীয় সংসদ সদস্যকে জড়িয়ে ধরে বিলাপ করে কথাগুলো বলছিলেন খেয়া নৌকার মাঝি হাবিবুর রহমান মোল্লা (৭০)। তার বিলাপশুনে সাংসদ তাকে বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরে নিজেই কেঁদে ফেলেন। ঘটনাটি বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলার শিয়ালকাঠি গ্রামের।

 

সাভারের রানা প্লাজা ধ্বসের ঘটনায় হাবিবুর রহমান মোল্লার সেজ পুত্র সুজন মোল্লা (১৯) নিখোঁজ হয়। এখনো তার কোন সন্ধ্যান মেলেনি। ঘটনার দীর্ঘদিন অতিবাহিত হওয়ায় সুজনের জীবিত থাকার আশা ছেড়ে দিয়েছে তার পরিবার। এখন শুধু লাশের অপেক্ষায় রয়েছেন শোকার্ত পরিবার ও তাদের স্বজনেরা।

 

বানারীপাড়া প্রেসক্লাবের সভাপতি সুমন ওই পরিবারের উদ্বৃতি দিয়ে জানান, উপজেলার শিয়ালকাঠি গ্রামের খেয়া নৌকার মাঝি হাবিবুর রহমান মোল্লার মেজ পুত্র মামুন মোল্লা (২২) রানা প্লাজার সপ্তম তলা ও সেজ পুত্র সুজন মোল্লা (১৯) অস্টম তলায় নিউ ওয়েভ ষ্টাইল গার্মেন্টেসের ফিনিসিং শাখার আয়রনম্যান হিসেবে কর্মরত ছিলো। গত ২৪ এপ্রিল রানা প্লাজা ধ্বসে পরার পর তারা দু’ভাই ভেতরে আটকা পড়ে। পরে মামুন মোল্ল¬াকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার কর্মীরা বের করে আনলেও ঘটনার পর থেকে সুজনের কোন সন্ধ্যান মেলেনি। তিনি আরো জানান, মামুন ও সুজনের উপার্জিত অর্থদিয়ে চলছিলো তাদের অভাবী আট সদস্যের পরিবার। নিখোঁজ সুজনের সন্ধ্যানে ঘটনার পর থেকে তার বড় ভাই সুমন মোল্লা, মামা জাকির হোসেন খান ও ফুফু রেখা বেগম ধ্বসে পরা রানা প্লাজার সম্মুখেই অবস্থান করছেন। ধ্বসে পরা ভবন থেকে কাউকে উদ্ধার করে বের করার সাথে সাথেই তারা সুজন ভেবে ছবি নিয়ে হুমরি খেয়ে পরেন। এছাড়াও তারা বিভিন্ন হাসপাতাল, ক্লিনিক ও মর্গে খোঁজাখুজি করেও নিখোঁজ সুজনের কোন সন্ধ্যান পাননি।
একই উপজেলার চাখার ইউনিয়নের দড়িকর গ্রামের রিয়াজ উদ্দিনের স্ত্রী পপি বেগম রানা প্লাজার চতুর্থ তলায় গার্মেন্ট কর্মী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। দুর্ঘটনার পর থেকে সেও নিখোঁজ রয়েছেন। প্রিয়তমা স্ত্রী পপির কোন সন্ধ্যান না পাওয়া স্বামী রিয়াজ এখন পাগল প্রায়। পপির সন্ধ্যানে আজো স্বামী রিয়াজ ও তার স্বজনেরা ছবি নিয়ে দূর্ঘটনাস্থলে অবস্থান করছেন।

 

স্থানীয় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব সৈয়দ মোঃ মনিরুল ইসলাম মনি নিখোঁজ সুজনের শিয়ালকাঠি গ্রামের বাড়িতে গত ২ মে ও দড়িকর গ্রামে পপি বেগমের স্বামীর বাড়িতে গত ১ মে সন্ধ্যায় গেলে নিখোঁজ সুজন ও পপির স্বজনদের আহাজারিতে পুরো এলাকার আকাশ বাতাস ভারি হয়ে ওঠে। ওইসব শোকার্ত পরিবারের স্বজনদের আহাজারি দেখে এমপি মনি নিজেও কেঁদে ফেলেন। এ সময় উপজেলা নির্বাহী অফিসার সৈয়দ এ.জেড মোরশেদ আলী ও এমপি পতœী রাজিয়া ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। এমপি মনি জানান, নিখোঁজদের লাশের সন্ধ্যান পেতে তিনি সবখানে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছেন।