মেঘ দেখলেই বাঁজে ছুটির ঘন্টা : গৌরনদীতে খোলা আকাশের নিচে চারটি স্কুলের পাঠদান

বিশেষ প্রতিনিধি ॥  সাভারের রানা প্ল¬াজা ধ্বসে অসংখ্য প্রাণহানীর ঘটনার পর আতঙ্কিত হয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অধিক ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ধ্বসে প্রাণহানীর আশংকায় তিনটিতে গত এক সপ্তাহ, একটিতে গত ছয়মাস ধরে খোলা আকাশের নিচে ও অধিকাংশ স্কুল ভবনে চরম ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষার্থীদের ক্লাশ ও পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে। ঘটনাটি বরিশালের গৌরনদী উপজেলার কাঠালতলী, বাহাদুরপুর, নোয়াপাড়া, মাহিলাড়া, হাপানিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। এসব খোলা আকাশের নিচের স্কুলগুলোতে মেঘ দেখলেই বাঁজে ছুটির ঘন্টা। ফলে ওইসব স্কুলের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পড়াশুনা চরমভাবে বিঘিœত হচ্ছে। এছাড়া উপজেলার ১১২টি সরকারি ও ২টি অস্থায়ী রেজিষ্টারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৩০টি স্কুল ভবনকে পরিত্যক্ত ও ঝুঁকিপূর্ন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ওইসব ঝুঁকিপূর্ণ স্কুল ভবনের ভীমের পলেস্তার ও আস্তর খসে পরে ইতোমধ্যে প্রায় অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী ও শিক্ষকেরা আহতও হয়েছেন।

উপজেলার বাটাজোর ইউনিয়নের নোয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মোঃ সাইদুর রহমান জানান, ৯৫ বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী এ বিদ্যালয়টির ভবন বিগত ১৯৯৫-৯৬ অর্থবছরে পূর্ণ নির্মান করা হয়। ওইসময় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নিন্মমানের নির্মান সামগ্রী দিয়ে ভবনটি নির্মান করার দু’বছর পরেই ভবনের ছাঁদ চুয়ে ভেতরে পানি ঢুকতে শুরু করে। এছাড়াও ভীমের পলেস্তার খসে পরে ইতোমধ্যে স্কুলের শিক্ষকসহ কমপক্ষে ২০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়। স্থানীয় সমাজ সেবক মিলন ঘরামী জানান, সবশেষ গত এক সপ্তাহ পূর্বে স্কুলের চতুর্থ শ্রেনীর ক্লাশ চলাকালীন সময় ভবনের ভীমের পলেস্তার খসে পরে কমপক্ষে ৫ জন শিক্ষার্থী আহত হয়। এরমধ্যে মনি খানম নামের এক ছাত্রীর ডান হাত ভেঙ্গে গেছে। প্রধান শিক্ষক শুভ্রা রায় জানান, ইতোমধ্যে জরার্জীন ভবনের বিষয়টি একাধিকবার লিখিত ভাবে সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করা হয়েছে। তিনি আরো জানান, নোয়াপাড়া ও বংকুরা গ্রামের একমাত্র এ বিদ্যালয়টিতে প্রায় আড়াই’শ শিক্ষার্থী রয়েছে। ভবনটি অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় গত নবেম্বর মাস থেকে স্কুল প্রাঙ্গণের বট বৃক্ষের তলে বসে শিক্ষার্থীদের ক্লাশ নেয়া হচ্ছে।

কাঠালতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা ইতি রানী দাশ জানান, তার স্কুলের ভবনের ছাদে সম্প্রতি সময়ে ফাঁটল দেখা দেয়ার পর থেকে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে চরম আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। ছাত্র অভিভাবক নুর মোহাম্মাদ সরদার, আব্দুস ছালাম সেরনিয়াবাতসহ অনেকেই বলেন, স্কুল ভবনের ছাদে ফাঁটল দেখা দেয়ার পর তাদের ছেলে-মেয়েরা ভবন ধ্বসে পরার আতঙ্কে স্কুলে যেতে চায় না। ফলে জরুরি সভা করে গত এক সপ্তাহ থেকে স্কুলের পাশ্ববর্তীস্থানে খোলা আকাশের নিচে শিক্ষার্থীদের ক্লাশ নেয়ার জন্য শিক্ষকদের অনুরোধ করা হয়েছে।

উপজেলার মাহিলাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এ.কে.এম মিজানুর রহমান জানান, তার স্কুলে প্রায় আড়াই শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে। জরার্জীন স্কুল ভবনের ছাদ ও ভীমের পলেস্তার খসে পরে ইতোমধ্যে একাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। পলেস্তার খসে পরার ঘটনাটি বর্তমানে চরম আকার ধারন করায় শিক্ষার্থীরা স্কুলে আসতে চাচ্ছেনা। ফলে গত এক সপ্তাহ পূর্বে অভিভাবকদের অনুরোধে স্কুলের বাইরে খোলা আকাশের নিচে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করানো হচ্ছে।

উপজেলার হাপানিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এস.এম খলিলুর রহমান জানান, তার স্কুলের জরাজীর্র্ণ ভবনের ছাঁদের আস্তর খসে ও ভীম ধ্বসে পরে গত ২৮ এপ্রিল শিক্ষক ও শিক্ষার্থীসহ ১০ জন আহত হয়েছেন। খবর পেয়ে ওইদিনই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দিদারে আলম মোহাম্মাদ মাকসুদ চৌধুরী, শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ রফিকুল ইসলাম, উপজেলা এলজিইডি অফিসের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোঃ বজলুর রহমান, ওসি আবুল কালাম ও মাহিলাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সৈকত গুহ পিকলু। নেতৃবৃন্দরা স্কুল ভবনটি পুরোপুরি ব্যবহারের অযোগ্য ও পরিত্যক্ত ঘোষনা করে সীলগালা করে দেন। তারা একটি অস্থায়ী স্কুল ঘর নির্মান করে দেয়ারও আশ্বাস দিয়েছেন। বর্তমানে খোলা আকাশের নিচেই পাঠদান করানো হচ্ছে তার স্কুলের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের।

বাহাদুরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রিনা বাড়ৈ জানান, তার বিদ্যালয়ের জরার্জীন ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে শিক্ষার্থীদের ক্লাশ নেয়া হচ্ছে। স্কুল ভবনটি অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় দীর্ঘদিন থেকে শিক্ষার্থীদের স্কুলে উপস্থিতি হ্রাস পেয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।     

গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার দিদারে আলম মোহাম্মাদ মাকসুদ চৌধুরী ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ইতোমধ্যে উপজেলার ১১২টি সরকারি ও ২টি অস্থায়ী রেজিষ্টারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ১৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনকে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ ও পরিত্যক্ত এবং ১২টি ভবনকে ঝুকিপূর্ন ঘোষনা করা হয়েছে। পরিত্যক্ত ও ঝুঁকিপূর্ন ৩০টি স্কুল ভবনে প্রায ৭ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে। গত ১০ এপ্রিল গৌরনদী উপজেলার শিক্ষা কমিটির সভায় ভবনগুলোতে পাঠদানে অনুপোযোগী ঘোষনা করা হয়। গত ১১ এপ্রিল শিক্ষা অধিদপ্তরের মহা-পরিচালককে বিষয়টি পত্র দিয়ে অবহিত করা হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।