বরিশাল সিটি কর্পোরেশন : বিএনপির প্রার্থী নিয়ে জটিলতা ॥ আ’লীগের একক প্রার্থী হতে পারেন হিরন

বিশেষ প্রতিনিধি ॥  সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের তফশিল ঘোষনার পর থেকে বরিশালবাসীর মধ্যে চলছে নানা জল্পনা ও কল্পনা। আগামী নির্বাচনে কে হচ্ছেন নগর পিতা এনিয়ে সর্বত্র আলোচনার ঝড় বইতে শুরু করেছে। বিএনপি কি এ নির্বাচনে অংশগ্রহন করবেন? আর করলেও কাকে মনোনয়ন দেবেন? সে হিসেব নিকেশও শুরু করেছেন সাধারন ভোটাররা। বিএনপির কেন্দ্রীয় কোন সিদ্ধান্ত না আসলেও ইতোমধ্যে বিএনপি দলীয় সম্ভ্রাব্য মেয়র প্রার্থী হিসেবে প্রকাশ্যে মাঠে নেমেছেন বিএনপি নেতা আব্দুর রহমান তপন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, মনোনয়ন প্রশ্নে এখানে বিএনপিকে জটিলতায় পরতে হবে। আওয়ামীলীগের মনোনীত একক প্রার্থী হিসেবে বর্তমান মেয়র ও মহানগর আ’লীগের সভাপতি আলহাজ্ব শওকত হোসেন হিরনকে আগে থেকেই চূড়ান্ত করা হলেও তিনি এখনও মাঠে নামেননি। আগামীকাল (৭ মে) সারাদেশের জেলা ও মহানগর আ’লীগের সভাপতি-সম্পাদকদের নিয়ে দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকায় বর্ধিত সভা করবেন। ওই সময় তার সাথে আলোচনা করার পরেই তিনি (হিরন) নির্বাচনের প্রচার-প্রচারনায় মাঠে নামবেন।

সূত্রমতে, গত ৩ মে নগরীর বাইতুল মোকারম জামে মসজিদে মিলাদ-মাহফিল ও প্রয়াত শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী অধ্যক্ষ ইউনুছ খানের কবর জিয়ারতের মাধ্যমে নগরীতে গনসংযোগে নেমেছেন জিয়া সেনার কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আব্দুর রহমান তপন। তিনি নিজের ছবি সম্বলিত লিফলেট বিতরণ করে ভোটারদের কাছে ভোট চেয়েছেন। সাবেক মেয়রদের দাবির মুখে বিএনপি চার সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অংশ নিলেও বিসিসি’র সাবেক মেয়র মজিবুর রহমান সরোয়ারকে বাদ দিয়ে তাকে (তপনকে) কেন মনোনয়ন দেয়া হবে, এমন প্রশ্নের জবাবে আব্দুর রহমান তপন জানান, অপর তিনটি সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়রদের মধ্যে কেহই সংসদ সদস্য নন। সংসদ সদস্যদের মেয়র নির্বাচনে অংশগ্রহন করতে হলে আগামী ১২ মে’র মধ্যে পদত্যাগ করতে হবে। আর পদত্যাগ করলে শূন্য আসনে ৯০ দিনের মধ্যে উপ-নির্বাচন দেয়ার বাধ্য বাধকতা রয়েছে। বর্তমান সরকারের সময়ে বিএনপি কোন উপ-নির্বাচনেই অংশগ্রহন করেনি। এ আসনেও উপ-নির্বাচনে অংশগ্রহন করারও কোন সম্ভবনা নেই। শেষ মুহুর্তে আরো একটি সংসদ সদস্য পদ হারানোর পাশাপাশি মেয়র প্রার্থী পরাজিত হলে দলের অপূরনীয় ক্ষতি হবে।

এছাড়াও স্থানীয় বিএনপিতে মজিবুর রহমান সরোয়ার ও আহসান হাবিব কামালের মধ্যে অভ্যন্তরীন কোন্দল জোরালো অবস্থানে রয়েছে। এরা দু’জনের কেউ প্রার্থী হলেও দলের একটি অংশের ভোট আ’লীগের পক্ষে চলে যাবে। তাই তপন উভয় পক্ষের নেতা-কর্মীদের তার পক্ষে নামাতে সক্ষম হবেন বলেও দাবি করেন। সরোয়ারের পরিবর্তে তার (তপনের) মনোনয়ন পেতে এসব যুক্তি দলীয় চেয়ারপার্সন ও মনোনয়ন বোর্ডের কাছে তুলে ধরবেন বলেও তপন উল্লেখ করেন। দীর্ঘদিন বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত আব্দুর রহমান তপন ইতিপূর্বে মেয়র ও এমপি পদে মনোনয়ন চেয়ে বঞ্চিত হয়েছেন। এবার দলীয় মনোনয়ন না পেলে নির্বাচন করবেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে আব্দুর রহমান তপন জানান, তখন দলের নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। বিএনপি নির্বাচন বর্জন করলেও তিনি আ’লীগের প্রার্থীকে খালি মাঠে গোল বা ওয়ার্ক ওভার দিতে রাজি নন। সেক্ষেত্রে জাতীয়তাবাদী শক্তির পক্ষ হয়ে তিনি নির্বাচনের মাঠে লড়তে চান। বিএনপি দলীয় সাবেক মেয়র ও স্থানীয় নেতা-কর্মীদের মতো তপনও মনে করেন বিএনপির সিটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা উচিত।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সাবেক মেয়র ও বর্তমান বরিশাল সদর আসনের সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান সরোয়ার মেয়র প্রার্থী হতে আগ্রহী। কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত না পাওয়ায় এখনও তিনি মুখ খুলছেন না। এছাড়াও বিসিসি’র গত নির্বাচনের বিএনপির পরাজিত প্রার্থী এস. সরফুদ্দিন আহমেদ সান্টুর এবারের নির্বাচনে দাঁড়ানোর কোন সুযোগ নেই মামলার কারনে। বরিশাল জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবায়েদুল হক চাঁন গত দুইটি মেয়র নির্বাচনে অংশগ্রহন করে তিনি পরাজিত হয়েছেন। আর সে কারনেই এবার আর তার প্রতি সাধারণ ভোটারদের তেমন কোন আগ্রহ নেই। বিএনপির তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের মতে, কোন কারনে মেয়র নির্বাচনে দলগতভাবে বিএনপি অংশগ্রহন না করলে সে ক্ষেত্রে আব্দুর রহমান তপন বিএনপির তৃনমূল পর্যায়ের সমর্থন পাবেন। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী ১৫ জুন বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

অপরদিকে দলীয় সিদ্ধান্তের বাহিরেই যুবলীগ নেতা মাহমুদুল হক খান মামুন নির্বাচনের মাঠে নামলেও বর্তমান মেয়র ও নগর আ’লীগের সভাপতি আলহাজ্ব শওকত হোসেন হিরন এখনো প্রচার-প্রচারনায় মাঠে নামেননি। তিনি জানান, আগামীকাল ৭ মে সারাদেশের জেলা ও মহানগর সভাপতি-সম্পাদকদের নিয়ে দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকায় বর্ধিত সভা করবেন। ওই সময় তার সাথে আলোচনা করেই নির্বাচনের প্রচার-প্রচারনায় নামবেন। এ তথ্যের সত্যতা স্বীকার করে মহানগর আ’লীগের সাধারন সম্পাদক এ্যাডভোকেট আফজালুল করিম জানান, দলীয় মেয়র প্রার্থী হিসেবে আলহাজ্ব শওকত হোসেন হিরনকে গত ২৭ ডিসেম্বর জেলা ও মহানগর আ’লীগের কাউন্সিলের সময়ই চুড়ান্ত করা হয়েছে। তবুও দলীয় সভানেত্রীর সাথে আলাপ আলোচনা করেই মাঠে নামার জন্য জেলা ও মহানগরের নেতৃবৃন্দরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এ সিদ্ধান্তের ব্যাপারে জেলা আ’লীগের সভাপতি ও জাতীয় সংসদের সাবেক চীফ হুইপ আলহাজ্ব আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর সাথেও আলোচনা করা হয়েছে।