শিরোনামহীন কথা?

আহমেদ আবু জাফর ॥  গত ৫ মে সন্ধ্যা ৬টা ৫৭ মিনিট, মাগরিব নামাজ শেষ। পুলিশের হুইসেল। কেউ বলছেন ঢাকার টিভির সাউন্ড। ‘কেউ বলে নাকি, রোজা খোলার টাইম। ঢাকার টিভি দেইককা কইলজাডা ধুকধুক করে, বাপু মোরা ডরাইছি’। ওই চিত্র আর দেকতে চাইনা। এহনও যে ‘‘সরকার ওগুলারে ক্যা ঠান্ডা হইররা কাম হরেনা’’। ‘ডিজিটাল প্রযুক্তির দেশ’ আমাদের শ্যামল বাংলাদেশ। ভিশন ২০২১’র ২০১৩ সাল এ্যাহন। কেউ বলেন, মাঝে মধ্যে মনে অয় কোন আমলই যে ভালো আলহে’। হেই আমলে ৭১’র মুক্তিযুদ্ধের ন্যায়, এখন কানে বাজে ঠাস ঠুস। ও বাবা আইজ যা ফোটছে। এটা রাজধানী ঢাকার অলিগলিতে। কোথাও হামলা, পালটা হামলা, গোলাগুলি, রক্তক্ষয়, জীবনহানি -অথ্যাৎ মৃত্যু। তয় একটু শান্তিতে ঘুমাইতে পারতাম’ বলেন কেউ। দেশে ভোলে শবদ’ দূষন আইনও চলে। দে’হোনা রুগি আনতে গেলেও পুপু’ হরে, ‘আর দি’য়া আইলেও পোপো হরে’। কোন সময় যে হরবে, আর কোন ফি’র হরবেনা’। হেয়ার কোন ষ্টেশন নাই। বেশী ‘জ্বালায় বুঝি মাইকোরো আলারা’ ওরা আবার হুইসাল লাগাইয়া এম্বুলেন্স বানাইছে’। দেশব্যাপী সতর্কতা। দেশের বিরোধী দল বিএনপি ৪৮ ঘন্টার আল্টিমেটাম দেয়ার পরদিন ঢাকায় ইসলাম হেফাজতের নামে রাজনীতি শুরু করছে।

রাজনৈতিক অঙ্গন শাš’— হঠাৎ পুলিশের হইসেল টহলের কারন কি? বিষয়টি অনুধাবন করতে তৃনমূলের বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগ করা হয়। প্রিয় পাঠক তা থেকে বরিশালের আঞ্চলিক ভাষায় উপস্থাপনের চেষ্টা করা হয়েছে মাত্র।  

এ বিষয়ে কথা হয় বিভিন্ন জনের সাথে। স্থানীয়রা কেউ বলছেন এ্যাহন রাস্তায় হাটাও রিকস’ অইয়া গেছে। যহন খুশি হাটতে পারেনা না রাজধানীবাসি। রাজধানীবাসি লাশের গন্ধ নিয়ে রাত কাটায়। কোথাওবা গোলাগুলি, ককটেল, বিক্ষোভ, ভাংচুর, আগুন, হতাহত হচ্ছে।  কেউ টিভি দেইককা, কেউ টিভির ঘডনা দেইককাও আহত হচ্ছে। শুধু ঘটনা দেখে। কেউবা হার্ট অ্যাটাক্ট করে। আবার কেউ শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষার লই¹া নিহত হন। রাজধানীর বিভিন্ন রাস্তা অলিগলি হেফাজতের লোকজন অবস্থান নেয়ায় ঢাকা কার্যত অচল হয়ে পড়ে। হেফাজতের তান্ডব ঠেকাতে পুলিশের গুলি, টিয়ারসেল, সাইন্ডগ্রেনেড নিক্ষেপসহ বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করতে হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে দেশবাসিকে সজাগ থাকার আহবান জানানো হয়। এদিকে বিএনপি রাতে জরুরী সভা করেছে। দেশের এ তান্ডবের ফলে গামেন্টস শিল্প ধংস হওয়ার সম্ভাবনা করছেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক।

চলমান সাভার ট্টাজেডিতে দেশ যখন শোকে মাতম, যেখানে সাভারের ৯তলা বিশিষ্ট রানা প্লাজার ট্টাজেডিতে গার্মেন্টস কর্মী শাহিনাকে উদ্ধার করতে গিয়ে আগুনে পুড়ে কেউ বা নিহত হয়েছেন। কেউবা আহত হয়েছেন। ৫ শতাধিক লাশ জাতি কাঁধে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আবার হাজারো জীবিত গামেন্টস কর্মী-কর্মকর্তা মৃত্যুর ক্ষত নিয়ে কাতরাচ্ছেন দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে। সভার চোখ এখন সাভারের দিকে। যে দেশের রাস্তায় অবরোধ, হরতাল, সংঘর্ষ, রক্তক্ষয়, গ্রেনেড বিস্ফোরন, গুলি, টিয়ারসেল, কাঁদানো গ্যাস, জলকামান, সাউন্ড গ্রেনেড’র মতন অস্ত্র জীবনহানি ঘটছে।  সারা দেশের গনজাগরন মঞ্চ ভারসাস ‘হেফাজতে ইসলাম’ আন্দোলন করছে। সাথে জামায়াত-শিবির নৃশংস ঘটনা ঘটিয়ে দেশটিকে বিশ্বের দরবারে নাজুক করে তুলছে। হেফাজতে ইসলাম ‘জামায়াত-শিবিরের ন্যায়’ হামলা-পাল্টা হামলা করে হতাহত করেছেন অনেককে। পুলিশ ও আন্দোলনকারীদের গুলিতে বুক খালি করছেন অনেক বাঙালীকে। তারা আমাগোই ভাই-বোন। কারো মা আবার কারো পিতা। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী পুলিশকে কুপিয়ে-পিটিয়ে গুলি করে হতাহত করে র‌্যাবের গাড়িতেও হামলা চালায় তারা। দেশের জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম, যেখানে বিশ্বের সারা দেশের লোক আসেন নামাজ পড়তে। আর সেখানটিতেও হামলা চালিয়ে বদনাম কামিয়েছেন দেশের ইসলাম প্রিয় লোকেরা। তারা জুমা’র নামাজের শেষে লাফিয়ে পড়েন যুদ্ধে। কিন্তু মসজিদে কেন, আপনারা রাস্তায় রাজনীতি করবেন ভাল কথা- কিন্তু, এভাবে কেন? আপনারা ধর্মভিত্তিক রাজণীতি করবেন, এটা দেশ-জাতি নাগরিকদের জন্য শুভ কামনা বয়ে আনতে পারে। তবে সব দলই প্রথমপ্রথম এভাবে করে অর্থাৎ মাঠে আসার আগে। কিন্তু এভাবে প্রয়োজন কি? আপনারা ইসলাম ধর্মের লোক, শান্তিকামী । ধর্ম নিরপেক্ষ জাতি হিসেবেও বিশ্বের দরবারে বেশ হাকডাক রয়েছে। যে দেশের সরকার স্বীকৃত ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র, বিশ্বের সকল দেশেরই তা জানা। এভাবে কী দরকার ।

একজন বললেন, আইজগো টিভিতে যে সিনারী দেখলাম। ওখানে চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলার লোক উপস্থিত হয়েছেন। তারমধ্যে কেউ হতাহত হয়েছেন। অনেকটা শান্তিপূর্ন ইসলামী সমাবেশে তারা ১৩ দফাদাবী বাস্তবায়নের ইস্যু নিয়ে মাঠে নামেন। দেশবাসী প্রথম কর্মসূচীর দিন টিভির পর্দায় আগ্রহ ভরে আপনাদের দেখতেছিলেন। দেশে যুদ্ধাপরাধের বিচার চলছে। আপনারাও যুদ্ধাপরাধের বিচারের দাবীতে একমত হোন। আপনারা নারী নীতির মত গুরুত্বপূর্ন অধ্যাদেশ নিয়ে কথা বলছেন, বলুন- ভাল কথা’। নারী তো কেউ আপনার মা, কারো বোন, কারো প্রিয়তমা স্ত্রী। উন্নয়নশীল দেশ বাংলাদেশ। দেশটির কথা ভাবুন, এদের যারা ৭১’ সালে যুদ্ধে যে মুক্তিযোদ্ধরা শহীদ হয়েছিলেন, ইজ্জ্বত হারিয়েছিল আপনার মা-বোন। তাদের কথা মনে করুন। কতটা বিষাক্ত যন্ত্রনা নিয়ে এখনও কাতরাচ্ছেন কেউ কেউ। লাখো নারী ধর্ষনের মত অপবাধে তখন কিন্তু কারো সাজা হয়নি। হত্যা প্রমানেরও বিচার হয়নি। সেই দিনের ঠিক ৪২টি বছর পর ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার’ যুদ্ধাপরাধের বিচার করছে। এই দাবীর পক্ষে ঐক্যবব্ধ হোন।

আপনাদের কথা বলার বিশাল সমাবেশস্থল দিয়েছে সরকার। প্রটেকশনের জন্য আনসার, বিজিবি, পুলিশসহ বিচারিক আদালতের ম্যাজিষ্টেট’র সুবিধা প্রদান করা করেছে। দেশ যখন সাভার ট্টাজেডির মত জাতীয় শোকে মূহ্যমান, ঠিক সেই মূহুর্তেই আপনাদের আন্দোলন!

রাজধানীতে হেফাজতের অবরোধের কাজে শিশুদের ‘হেফাজতের জকি’ হিসেবে ব্যবহার করছেন। এদের কারোর বয়স ৮ থেকে ১৫ বছর। ট্টাফিক অফিসে হামলা, পত্রিকা ভবনের অফিসে আগুন। সাংবাদিকদের ওপর গুলিসহ নগ্নহামলা। অর্ধশত গাড়িতে আগুন, পুলিশ কুপিয়ে আহত, ককটেল, বোমা, টিয়ারসেল, গুলি করা হয়েছে। এছাড়া র‌্যাবের গাড়িতেও হামলা করা হয়েছে। হেফাজতের নামে হাতে জাতীয় পতাকার সাথে বাঁশ ও গাছের লাঠি বেঁধে মিছিল। ‘বিষয়টা টিভিতে দেখতে ক্যামন বেমানান’। লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার পতাকা। ‘মা-বোনের ঈজ্জ্বতের দামে কেনা এ পতাকায় লাঠি ব্যবহার বেমানান ও দন্ডনীয়। একদিকে সাভার ট্টাজেডিতে জাতির সাথে বিশ্ব শোকাহত। ঠিক সেই মূহুর্তে তাদের উদ্ধার শেষ না করে আন্দোলন এটাকে জাতি কিভাবে মেনে নিবেন, তার প্রশ্ন থাকলো। এই মূহুর্তে দেশের সংকটময় মূহুর্তে সাভারে আপনার কারো মেয়ের লাশ রয়েছে, অথবা ছেলের। তাদের খুজুন, ওরা পচেগলে কংকাল হয়ে যাচ্ছে। যারা পঙ্গু হয়ে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ হারিয়ে হাসপাতালের বিছানায় ছটফট করছেন। প্লিজ, একটি বার ভাবুন। তা হোক সরকার কিংবা বিরোধী দলসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। জেনে রাখুন, গতকালও কিন্তু সাভার ট্টাজেডির লাশ এখনও উদ্ধার হচ্ছে। হাজারো মায়ের কান্না আর আহাজারীতে বাংলাদেশ আজ শোকাবিভুত।

-লেখক: আহবায়ক, ঝালকাঠি নাগরিক ফোরাম।

jaforsbds@gmail.com