প্রতীক্ষার অবসান হলো আসমার

বিশেষ প্রতিনিধি ॥  অবশেষে আটকা পড়ার সতেরো দিন পর রানা প্লাজার মৃত্যুকূপ থেকে উদ্ধার পেলেন গার্মেন্টস কর্মী রেশমা। কোনো ধরণের খাবার বা পানি ছাড়া একাকী অন্ধকার মৃত্যুকূপে রেশমা কিভাবে একা একা এতদিন বেঁচে রইলেন তা অনেকের কাছেই গবেষণার বিষয়বস্তু হতে পারে। তবে রেশমার উদ্ধারে সবচেয়ে বেশি খুশি হয়েছে তার স্বজনরাই, নির্দ্বিধায় বলা যায় এ কথা। তাই রেশমার উদ্ধারের পর আনন্দে যেন অনেকটাই হতবাক বোন আসমা।

শুক্রবার বিকেলে রেশমা উদ্ধার পাওয়ার পরপরই তিনি ছুটে আসেন ঘটনাস্থলে। হাতে নিঁখোজ বোনের ছবি আর চোখে তাকে আরেকবার জীবিত দেখতে পাবার আকুলতা।

আসমা জানালেন, রেশমার খোঁজ পাবার আশা প্রায় ছেড়েই দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তারপরও মাঝে মাঝে ঘটনাস্থলে এসে খোঁজ নিয়ে গেছেন। সবশেষ যখন জানতে পারলেন রেশমা নামে একজন উদ্ধার হয়েছে, সঙ্গে সঙ্গেই ছুটে আসেন তিনি।

তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় আসমা সাংবাদিকেদের বলেন, “ঘটনার পর থেকেই আমরা তারে খোঁজাখুঁজি করছি। কিন্তু কোথাও পাইতেছিলাম না। প্রতিদিন এখানে আসি উদ্ধার কাজ দেখতাম আর খুঁজতাম।”

তিনি বলেন, “বোনের লাশটা অন্তত পাওয়া যায় নাকি তার অপেক্ষাত ছিলাম। রেশমা উদ্ধারের খবর পায়া এখানে ছুটি আসি।”

আসমা আরও বলেন, “ওরে জীবিত দেখবো কখনও চিন্তাও করি নাই।”

উদ্ধার পেয়েই রেশমা তার বোনের সঙ্গে কথা বলতে চান। সঙ্গে সঙ্গে উদ্ধারকারী সেনা সদস্যরা আসমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এরপর তাকে সেনাবাহিনীর গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া হয় সাভার সিএমএইচে। উদ্ধারের পর সেখানেই ভর্তি করা হয় রেশমাকে।

আসমার প্রতীক্ষার অবসান হয়তো হলো, কিন্তু এখনও যাদের প্রিয়জন নিঁখোজ, সেই হতভাগ্য স্বজনদের প্রতীক্ষার পালা অদৌ শেষ হবে কি না, তার জবাব হয়তো কোনো দিনই পাওয়া সম্ভব হবে না।

রানা প্লাজার নারী শ্রমিকদের মধ্যে রেশমা নামের আরও কয়েকজন এখনও নিঁখোজ। রেশমা উদ্ধারের খবর পেয়ে তাদের মধ্যে কয়েকজনের স্বজনরাও সেখানে উপস্থিত হন এই ভেবে, যে এই রেশমাই হয়তো তাদের হারানো রেশমা।

কিন্তু তাদের সঙ্গে থাকা ছবি দেখে যখন সেনা সদস্যরা জানান এ রেশমা তাদের রেশমা নয়, তখন ক্ষণিকেই নিভে যায় তাদের সব আশার আলো।

যাই হোক, রেশমা জীবিত উদ্ধার পেলেন। কিন্তু রেশমার উদ্ধারে আসলে জয়ী হলো মানুষের উদ্যম আর বেঁচে থাকার ঐকান্তিক প্রচেষ্টার।