বিসিসি নির্বাচন : মহাজোটে মহাকোন্দল ॥ ঐক্য জোটে নেই ঐক্য

বিশেষ প্রতিনিধি ॥  বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের (বিসিসি) নির্বাচনে আলহাজ শওকত হোসেন হিরনকে আওয়ামীলীগ সমর্থিত মহাজোটের মনোনীত প্রার্থী ঘোষণার পরেও বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন যুবলীগ নেতা মাহমুদুল হক খান মামুন। এখনও বিদ্রোহী প্রার্থী মামুনকে বসে আনতে পারেননি দলের হাইকমান্ড। ফলে বিএনপির দূর্গ বলেখ্যাত বরিশাল নগরীতে মহাজোটে মহাকোন্দল দেখা দিয়েছে।

 
অপরদিকে নাগরিক সমাজের ব্যানারে বিএনপির কেন্দ্রীয় মৎস্য বিষয়ক সম্পাদক ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি আহসান হাবীব কামালকে ১৮ দলীয় ঐক্যজোটের প্রার্থী ঘোষণা দেয়ার পরেও দলের পূর্বের অভ্যন্তরীন কোন্দলের ঐক্য ফিরিয়ে আনতে পারেনি দলের কেন্দ্রীয় নেতারা। ফলে এখানেও বিএনপি সমর্থিত ১৮ দলীয় ঐক্য জোটের বিদ্রোহী প্রার্থী হচ্ছেন মেয়র পদে মনোনয়নপত্র জমা দেয়া জেলা বিএনপির সাবেক সাধারন সম্পাদক এবায়েদুল হক চাঁন। তিনি নিজেই এ ঘোষণা দিয়েছেন। ফলে এখানকার ঐক্যজোটেও ঐক্যের ফাঁটল দেখা দিয়েছে।

জনমত জরিপে সাধারন ভোটারদের কাছে বরিশাল মহানগরীর উন্নয়নের স্বার্থে ও বিগত দিনের উন্নয়নের স্বীকৃতি স্বরূপ নির্বাচনী প্রচার প্রচারনায় মেয়র প্রার্থী হিসেবে একমাত্র মাঠ সরগরম করে রাখা আলহাজ শওকত হোসেন হিরনের সমর্থন সবখানেই লক্ষ্যনীয়। তার পরেও সবমিলিয়ে নির্বাচনী হাওয়া কোনদিকে মোড় নিচ্ছে তা নিয়ে গোলক ধাঁ ধাঁ রয়েই গেছে।

আহসান হাবিব কামালকে দলীয় একক প্রার্থী ঘোষণার সত্যতা স্বীকার করে বৈঠকে উপস্থিত থাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বিলকিস আকতার জাহান শিরিন জানান, আজ রবিবার তাদের সমর্থিত প্রার্থী আহসান হাবিব কামালকে নিয়ে মহানগর বিএনপির সভাপতি এ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার-এমপি’র নেতৃত্বে তারা বরিশালে এসে আনুষ্ঠনিক ভাবে প্রচারণা শুরু করবেন। সে লক্ষ্যে আহসান হাবিব কামালের সমর্থনে বড় ধরনের শোডাউন করে নগরীতে প্রবেশের জন্য ব্যাপক আয়োজনও করা হয়েছে।

সূত্রমতে, সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে বিএনপি সরাসরি অংশগ্রহন না করলেও কৌশলে বিসিসি’র নির্বাচনে নাগরিক সমাজের ব্যানারে দলীয় একক প্রার্থী ঘোষণা দেয়ার জন্য দীর্ঘদিন থেকে বৈঠক করে আসছিলো। সেমতে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশারফ হোসেন, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মজিবর রহমান সরোয়ার-এমপি’র নেতৃত্বে বরিশালে বিএনপির মেয়র পদে মনোনয়নপত্র জমা দেয়া তিন প্রার্থীকে নিয়ে বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকার গুলশান কার্যালয়ে ১৮ দলীয় ঐক্য জোটের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার উপস্থিতিতে বৈঠকের আয়োজন করা হয়।

গভীর রাত পর্যন্ত বৈঠক শেষে আহসান হাবিব কামালের পক্ষে ১৮ দলের সকল নেতা-কর্মীকে ঐক্যবদ্ধ ভাবে নির্বাচন করার নির্দেশ দেন বেগম খালেদা জিয়া। একই সভায় বাকি দুই প্রার্থী জেলা বিএনপির সাবেক সাধারন সম্পাদক এবায়দুল হক চাঁন ও মহানগর বিএনপির সাধারন সম্পাদক এ্যাডভোকেট কামরুল আহসান শাহীনকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তের কথাও জানিয়ে দেয়া হয়।

বৈঠকে উপস্থিত দলী নেতারা জানান, প্রার্থী থেকে সরে আসার জন্য জেলা বিএনপির সভাপতির পদটি দাবি করেন এবায়দুল হক চাঁন। তখন কেন্দ্রীয় নেতারা বিষয়টি পরে বিবেচনা করা হবে বলে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচনের মাঠে সক্রিয় থাকার নির্দেশ দেন।

মেয়র প্রার্থী এবায়দুল হক চাঁন জানান, তিনি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করবেন না। চাঁন বলেন, এটি স্থানীয় সরকার নির্বাচন, এখানে সবারই নির্বাচনে অংশগ্রহণের অধিকার রয়েছে। যেহেতু দল সরাসরি নির্বাচন করছে না, সেক্ষেত্রে আমি প্রার্থী থাকবো। তিনি আরো বলেন, আমি জাতীয়তাবাদী আদর্শে বিশ্বাসী হলেও দলে আমার কোনো পদ-পদবী নেই। তাই আমি নির্বাচনে অংশগ্রহন করলে দল আমার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে পারবেনা।

উল্লেখ্য, সিটি কর্পোরেশনের আসন্ন নির্বাচনসহ মোট তিনটি নির্বাচনের দুইটি নির্বাচনেই আহসান হাবিব কামাল ও এবায়দুল হক চাঁন প্রার্থী হয়েছিলেন। প্রথম নির্বাচনে মজিবর রহমান সরোয়ারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় চাঁন ও কামাল দু’জনেই দল থেকে বহিস্কার হন। পরবর্তীতে তাদের দলে ফিরিয়ে নেয়া হয়। পরবর্তীতে বিগত তত্বাবধায়ক সরকারের আমলে আবার দু’জনই মেয়র পদে প্রতিদ্বন্ধিতা করেন। তখন আহসান হাবিব কামাল ছিলেন তৃতীয় এবং এবায়দুল হক চাঁন ছিলেন চতুর্থ স্থানে। ওইসময় মজিবর রহমান সরোয়ার কারাবন্দী থাকায় তিনি নির্বাচনে অংশগ্রহন করতে পারেননি।