বিশেষ প্রতিনিধি ॥ বরিশাল সিটি করর্পোরেশনের (বিসিসি) নির্বাচনে মেয়র পদে পাঁচ প্রার্থীর হলফনামা প্রকাশিত হয়েছে। ওইসব হলফনামা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, সবচেয়ে বেশি সম্পদের মালিক হচ্ছেন সদ্যবিদায়ী মেয়র ও মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি আলহাজ শওকত হোসেন হিরন। আর সবচেয়ে কম সম্পদের অধিকারী মেয়র প্রার্থী হলেন মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট কামরুল আহসান শাহীন। হলফনামার তথ্যানুযায়ী, শওকত হোসেন হিরন প্রায় ১০ কোটি টাকার সম্পদের মালিক। তার স্ত্রী জেবুন্নেচ্ছা আফরোজ প্রায় ৭০ লাখ টাকার সম্পদের মালিক। এ ছাড়া তাদের যৌথ মালিকানায় একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও অকৃষি সম্পদ রয়েছে। অপরদিকে, কামরুল আহসান শাহিনের রয়েছে প্রায় ১০ লাখ টাকার সম্পদ। তার স্ত্রী মাত্র ৪৫ হাজার টাকার মালিক।
শওকত হোসেন হিরন: শওকত হোসেন হিরন শিক্ষাগত যোগ্যতায় এলএলবি, পেশায় ব্যবসায়ী। তিনি আটটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত রয়েছেন। বছরে তিনি আয় করেন বাড়িভাড়া বাবদ ৯০ হাজার টাকা, ব্যবসা থেকে তিন কোটি ২৬ লাখ টাকা, সম্মানি ভাতা হিসেবে ১৭ লাখ টাকা, অন্যান্য এক লাখ ৯৫ হাজার টাকা সর্বমোট তিন কোটি ৪৬ লাখ ২৫ হাজার টাকা। আর প্রার্থীর ওপর নির্ভরশীলদের আয় বৎসরে ২ লাখ ৮৬ হাজার টাকা। অস্থাবর সম্পত্তির মধ্যে রয়েছে নিজ নামে নগদ ২০ লাখ ৪৮ হাজার টাকা ও স্ত্রীর নামে ১১ লাখ ১৮ হাজার টাকা, ব্যাংকে জমাকৃত অর্থের পরিমাণ ৭ লাখ ৮৬ হাজার, হিরনের প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানীর দুটি শেয়ার মিলিয়ে রয়েছে ৫৫ লাখ টাকা। স্থায়ী আমানতের মধ্যে ৬ লাখ ও ১ লাখ ৫০ হাজার টাকার এফডিআর রয়েছে। রয়েছে ১৫ লাখ টাকা দামের বাস, ১৬ লাখ ৪৫ হাজার টাকা দামের মোটর গাড়ি এবং তিন কোটি ৪৮ লাখ টাকা দামের দুটি কার্গো, ৩০ হাজার টাকা দামের ১৫ তোলা স্বর্ণ, নিজের নামে ৬ লাখ ১৪ হাজার টাকার মূল্যমানের আসবাবপত্র এবং ১ কোটি ৮৪ লাখ টাকা মূল্যমানের অফিস আসবাবপত্র। স্থাবর সম্পত্তির মধ্যে তার ৫৫ লাখ টাকা ব্যয়ে রূপাতলীতে নির্মাণাধীন দালান এবং দুই লাখ টাকার বাণিজ্যিক দালান, নগরীর ক্লাব রোডে এক কোটি টাকার মূল্যমানের বাড়ি, আলেকান্দায় দুই লাখ ৫০ হাজার টাকার বাড়ি, ঢাকার উত্তরায় ৩০ লাখ টাকার ফ্ল্যাট ও নিজের নামে চার দশমিক ৫২ একর কৃষিজমি। উল্লেখ্য, গত অর্থ বছরে বরিশাল বিভাগে সর্বোচ্চ করদাতা হয়েছিলেন শওকত হোসেন হিরন। হলফনামায় বলা হয়েছে, শওকত হোসেন হিরনের নামে বর্তমানে কোন মামলা নেই। অতীতে চারটি মামলার বিবরণ দিয়ে বলা হয়, একটি মামলা রাষ্ট্র কর্তৃক, অপরটি বাদি কর্তৃক প্রত্যাহার, এছাড়াও তৃতীয় মামলা থেকে বেকসুর খালাস এবং চতুর্থ মামলার অভিযোগ গঠনের সময় খালাস পান তিনি।
আহসান হাবিব কামাল: বরিশাল দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি আহসান হাবিব কামালের শিক্ষাগত যোগ্যতা এইচএসসি। নিজ ও স্ত্রীর নামে কোনো কৃষিজমি নেই। কামাল হলফনামায় ব্যবসায়ী উল্লেখ করেন। রয়েছে ‘টয়ো ফিড লিমিটেড’ নামে মাছ, মুরগির ও পশুর খাদ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান। বছরে ব্যবসা থেকে দুই লাখ ৩০ হাজার টাকা আয় করেন। আর স্ত্রীর নামে রয়েছে ৭ লাখ টাকা মূল্যমানের একটি বাড়ি। ব্যাংকে পাঁচ লাখ টাকা জমা, ২২ লাখ টাকার একটি মোটরগাড়ি, ১৬ ভরি স্বর্ণ ও স্ত্রীর নামে ৩৫ ভরি স্বর্ণ। স্থাবর নিজ নামে ২০ শতক ও স্ত্রীর নামে একটি বাড়ি রয়েছে। ফৌজদারী মামলা রয়েছে দুটি। দুর্নীতি দমন আইনের ৫ (২) ধারায় বরিশাল বিভাগীয় স্পেশাল জজ আদালতে একটি ও চীফ জুডিশিয়াল আদালতে একটি। একটির চার্জশিট হয়নি অন্যটি হাইকোর্ট থেকে স্থীতি করা অবস্থায় রয়েছে। এর আগেও কয়েকটি মামলা ছিলো, তবে তা থেকে খালাস প্রধান করা হয়েছে বলে হলফনামায় উল্লেখ করা হয়। দায় বা দেনা রয়েছে ৪ কোটি ৮৫ লাখ টাকা ‘টয়ো ফিড লিমিটেড’ এর সহ অংশীদার হিসেবে।
মাহমুদুল হক খান মামুন: যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও বরিশাল মহানগর যুগ্ম আহ্বায়ক মাহমুদুল হক খান মামুনের শিক্ষাগত যোগ্যতা এমএসএস অর্থনীতি, এম কম ব্যবস্থাপনা। তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই, দুটি মামলা ছিল তা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। পেশা হিসেবে ব্যবসা উল্লেখ করা হয়। তিনি বাংলাদেশ সড়ক ও জনপথের প্রথম শ্রেণীর ঠিকাদার ও এগ্রো লিমিটেডের সত্ত্বাধিকারী। ব্যবসা থেকে বাৎসরিক আয় ১৩ লাখ ৯৯ হাজার ৯৩৬ টাকা, প্রার্থীর ওপর নির্ভরশীলদের আয় ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা, ১০ ভরি স্বর্ণ টিভি, ফ্রিজ, এসি, কম্পিউটার, মোটরসাইকেল ১০টি। স্থাবর নিজ নামে কৃষি জমি ২০ শতক। যৌথ মালিকানায় কৃষি জমি ২৩ একর, অকৃষি জমি ১২ একর, দালান একটি যৌথ দ্বিতীয় তলা ২.৫০ শতক জমির ওপর। এগুলো যৌথ মালিকানায় এজমালী, দায় দেনা নেই।
এবায়েদুল হক চাঁন: বরিশাল জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবায়েদুল হক চাঁন তার হলফ নামায় উল্লেখ করেন তিনি উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেটধারী। তার বিরুদ্ধে তিনটি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। ভিপি কেচ ও আয়কর আইনের ধারায় হাইকোর্টে দুটি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। দণ্ডবিধি ৩০২/৩৪ ধারায় বরিশাল জেলা জজ আদালতে একটি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। পেশায় ব্যবসায়ী, তার মালিকানায় রয়েছে অভিরুচি সিনেমা হল, রয়েল রেস্তরা, রয়েল কফি হাউজ, বালুবাহী ভলগেট ও ড্রেজার। বাৎসরিক আয় ২ লাখ ২২ হাজার টাকা। এরমধ্যে ব্যবসা থেকে ২ লাখ টাকা, কৃষি থেকে ১০ হাজার টাকা এবং বাড়ি বা অন্যান্য ভাড়া বাবদ ১২ হাজার টাকা। অস্থাবর সম্পদ নগদ টাকা নিজের নামে ৫ লাখ, নির্ভরশীলদের নামে ২ লাখ টাকা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত টাকার পরিমান ৩০ হাজার, নিজ নামে প্রাইভেটকার রয়েছে যার আনুমানিক মূল্যে ২ লাখ টাকা, স্ত্রীর রয়েছে পাঁচ ভরি স্বর্ণ। যার বর্তমান বাজার দর ২ লাখ টাকা। ইলেষ্ট্রনিক, আসবাবপত্র ও অন্যান্য মিলে রয়েছে এক লাখ ১০ হাজার টাকা। স্থাবর কৃষি জমি নিজ নামে রয়েছে ১০০ শতক যার মূল্য ৫ লাখ টাকা, যৌথ মালিকানায় ৩০০ শতক মূল্য তিন লাখ টাকা, যার প্রার্থীতার অংশ রয়েছে ৯ এর ১ ভাগ। নিজ নামে দালান বা আবাসিক ভবন রয়েছে রয়েছে যার মূল্য ৬ লাখ টাকা, যৌথ মালিকানায় ৭০ লাখ টাকা।
এ্যাডভোকেট কামরুল আহসান শাহীন: মহানগর বিএনপির সাধারন সম্পাদক এ্যাডভোকেট কামরুল আহসান শাহীন কৃষি খাত, বাড়ি ভাড়া ও আইন পেশা থেকে বছরে আয় করেন ৪ লাখ ২০ হাজার টাকা। অস্থাবর তার কাছে নগদ ৫০ হাজার ও স্ত্রীর নামে রয়েছে ৩০ হাজার টাকা। ব্যাংকে নিজ নামে জমা আছে ২০ হাজার ও স্ত্রীর নামে ১৫ হাজার টাকা। এছাড়া স্ত্রীর ৮ ভরি স্বর্ণ রয়েছে। যৌথ মালিকায় কৃষিজমি ৬৬ শতক, অকৃষি জমি ১৫ বিঘা। এ ছাড়া ৬ তলা ভবন, যার ৬ ভাগের একাংশ তিনি পাবেন। শিক্ষাগত যোগ্যতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলএম পাশ। জি.আর মামলা একটি আদালতে বিচারাধীন, অতীতে দুটি মামলা ছিল তা থেকে তিনি খালাস পেয়েছেন। কারো কাছে তার কোনো দায় বা দেনা নেই।