সিটি নির্বাচন : বরিশালে নাগরিক ফোরামের প্রার্থী হয়েছেন বিএনপি নেতা চাঁন

বিশেষ প্রতিনিধি ॥  বরিশাল সিটি করর্পোরেশনের (বিসিসি) নির্বাচনে নিজেকে নাগরিক ফোরামের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবায়দুল হক চাঁন। আজ সোমবার বেলা এগারোটায় নগরীর রয়েল রেস্তোরায় সাংবাদিক সম্মেলনে এবায়দুল হক চাঁন লিখিত বক্তব্য পাঠের মাধ্যমে এ ঘোষণা দিয়েছেন।

লিখিত বক্তব্যে চাঁন উল্লেখ করেন, নাগরিক ফোরামের পক্ষ থেকে তিনি মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। দলীয় নেতা-কর্মী ও নগরীর সাধারন ভোটারদের অনুরোধের প্রেক্ষিতে তিনি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্তের ব্যাপারে চাঁন বলেন, ঢাকার বৈঠকে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি, তবে কেন্দ্রীয় এক পক্ষের সমর্থন তার (চাঁনের) ওপর রয়েছে। দলের বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার ব্যাপারে চাঁন বলেন, জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি জাতীয়ভাবে নির্বাচন বর্জন করেছে। দলের যারা পদ পদবীতে থেকেও এই নির্বাচনে অংশগ্রহন করছে তারাই বিদ্রোহীপ্রার্থী হয়ে দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ করছে। সেক্ষেত্রে দল কিংবা দলের কোন বড় নেতা কোন প্রার্থীকে সমর্থন কিংবা তার পক্ষে প্রচার-প্রচারনা করতে পারেনা। তিনি নাগরিক ফোরামের মনোনীত প্রার্থী বলেও সাংবাদিক সম্মেলনে ঘোষনা করা হয়।

তিনি আরো বলেন, দলে আমার কোনো পদ-পদবী নেই। দলের পদ-পদবী নিয়ে প্রার্থী হয়েছেন আহসান হাবিব কামাল সুতরাং সে (কামাল) বিদ্রোহী প্রার্থী। সাংবাদিক সম্মেলনে এবায়দুল হক চাঁন আরো বলেন, তিনি মেয়র নির্বাচিত হলে বরিশালকে মাদক ও ফরমালিন মুক্ত নগরী উপহার দেবেন। একই সাথে কোন প্রলোভন তাকে নির্বাচনী মাঠ থেকে সড়াতে পারবে না বলেও সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করা হয়।

অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যদের মধ্যে নাগরিক ফোরামের নেতা জাহাঙ্গীর আলম তালুকদার, দেলোয়ার হোসেনসহ বিএনপি ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী, নগরীর সাধারন ভোটাররা উপস্থিত ছিলেন।

প্রার্থীদের বিরুদ্ধে আচরন বিধি লংঘনের অভিযোগ ॥ বরিশাল সিটি করর্পোরেশনের (বিসিসি) নির্বাচনে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের বিরুদ্ধে আচরন বিধি লংঘন করে প্রচার-প্রচারনায় অভিযোগ উঠেছে। তফসিল অনুযায়ী আগামী ২৭ মে থেকে প্রচার-প্রচারনা শুরু করার নির্দেশ থাকা সত্বেও মেয়র ও কাউন্সিলর পদের অধিকাংশ প্রার্থীরাই গণসংযোগের নামে লিফলেট বিতরণসহ আচরন বিধি লংঘন করে সভা ও দান-অনুদান অব্যাহত রেখেছেন। সহকারী রিটানিং অফিসার ও আচরনবিধি মনিটরিং কমিটির সদস্য সচিব দুলাল তালুকদার এ অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আচরনবিধি লংঘনকারী প্রার্থীদের সনাক্ত করতে ইতোমধ্যে মাঠ পর্যায়ে তদারকি শুরু হয়েছে। যেকোন প্রার্থীর বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে প্রথম পর্যায়ে তাকে লিখিত সতর্ক ও পরে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিসিসির নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকেই মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা নির্বাচনী উঠান বৈঠকের নামে সভা শুরু করেছেন। গত ১২ মে মনোনয়নপত্র দাখিলের পর থেকেই প্রাথীরা গণসংযোগ ও দোয়া চেয়ে লিফলেট বিতরণও করছেন। মনোনয়নপত্র দাখিলের পর থেকে গণসংযোগ ও অতীতের কর্মকান্ডের ফিরিস্তি তুলে ধরে লিফলেটও বিতরন করা হচ্ছে। আবার অনেক প্রার্থীর পক্ষে স্থানীয় সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে দোয়া চাওয়া হচ্ছে। অধিকাংশ কাউন্সিলর প্রার্থীরা ঘূণিঝর মহাসেনের পর নিজ নিজ ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের মধ্যে ত্রাণের নামে দান-অনুদানও দিয়ে যাচ্ছেন। প্রার্থীদের এসব কৌশলী প্রচারনা প্রসঙ্গে সহকারী রিটানিং অফিসার দুলাল তালুকদার আরো বলেন, তফসিল অনুযায়ী ২৭ মে প্রতীক বরাদ্দের পর প্রচারনা শুরু করতে হবে। তফসিল ঘোষণার পর এবং প্রতীক বরাদ্দের আগে প্রার্থীদের দান-অনুদান ঘোষণা পুরোপুরি আচরনবিধি পরিপস্থি। প্রার্থীরা যা করছেন তা সবই আচরন বিধি লংঘনের মধ্যে পরে। তাই আচরনবিধি মনিটরিং কমিটির সদস্যরা মাঠপর্যায়ে খোঁজ খবর নেয়া শুরু করেছেন।

বাতিল হওয়া তিন কাউন্সিলর প্রার্থীকে বৈধ ঘোষণা ॥ মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ে বাতিল হওয়া ১১ কাউন্সিলর প্রার্থীর আপিল শুনানী শেষে তিনজন প্রার্থীকে বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। রবিবার সন্ধ্যায় আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মোঃ মজিবুর রহমান এ ঘোষণা দিয়েছেন। আপিলের মাধ্যমে বৈধ হওয়া কাউন্সিলর প্রার্থীরা হলেন-২নং ওয়ার্ডের আহছান উল্লাহ, ১৪নং ওয়ার্ডের শাকিল হোসেন পলাশ ও ২৯নং ওয়ার্ডের কবীর হোসেন হাওলাদার। অপর ৮ প্রার্থীর মধ্যে ১৭নং ওয়ার্ডের আব্দুল আজিজ সরদারের শুনানী এখনো অনুষ্ঠিত হয়নি।

আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আগামী ২২ মে পর্যন্ত এ শুনানী চলবে। তিনি আরো জানান, ঋণখেলাপীসহ হলফনামায় ভুল তথ্য দেয়ার অভিযোগে উল্লেখিত প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছিলো।