বিসিসি নির্বাচন : বরিশালে পোস্টার ছাড়াই জমজমাট প্রচারণা

বিশেষ প্রতিনিধি ॥  নির্বাচনী বিধি নিষেধের কারণে ও প্রতীক বরাদ্দ না হওয়ায় এখনো পোস্টার করেননি বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা। কোন প্রকার পোষ্টার ও লিফলেট ছাড়া এখনই জমজমাট হয়ে উঠেছে নির্বাচনী প্রচার প্রচারণা। নির্বাচনী গণসংযোগে ব্যাপক ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা। গত চারদিন থেকে প্রায় প্রতিদিনই এখানে কখনো মুষলধারে কখনো গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। কিন্তু এরপরেও নির্বাচনী উত্তাপের কমতি নেই এ মহানগরীতে। এখানে আওয়ামীলীগের দু’জন ও বিএনপির তিনজন মেয়র প্রার্থী হলেও ইতোমধ্যে নির্বাচন থেকে সরে গিয়ে দলীয় মনোনীত প্রার্থী আহসান হাবিব কামালের পক্ষে কাজ করার ঘোষণা দিয়েছেন মহানগর বিএনপির সাধারন সম্পাদক এ্যাডভোকেট কামরুল আহসান শাহীন। বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন জেলা বিএনপির সাবেক সাধারন সম্পাদক এবায়দুল হক চাঁন।

মহানগর আ’লীগের সভাপতি ও সাবেক মেয়র আলহাজ শওকত হোসেন হিরনকে আওয়ামীলীগ সমর্থিত ১৪ দলের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিলেও এখানে নিজ দলের বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে নির্বাচনী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন মহানগর যুবলীগের যুগ্ন আহবায়ক মাহমুদুল হক খান মামুন। ফলে এখানে দু’দলের চারজন মেয়র প্রার্থী মাঠে থাকলেও মূলত নির্বাচনী প্রচার প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছেন শওকত হোসেন হিরন, আহসান হাবিব কামাল ও মাহমুদুল হক খান মামুন। এছাড়াও বরিশালের ৩০ টি সাধারন ওয়ার্ডে সাধারন কাউন্সিলর পদে ১৪১ জন ও ১০টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ৪৮ জন কাউন্সিলর প্রার্থীরা জমজমাট ভাবে নির্বাচনী প্রচার প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছেন।

লড়াই হবে দ্বিমুখী

বিএনপি-জামায়াতের ১৮ দলীয় জোটের মনোনীত প্রার্থী আহসান হাবিব কামালের পক্ষে সদর আসনের এমপি মজিবর রহমান সরোয়ার এখানে ফিরে এসে গণসংযোগ শুরু করেছেন। একইদিন মাঠে নেমেছেন বিএনপি’র বিদ্রোহী প্রার্থী এবায়দুল হক চাঁন। আগেভাগেই নির্বাচনী মাঠ দখল করে রেখেছেন মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি আলহাজ শওকত হোসেন হিরন ও বিদ্রোহী প্রার্থী যুবলীগ নেতা মাহমুদুল হক খান মামুন। চার মেয়র প্রার্থী নির্বাচনের মাঠে নামায় জমে উঠেছে লড়াই। চলছে ভোটের হিসেব-নিকেশ। বিগত দু’টি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে চার প্রার্থীর মধ্যে লড়াই হলেও এবার দ্বিমুখী লড়াই হবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। দু’জোটের দু’শক্তিশালী প্রার্থী সদ্য বিদায়ী মেয়র শওকত হোসেন হিরন ও জেলা বিএনপির সভাপতি আহসান হাবিব কামালের মধ্যেই মূল প্রতিদ্বন্ধিতা হবে বলে মনে করছেন সাধারন ভোটাররা। সেক্ষেত্রে বিএনপির প্রার্থীর ভরসা ৬০ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় এ মহানগরীর বিএনপির ভোট ব্যাংক। আওয়ামীলীগের প্রার্থী শওকত হোসেন হিরনের ভরসা গত ৪ বছর ৭ মাসে নগরীর ব্যাপক উন্নয়ন। তবে হিরনের জন্য চ্যালেঞ্জ হচ্ছে এবার তাকে মেয়র হওয়ার জন্য গত বারের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ ভোট পেতে হবে।

গত নির্বাচনে শওকত হোসেন হিরন ৪৬ হাজার ৭৯৬ ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধি ছিলেন শিল্পপতি এস. সরফুদ্দিন আহমেদ সান্টু। তিনি পেয়েছিলেন ৪৬ হাজার ২০৮ ভোট। আহসান হাবিব কামাল ২৬ হাজার ৪১৬ ভোট এবং এবায়েদুল হক চাঁন পেয়েছিলেন ১৯ হাজার ৬২৬ ভোট। এবার হিরনের সেই নিকটতম প্রতিদ্বন্ধী সরফুদ্দিন সান্টু নির্বাচনে নেই। তার প্রাপ্ত ৪৬ হাজার ২০৮ ভোট এবার বিএনপির প্রার্থী নাকি আওয়ামীলীগ প্রার্থীর বাক্সে যাবে সেটাই মূল ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়িয়েছে। দু’দলের দু’বিদ্রোহী প্রার্থী ভোটের মাঠে তেমন কোনো প্রভাব বিস্তার করতে পারবেন না বলে সাধারণ ভোটাররা মনে করছেন।

উন্নয়ন কর্মকান্ডে নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করে হিরনের সমর্থকেরা মনে করছেন তাদের দলের সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে একযোগে মাঠে কাজ করলে তাদের প্রার্থীর বিজয় শতভাগ। আবার আহসান হাবিব কামালের সমর্থকেরা মনে করছেন মজিবর রহমান সরোয়ার যদি শেষ পর্যন্ত ভোটের মাঠে আন্তরিকভাবে কাজ করেন তাহলে পুনরায় নগর ভবন বিএনপির দখলে আসবে।