বিশেষ প্রতিনিধি ॥ বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের (বিসিসি) নির্বাচনে আজ রবিবার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষদিনে বিএনপির দু’মেয়র প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। ফলে মেয়র পদে বিএনপির একক প্রার্থী নিশ্চিত হয়েছে।
অপরদিকে একক প্রার্থী নিশ্চিত করতে আওয়ামীলীগের সিনিয়র নেতাদের আপ্রান চেষ্ঠাও অবশেষে ব্যর্থ হয়ে গেছে। নির্বাচনী মাঠে দলের মনোনীত প্রার্থী আলহাজ শওকত হোসেন হিরনের পাশাপাশি বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে রয়ে গেছেন মহানগর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মাহমুদুল হক খান মামুন। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারে কেন্দ্রের চাঁপ এড়াতে শনিবার বিকেল থেকেই মামুন গাঁ ঢাকা দিয়েছেন। তার মোবাইল ফোনও রয়েছে বন্ধ। মামুনের ঘণিষ্ঠজনেরা জানিয়েছেন, রবিবার সন্ধ্যার আগে তাকে (মামুনকে) পাওয়া যাবে না। এর আগে খান মামুন জানিয়েছিলেন, হুমকি-ধামকি বা অনুরোধে আমি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াচ্ছি না। আমি আমার গ্রহণযোগ্যতা যাচাই করতে নির্বাচনের শেষপর্যন্ত লড়াই করে যাব। আ’লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মাঠে থাকায় অনেকটাই বেকায়দায় পড়তে পারেন আ’লীগ সমর্থিত সদ্য বিদায়ী মেয়র আলহাজ শওকত হোসেন হিরন।
সবমিলিয়ে এ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে পাঁচজন মেয়র প্রার্থীর মধ্যে দু’জন, সাধারন কাউন্সিলর পদে ২৪ জন ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে দু’জন প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। বর্তমানে তিনজন মেয়র প্রার্থীসহ ১১৫ জন সাধারণ কাউন্সিলর এবং ৪৭ জন সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থী মাঠে রয়েছেন।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, আজ রবিবার দুপুরে বিএনপির মেয়র প্রার্থী এবায়দুল হক চাঁন ঢাকায় থাকায় তার পক্ষে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করতে রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে যান চাঁনের পুত্র আমানুল হক চিশতী অনুপ। তবে বিধি অনুযায়ী তার হাতে প্রত্যাহারপত্র থাকলেও প্রত্যাহারের জন্য ক্ষমতা অর্পণের কাগজ দেখাতে ব্যর্থ হওয়ায় তা গ্রহণ করেননি রিটার্নিং অফিসার। পরবর্তীতে এবায়দুল হক চাঁন ওইদিন দুপুর আড়াইটার দিকে হেলিকপ্টারযোগে ঢাকা থেকে বরিশালে এসে স্ব-শরীরে রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে গিয়ে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন। বিএনপির অপর বিদ্রোহী প্রার্থী মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট কামরুল আহসান শাহীন আগেই বিএনপির মনোনীত মেয়র প্রার্থী আহসান হাবিব কামালকে সমর্থন দিয়েছেন। তিনিও দুপুরে তার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
সূত্রমতে, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষদিন ছিলো আজ রবিবার। আ’লীগের পক্ষ থেকে শওকত হোসেন হিরনকে একক প্রার্থী করতে শেষবারের মতো বিদ্রোহী প্রার্থী মাহমুদুল হক খান মামুনকে ম্যানেজ করতে শনিবার রাতে দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আ.ফ.ম বাহাউদ্দিন নাছিম বরিশাল এসেছিলেন। তার আগমনের খবর পেয়েই মামুন শনিবার বিকেল থেকে গাঁ ঢাকা দিয়েছেন। ফলে আ’লীগের শেষ প্রচেষ্টাও ব্যর্থ হয়েছে। এরপূর্বে মামুনকে ম্যানেজ করতে জেলা আ’লীগের সভাপতি আলহাজ আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ, উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমু-এমপি ও অগ্রণী ব্যাংকের পরিচালক এ্যাডভোকেট বলরাম পোদ্দারসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হন। ফলে মাহমুদুল হক খান মামুনকে যুবলীগ থেকে বহিস্কারের ইঙ্গিত দিয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় নেতারা।
রিটানিং অফিসার মোঃ মুজিবুর রহমান জানান, পাঁচজন মেয়র প্রার্থীর মধ্যে দু’জন, সাধারন কাউন্সিলর পদে ২৪ জন ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে দু’জন প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। বর্তমানে তিনজন মেয়র প্রার্থীসহ ১১৫ জন সাধারণ কাউন্সিলর এবং ৪৭ জন সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থী মাঠে রয়েছেন। রির্টানিং অফিসারের কার্যালয়ে গতকাল রবিবার সকাল দশটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত এ প্রত্যাহারের কার্যক্রম চলে।
জেলা বিএনপির সভাপতির পদ ছাড়লেন কামাল ॥ বরিশাল জেলা (দক্ষিণ) বিএনপির সভাপতির পদ থেকে অব্যহতি চেয়ে বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার কাছে আবেদন করেছেন বিসিসির নির্বাচনে বিএনপির মনোনীত মেয়র প্রার্থী আহসান হাবিব কামাল। বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মজিবর রহমান সরোয়ার-এমপি এ তথ্যের সত্যতা স্বীকার করেছেন। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী এবায়দুল হক চাঁনকে প্রার্থীতা প্রত্যাহারে রাজি করাতে অভ্যন্তরীন সমঝোতা অনুযায়ী কামাল সভাপতির পদটি ছেড়েছেন। ওইপদটি এবায়দুল হক চাঁনকে দেয়ার জন্য দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনার পর সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তবে বিএনপির সিনিয়র নেতারা বলেছেন, দল যেহেতু সরাসরি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেনা। তাই দলীয় পদ ছেড়ে বিসিসি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন কামাল। অভ্যন্তরীন সমঝোতা অনুযায়ী শনিবার সকালে দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতির পদ থেকে অব্যহতি চেয়ে বিএনপির চেয়ারপার্সনের কাছে আবেদনপত্র পাঠিয়েছেন আহসান হাবিব কামাল। আর খালেদা জিয়া কামালের পদত্যাগপত্র গ্রহনের পরই গতকাল রবিবার দুপুরে চাঁন হেলিকপ্টারযোগে ঢাকা থেকে বরিশালে এসে তার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে ওইদিনই তিনি পূর্ণরায় হেলিকপ্টারযোগে ঢাকায় গিয়েছেন। দলীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, রবিবার রাতে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে চাঁনকে জেলা বিএনপির সভাপতির পদ দেয়া হচ্ছে। এবায়দুল হক চাঁন দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতির পদ নিয়ে খুব দ্রুত বরিশালে এসে বিএনপির মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে কাজ করবেন বলেও সূত্রগুলো জানিয়েছেন।
যে কারনে বরিশালে হরতালের প্রভাব পরেনি ॥ বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনকে সামনে রেখে নতুন করে কোন মামলায় না জড়াতেই গতকাল রবিবার বিএনপির ডাকা সকাল-সন্ধ্যা হরতালে কোনো ধরনের ঝুঁকি নেয়নি বিএনপির নেতা-কর্মীরা। হরতালের পক্ষে বরিশালের কোথাও কোনো ধরনের পিকেটিংয়ের খবর পাওয়া যায়নি। দায়সারা ভাবে সকালে হরতালের সমর্থনে ক্ষুদ্র একটি মিছিল ও সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেছে মহানগর বিএনপি। বিএনপির একাধিক নেতারা জানান, সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে এবারই প্রথমবারের মতো মেয়র পদে বিএনপি একক প্রার্থী দিতে সক্ষম হয়েছে। ফলে এবারের নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থীর নির্বাচিত হওয়ার শতভাগ সম্ভাবনা রয়েছে। তাই হরতালে পিকেটিং করে কোনো ধরনের মামলায় না জড়াতে সিনিয়র নেতাদের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।