বিশেষ প্রতিনিধি ॥ তৃতীয়বারের ন্যায় আগামী ১৫ জুন বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের (বিসিসি) নির্বাচনকে নিয়ে বিশেষ এক জড়িপে মেয়র পদপ্রার্থী হিসেবে জনপ্রিয়তায় শীর্ষস্থান দখল করেছেন সম্মিলিত নাগরিক ফোরামের মেয়র প্রার্থী আলহাজ শওকত হোসেন হিরন। এবার নগরীর ভোটারদের মধ্যে বিশেষস্থান দখল করেছেন নতুন ভোটাররা। ভোটের জয়-পরাজয়ে নতুন ভোটারদের থাকবে বিশাল ভূমিকা। নতুন এ ভোটাররা শতকরা ৯৯ ভাগ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। মহানগরীর সর্বমোট ২ লক্ষ ১০ হাজার ৫৩০ জন ভোটারের মধ্যে নতুন ভোটার হচ্ছেন, ১৮ হাজার ৩০৩ জন। নতুন ভোটারদের ভাবনা নিয়ে এ বিশেষ অনুসন্ধান।
বরিশাল বিএম কলেজের ব্যবস্থাপনা চতুর্থ বর্ষের ছাত্র গোলাম আম্বিয়া শুভ এবারই প্রথম ভোটার হয়েছেন। তিনি জানান, প্রার্থীর দলীয় পরিচয় তার কাছে বিবেচ্য বিষয় নয়। নগরীর উন্নয়নই হচ্ছে তার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। একই কলেজে ব্যবস্থাপনা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী কামরুন নাহার সাথী জানান, প্রার্থী যে দলেরই হোক না কেন; নগরীর উন্নয়ন হবে ভোট প্রদানের প্রধান বিবেচ্য বিষয়। এমএসএস শেষবর্ষের ছাত্রী শাহনাজ বেগম বলেন, অতীতের অন্ধকার নগরী যার সময়ে উন্নয়নের মাধ্যমে আলোকিত হয়েছে তাকেই ভোট দিব। বরিশাল সরকারি কলেজের সমাজকল্যাণে অনার্স করছেন রাশেদ খান নাদিম। তিনি বলেন, প্রার্থীদের অতীত মূল্যায়ন করেই ভোট দিব।
বরিশাল সরকারি মহিলা কলেজে বি.কম এ পড়াশোনা করছেন সুমনা আক্তার প্রিয়া। তিনি বলেন, দলীয় পরিচয়ে ভোট প্রদানে কোন বিবেচ্য বিষয় হতে পারে না। কারন এটা দলীয় নির্বাচন নয় দাবি করে তিনি আরো বলেন, প্রাচ্যের ভেনিসখ্যাত বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে দু’দলের মনোনয়ন নিয়ে যে দু’জন মেয়র প্রার্থী প্রতিদ্বন্ধীতা করছেন তারা দু’জনেই এখানে মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। সেখানে সর্বস্তুরের ভোটারদের কাছে আজ স্পষ্ট হয়ে গেছে, কার সময়ে কতো বেশি উন্নয়ন হয়েছে। সে হিসেব করেই উন্নয়ন ও লুটপাটকে দু’ভাগে ভাগ করে ভোটাররা দু’প্রার্থীকে দু’পাল্লায় ফেলে যোগ্যপ্রার্থীকেই ভোট দেবেন বলেও তিনি আশা করেন।
নগরীর পলাশপুর এলাকার বাসিন্দা প্রিয়া আক্তার উন্নয়নকে সবার আগে বিবেচনায় নিয়েই ভোট দেবেন বলে জানিয়েছেন। নগরীর ২৪নং ওয়ার্ড গ্যাস্টার বাইন এলাকার খান সড়কের বাসিন্দা ও নতুন ভোটার রাকিব খান বলেন, আমাদের এলাকায় কোন স্কুল নেই। একটি প্রাইমারি ও একটি হাইস্কুল খুবই প্রয়োজন। যে প্রার্থী এই এলাকায় স্কুল প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্র“তি দেবেন, তার পক্ষেই আমরা নতুন ভোটাররা ভোট দিব।
নগরীর হাসপাতাল রোড এলাকার বাসিন্দা ও ব্যবসায়ী মোঃ সেলিম আহম্মেদ বলেন, বরিশাল মহানগরীর উন্নয়ন এবং আধুনিক শহর গড়ে তুলতে আলহাজ শওকত হোসেন হিরনের কোন বিকল্প এখানে এখনো তৈরি হয়নি। মাত্র পাঁচ বছর আগে বরিশালের যে দুর্দশাগ্রস্ত চেহারা ছিলো সে জায়গা থেকে আজ মহানগরীতে ব্যাপক উন্নয়ন ঘটিয়েছেন শওকত হোসেন হিরন। রাজনৈতিক চিন্তা-চেতনায় ভিন্নতা থাকলেও একজন নাগরিকের দায়বদ্ধতার স্থান থেকে আমি তাকেই ভোট দেব। তিনি আধুনিক বরিশালের রূপকার শওকত হোসেন হিরনের অসমাপ্ত কাজকে সমাপ্ত করতে আবারো হিরনকে মেয়র পদে নির্বাচিত করার জন্য দলমত নির্বিশেষে নগরবাসীর প্রতি আহবানও করেছেন।
প্রতীক বরাদ্দ
বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনের প্রার্থীদের মধ্যে আজ সোমবার সকালে প্রতীক বরাদ্দ করা হয়েছে। সকাল দশটায় আঞ্চলিক নির্বাচন অফিসারের কার্যালয়ে এ প্রতীক বরাদ্দ করা হয়। রির্টানিং অফিসার মোঃ মুজিবুর রহমান জানান, মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে আওয়ামীলীগ সমর্থিত ১৪ দলের মনোনীত ও সম্মিলিত নাগরিক কমিটির মেয়র প্রার্থী. মহানগর আ’লীগের সভাপতি বিদায়ী মেয়র আলহাজ শওকত হোসেন হিরন তার গতবারের নির্বাচনী প্রতীক টেলিভিশন মার্কা পেয়েছেন। বিএনপির মনোনীত জাতীয়তাবাদী নাগরিক পরিষদের মেয়র প্রার্থী আহসান হাবিব কামাল পেয়েছেন আনারস মার্কা এবং আ’লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মহানগর যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক মাহমুদুল হক খান মামুন পেয়েছেন দোয়াত কলম প্রতীক।
এছাড়াও সাধারন কাউন্সিলর পদে ১১৫ জন এবং সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৪৫ জন প্রার্থীর মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ করা হয়েছে।
প্রতীক বরাদ্দের সময় ১৪ দল সমর্থিত সম্মিলিত নাগরিক কমিটির মেয়র প্রার্থী আলহাজ শওকত হোসেন হিরন ও তার সমর্থক জেলা আ’লীগের সাধারন সম্পাদক এ্যাডভোকেট তালুকদার মোঃ ইউনুস-এমপি, অগ্রনী ব্যাংকের পরিচালক এ্যাডভোকেট বলরাম পোদ্দারসহ অন্যান্য নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। ১৮ দল সমর্থিত জাতীয়তাবাদী নাগরিক পরিষদের মেয়র প্রার্থী আহসান হাবিব কামালের পক্ষে দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক বিলকিস আকতার জাহান শিরিন ও তাদের সমর্থকেরা উপস্থিত থাকলেও আ’লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মাহমুদুল হক খান মামুনের পক্ষে কেউ উপস্থিত ছিলেন না। তবে মাহমুদুল হক খান মামুন প্রথমে দেয়াল ঘড়ি প্রতীক চেয়েছিলেন। কিন্তু এ বছর মেয়র পদে ওই প্রতীক না থাকায় তাকে তা দেয়া সম্ভব হয়নি। পরে তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে দোয়াত-কলম প্রতীক দেয়া হয়।