উজিরপুরে সাংসদ মনির সাথে উপজেলা চেয়ারম্যানের হাতাহাতি

স্টাফ রিপোর্টার ॥  বরিশাল-২ (উজিরপুর-বানারীপাড়া) আসনের সংসদ সদস্য ও আ’লীগ নেতা সৈয়দ মনিরুল ইসলাম মনির সাথে আজ মঙ্গলবার দুপুরে উজিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বাদলের হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয় জনতা সাংসদ মনি ও তার পুত্র রিয়াজুল ইসলামকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে প্রায় তিনঘন্টা অবরুদ্ধ করে জুতা ও ঝাড়– মিছিল করেছে। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আসে।

উজিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জাসদ নেতা আবুল কালাম আজাদ বাদল জানান, অতিসম্প্রতি উজিরপুরের অসহায় মানুষদের জন্য ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয় থেকে টি.আর ও কাবিখার ৫’শ মে. টন মালামাল বিশেষভাবে বরাদ্দ আনা হয়। এমপি মনি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর সাথে দেখা করে ওই বরাদ্দ বাতিল করেন। বিষয়টি জানার পর উপজেলা আ’লীগের সভাপতি, সম্পাদকসহ নয়টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানরা মন্ত্রীর সাথে দেখা করে বাতিল হওয়া প্রোজেক্ট সম্পর্কে জানতে চাইলে সেখান থেকে জানানো হয়, এমপি মনি ওই বরাদ্দ বাতিল করার সুপারিশ করেছেন। এছাড়া সাংসদ মনি ও তার পুত্র বিভিন্ন সময় জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে বিভিন্ন প্রকল্পের কমিশন নেয়া, দলীয় ক্ষমতার অপব্যবহার, চাকুরির নামে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়াসহ এলাকায় জামায়াত-শিবিরকে প্রকাশ্যে সেল্টার দেয়ার প্রতিবাদ করায় মনি ও তার পুত্র রিয়াজুল ক্ষুব্ধ হয়ে দলীয় নেতা-কর্মী ও জনপ্রতিনিধিদের ওপর নানাভাবে হয়রানি করে আসছে।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, উল্লেখিত ঘটনার জেরধরে আজ মঙ্গলবার দুপুর বারোটার দিকে উজিরপুর উপজেলা আইন শৃঙ্খলা সমন্বয় সভায় উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বাদল ও স্থানীয় সাংসদ মনিরুল ইসলাম মনির মধ্যে বাকবিতন্ডা হয়। একপর্যায়ে হলরুম থেকে উপজেলা চেয়ারম্যান বের হলে সাংসদ মনির পুত্র রিয়াজুল ইসলাম সুমন উপজেলা চেয়ারম্যান বাদলকে মারার জন্য উত্তেজিত হয়। মুহুর্তের মধ্যে বিষয়টি উপজেলা সদরে ছড়িয়ে পড়লে প্রায় সহস্রাধীক জনতা জড়ো হয়ে সাংসদ মনিরুল ইসলাম মনি ও তার পুত্রকে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে প্রায় তিনঘন্টা অবরুদ্ধ করে জুতা ও ঝাড়– নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেন। বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসি এমপি মনির পদত্যাগ দাবিসহ তার বিরুদ্ধে ব্যাপক দূর্নীতি-স্বজনপ্রীতি ও অনিয়মের অভিযোগ এনে উপজেলা চত্বরে পথসভাও করেন। সভায় মনি ও তার সন্ত্রাসী পুত্র রিয়াজুল ইসলাম সুমন কর্তৃক চেয়ারম্যান বাদলের ওপর হামলার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করা হয়। সভায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, সমাজ সেবক শংকর মজুমদার, রিয়াজ উদ্দিন মিয়া, সোহেল হাওলাদার, মনিরুজ্জামান লিখন প্রমূখ।

উজিরপুর থানা পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে হিমসিম খাওয়ায় বরিশাল পুলিশ সুপার একেএম এহসানউল্লাহ উজিরপুরে এসে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে বসে এমপি মনি ও উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদকে নিয়ে ঘটনাটির মীমাংসার চেষ্টা চালায়। এসময় তার (এসপি) উপস্থিতিতেই সাংসদ মনি ও তার পুত্র রিয়াজুল ইসলাম সুমনের সাথে উপজেলা চেয়ারম্যান বাদলের হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে পুলিশ সুপার উভয়পক্ষকে শান্ত থাকার অনুরোধ করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। একইসাথে তিনি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হলে থানা পুলিশকে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ারও নির্দেশ দেন। পরবর্তীতে প্রায় তিন ঘন্টা পর (বিকেল তিনটার দিকে) থানা পুলিশের সহযোগীতায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আসে।