বিশেষ প্রতিনিধি ॥ বরিশাল-২ (উজিরপুর-বানারীপাড়া) আসনের সংসদ সদস্য ও উপজেলা চেয়ারম্যানের সমর্থকদের মধ্যে আজ মঙ্গলবার বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কয়েক দফা সংঘর্ষ, ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। সাংসদ পুত্র রিয়াজ উপজেলা চেয়ারম্যানের সমর্থকদের লক্ষ্য করে গুলি বর্ষণ করায় বিক্ষুব্ধ জনতা সাংসদ মনিরুল ইসলাম মনি’র গাড়ি ভাংচুর করেছে। সংঘর্ষে পুলিশ, সাংবাদিকসহ কমপক্ষে ৩০ জন আহত হয়েছে। চেয়ারম্যানের সমর্থকেরা এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত উজিরপুর-বরিশাল সড়ক অবরোধ করে রেখেছে। এলাকায় চরম উত্তেজনা দেখা দিলে বরিশাল থেকে অতিরিক্ত পুলিশ, র্যাব ও দাঙ্গা পুলিশ এনে উপজেলা পরিষদ চত্বরে মোতায়েন করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, আজ মঙ্গলবার দুপুর বারোটার দিকে উজিরপুর উপজেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভা উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় পূর্ব বিরোধের জেরধরে উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বাদল এবং স্থানীয় সাংসদ ও আওয়ামীলীগ নেতা মনিরুল ইসলাম মনির মধ্যে বাকবিতন্ডা হয়। একপর্যায়ে হলরুম থেকে উপজেলা চেয়ারম্যান বের হলে সাংসদ মনির পুত্র রিয়াজুল ইসলাম সুমন উপজেলা চেয়ারম্যান বাদলকে মারার জন্য ধাওয়া করে। মুহুর্তের মধ্যে এ খবর সর্বত্র ছড়িয়ে পরলে উপজেলা চেয়ারম্যানের শত শত সমর্থকেরা জুতা ও ঝাঁড়– নিয়ে সাংসদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। এসময় উভয় সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। দুপুর দুইটা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা পর্যন্ত কয়েক দফা সংঘর্ষ চলাকালীন সময় সাংসদ পুত্র রিয়াজ কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলিবর্ষণ করে। হামলা ও সংঘর্ষে উজিরপুর থানার এ.এস.আই স্বপন চন্দ্র দে, কনেষ্টবল দেলোয়ার হোসেন, স্থানীয় সাংবাদিক আঃ রহিম সরদার, শাকিল মাহাবুদ বাচ্চু, নুরুল ইসলাম, চেয়ারম্যান সমর্থক আঃ সালাম, শাহিন, পুলিন, কালাম ফরাজী, মাহাবুব হোসেন, এমপি সমর্থক বাদল হোসেন, এনায়েত কবির, মিজানুর রহমানসহ উভয় গ্র“পের কমপক্ষে ৩০ জন আহত হয়েছে। গুরুতর আহত আটজনকে উজিরপুর ও বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত রাত আটটায় বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসি সাংসদ মনিরুল ইসলাম মনি ও তার পুত্রকে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করে রেখেছে। এসময় বিক্ষুব্ধরা জুতা ও ঝাড়– নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেন। বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসি এমপি মনির পদত্যাগ দাবিসহ তার বিরুদ্ধে ব্যাপক দূর্নীতি-স্বজনপ্রীতি ও অনিয়মের অভিযোগ এনে উপজেলা চত্বরে পথসভাও করেন। সভায় মনি ও তার সন্ত্রাসী পুত্র রিয়াজুল ইসলাম সুমন কর্তৃক গুলিবর্ষণ ও এমপির মদদে তার সন্ত্রাসী ক্যাডার বাহিনীর হামলার ঘটনায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন। সভায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, সমাজ সেবক শংকর মজুমদার, রিয়াজ উদ্দিন মিয়া, সোহেল হাওলাদার, মনিরুজ্জামান লিখন প্রমূখ।
উজিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জাসদ নেতা আবুল কালাম আজাদ বাদল জানান, অতিসম্প্রতি উজিরপুরের অসহায় মানুষদের জন্য ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয় থেকে টি.আর ও কাবিখার ৫’শ মে. টন মালামাল বিশেষভাবে বরাদ্দ আনা হয়। এমপি মনি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর সাথে দেখা করে ওই বরাদ্দ বাতিল করেন। বিষয়টি জানার পর উপজেলা আ’লীগের সভাপতি, সম্পাদকসহ নয়টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানরা মন্ত্রীর সাথে দেখা করে বাতিল হওয়া প্রোজেক্ট সম্পর্কে জানতে চাইলে সেখান থেকে জানানো হয়, এমপি মনি ওই বরাদ্দ বাতিল করার সুপারিশ করেছেন। এছাড়া সাংসদ মনি ও তার পুত্র বিভিন্ন সময় জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে বিভিন্ন প্রকল্পের কমিশন নেয়া, দলীয় ক্ষমতার অপব্যবহার, চাকুরির নামে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়াসহ এলাকায় জামায়াত-শিবিরকে প্রকাশ্যে সেল্টার দেয়ার প্রতিবাদ করায় মনি ও তার পুত্র রিয়াজুল ক্ষুব্ধ হয়ে দলীয় নেতা-কর্মী ও জনপ্রতিনিধিদের ওপর নানাভাবে হয়রানি করে আসছে। চেয়ারম্যান বাদল আরো অভিযোগ করেন, সাংসদ মনিরুল ইসলাম মনির সন্ত্রাসী ক্যাডারদের গুলি বর্ষণ ও হামলার পর পরই উপজেলা সদরে আতংক ছড়িয়ে পরে। উপজেলার বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা প্রানভয়ে দিগবিদিগ ছুটাছুটি করতে থাকে। থানা পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে ব্যর্থ হলে বরিশাল পুলিশ সুপার একেএম এহসানউল্লাহ সহ অন্যান্য পুলিশ কর্মকর্তারা দ্বিতীয় দফায় সন্ধ্যায় অতিরিক্ত পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনেন।
উজিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত ওসি (এস.আই) মোঃ হুমায়ুন বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের আনার চেষ্টা চলছে। অভিযোগের ব্যাপারে জানার জন্য সাংসদ মনিরুল ইসলাম মনি ও তার পুত্র রিয়াজুল ইসলামের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।