বিসিসি নির্বাচন : বরিশালে হিরনের প্রচারণায় শঙ্কিত কামাল

বিশেষ প্রতিনিধি ॥  বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের (বিসিসি) নির্বাচনের প্রচারণার তৃতীয়দিনে সম্মিলিত নাগরিক ফোরামের মেয়র প্রার্থী ও সদ্য বিদায়ী মেয়র আলহাজ শওকত হোসেন হিরনের টেলিভিশন মার্কার সমর্থনে নগরীতে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে।

মঙ্গলবার আ’লীগের সকল নেতা-কর্মীদের মান-অভিমান ভাঙ্গিয়ে হিরনের-টেলিভিশন মার্কার পক্ষে নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের মাঠে নামানোর জন্য জেলা আ’লীগের সভাপতি আলহাজ আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর আয়োজনে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকের পর দলের নেতা-কর্মী ও সমর্থকেরা একযোগে মাঠে নামায় গতকাল বুধবার নগরীর আকাশে-বাতাসে মাইকে ধ্বনিত হতে থাকে হিরনের প্রতীক টেলিভিশনের নাম। নগরীতে ব্যাপক পোস্টারও সাঁটানো হয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগেও ব্যস্ত সময় কাটান হিরনসহ আ’লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আ.ফ.ম বাহাউদ্দিন নাছিম, জেলা আ’লীগের সাধারন সম্পাদক এ্যাডভোকেট তালুকদার মোঃ ইউনুস-এমপি, অগ্রনী ব্যাংকের পরিচালক এ্যাডভোকেট বলরাম পোদ্দার, যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক তুহিনসহ জেলা ও মহানগর আ’লীগ ও তার সহযোগী সংগঠন এবং ১৪ দল ও সম্মিলিত নাগরিক ফোরামের নেতৃবৃন্দরা।

অন্যদিকে বিএনপি সমর্থিত জাতীয়তাবাদী নাগরিক পরিষদের মেয়র প্রার্থী আহসান হাবিব কামাল সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ (বিএমপি) কমিশনারসহ বিএমপির আওতাধীন কোতয়ালী মডেল থানা, বিমান বন্দর থানা ও কাউনিয়া থানার তিন ওসি এবং উপ-পরিদর্শক (এস.আই) মহিউদ্দিন, এস.আই মুকুল, এস.আই শ্যামলের বদলির দাবিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবরে লিখিত আবেদন করেছেন। একই অনুলিপি তিনি বরিশালের রিটার্নিং অফিসারকে দিয়েছেন। আবেদন প্রাপ্তির সত্যতা স্বীকার করে রিটার্নিং অফিসার মোঃ মুজিবুর রহমান বলেন, আবেদনটি যেহেতু প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবরে করা হয়েছে। তাই যা কিছু সিদ্ধান্ত নেয়ার তিনিই নিবেন।

সরোয়ারকে তুলোধুলো

অপরদিকে বিএনপি সমর্থিত জাতীয়তাবাদী নাগরিক পরিষদের প্রার্থী আহসান হাবিব কামালের আনারস মার্কার সমর্থনে স্বেচ্ছাসেবক দলের কর্মী সভায় বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও কামালের নির্বাচন পরিচালনার প্রধান সমন্বয়কারী এ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার-এমপি’র দেয়া আপত্তিকর বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেছেন মুক্তিযোদ্ধাসহ স্বপক্ষের শক্তি ও নগরীর সুধী সমাজের নেতৃবৃন্দরা।

মঙ্গলবার অশ্বিনী কুমার টাউন হলের সম্মুখে অনুষ্ঠিত সভায় সরোয়ার বলেন, দেশ পরিচালনায় ব্যর্থ আ’লীগের মার্কা টেলিভিশন, সংবিধান থেকে বিসমিল্লাহ উঠিয়ে দেয়া দলের মার্কা-টেলিভিশন, ব্লগার-নাস্তিকদের মার্কা-টেলিভিশন সাধারণ মানুষের মার্কা নয়। এমপি সরোয়ারের এমন বক্তব্যকে সাম্প্রদায়িক উস্কানি বলে মনে করছেন সুধী সমাজের নেতৃবৃন্দরা।

নগরীর বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষ এ ধরনের বক্তব্য নির্বাচনী পরিবেশ নষ্ট করবে বলেও মনে করেন। বিসিসি নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার মোঃ মজিবর রহমান বলেন, এ ধরনের বক্তব্য আচরণবিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। ইসির ৫টি মনিটরিং দল মাঠে রয়েছে। ঘটনাটি হয়তো তাদের নজরে পড়েনি। এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ পেলে অবশ্যই আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।

অন্যদিকে, সম্মিলিত নাগরিক কমিটির আহবায়ক ও বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ প্রফেসর মোঃ হানিফ বলেন, এ ধরনের বক্তব্য প্রার্থীতা বাতিলযোগ্য অপরাধের শামিল। তিনি এ ব্যাপারে রিটার্নিং অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ করবেন বলেও উল্লেখ করেন। অসাম্প্রদায়িক ও সমাজকল্যাণমূলক সংগঠন জনস্বার্থ রক্ষা কমিটির সদস্য সচিব মুনাওয়ারুল ইসলাম অলি মজিবর রহমান সরোয়ারের বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানিয়ে রিটার্নিং অফিসারের কাছে এ বক্তব্যের বিরুদ্ধে কার্যকরী আইনী ব্যবস্থা নেয়ার জন্যও দাবি করেছেন। সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)’র বরিশাল শাখার সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আক্কাস হোসেন বলেন, এটা আচরণবিধি-বহির্ভূত বক্তব্য এবং নির্বাচনী বিধিতে বিচারযোগ্য। সরোয়ারকে ইঙ্গিত করে আক্কাস হোসেন বলেন, তার যে জীবন পরিক্রমা, তাতে তার মুখে এ ধরনের কথা মানায় না। একই সভায় বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী আহসান হাবিব কামালও বক্তব্য রাখেন। তিনিও ১৪ দল সমর্থিত প্রার্থীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে আনারস মার্কায় ভোট চান।

সিদ্ধান্তহীনতায় জাপা

বিসিসি’র নির্বাচনে প্রার্থী সমর্থনে সিদ্ধান্তহীনতায় ভূগছেন জাতীয় পার্টি (জাপা)’র নেতৃবৃন্দরা। এ নির্বাচনে জাপার কোন মেয়র প্রার্থী নেই। তাই কোন প্রার্থীকে সমর্থন দেয়া হবে কিনা সে বিষয়েও কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি নেতৃবৃন্দরা। প্রার্থী সমর্থনে দ্বিধাবিভক্ত জাতীয় পার্টির নেতৃবৃন্দরা তাই দলের চেয়ারম্যান এইচ.এম হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন।

জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি মহসিনুল ইসলাম হাবুল জানান, জেলা ও মহানগর কমিটি এবং তার সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দদের নিয়ে ইতোমধ্যে একাধিকবার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। কোন বৈঠকেই চূড়ান্ত কোন সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব হয়নি। বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, আ’লীগের প্রার্থী আলহাজ শওকত হোসেন হিরন একসময় বরিশালের জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি আ’লীগে যোগদান করেছেন। বরিশালের উন্নয়ন ও ব্যক্তি হিসেবে তার ওপরই নেতৃবৃন্দের ভোট এসেছে বেশি। তার পরেও দলের মহাসচিব আজ ৩০ মে বরিশালে আসার কথা রয়েছে। তাকে সকল বিষয় জানানোর পর চেয়ারম্যানের সিদ্ধান্ত নিয়েই প্রার্থী সমর্থন দেয়া হবে। বরিশাল মহানগরে জাপার প্রায় ২০ হাজার ভোট রয়েছে।

বিদ্রোহী মামুনকে শেষবারের মতো ম্যানেজ করতে কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতারা বরিশালে

আ’লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মহানগর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মাহমুদুল হক খান মামুনকে নির্বাচন থেকে সরে গিয়ে দলের সমর্থিত প্রার্থী আলহাজ শওকত হোসেন হিরনের পক্ষে কাজ করার জন্য যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র নেতৃবৃন্দরা বরিশালে এসেছেন। গতকাল বুধবার যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী ও এর একদিন আগে বরিশালে এসেছেন যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রুপালী ব্যাংকের সাবেক পরিচালক মাহবুবুর রহমান হিরন, আতাউর রহমান আতা ও সাংগঠনিক সম্পাদক তুহিন। নেতৃবৃন্দরা মামুনের সাথে বৈঠক করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন। মাহবুবুর রহমান হিরন বলেন, আমরা আশা করছি দলের স্বার্থে যুবলীগ নেতা মাহমুদুল হক খান মামুন প্রতিদ্বন্ধিতা থেকে সরে এসে দলের সমর্থিত প্রার্থী আলহাজ শওকত হোসেন হিরনের পক্ষে কাজ করবেন।

তিন হাজার পুলিশ মোতায়েন

বিসিসি’র নির্বাচনের দিন তিন হাজার পুলিশ মোতায়েন করা হবে বলে জানিয়েছেন বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (সদর) মোঃ সোয়েব আহমেদ। এছাড়া অবাধ, সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে র‌্যাব, এপিবিএন, আনসার ও কোস্টগার্ডের সদস্যরা মাঠে থাকবেন। তিনি আরো জানান, নির্বাচনের আগেরদিন থেকে তিন স্তর বিশিষ্ট নিরাপত্তার চাঁদরে পুরো নগরী ঢেকে দেয়া হবে।