জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে বরিশাল-ঢাকা নৌরুটের অত্যাধুনিক বে-ক্রুজ

এনায়েত হোসেন মুন্না, বরিশাল থেকে ফিরে ॥  মাত্র এক মাসের ব্যবধানে যাত্রীদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে বরিশাল-ঢাকা নৌরুটের একমাত্র দিবা অত্যাধুনিক নৌযান এক্সপ্রেস সার্ভিস ‘বে-ক্রুজ’। নদীবেষ্টিত দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের মাঝে দিনের বেলায় নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করতে দ্রুতগতির আধুনিক শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এ নৌযানটি ব্যাপক সারা ফেলেছে। ফলে বে-ক্রুজ নামের এ নৌযানটি এখন ব্যবসা সফল নৌযানে রূপান্তরিত হয়েছে।

সূত্রমতে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কয়েকজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের নিরলস প্রচেষ্ঠায় বে-ক্রুজ ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের নৌযান বে-ক্রুজ গত ২৮ এপ্রিল সকাল সাতটায় যাত্রী নিয়ে বরিশাল থেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে যাত্রা শুরু করে। বে-ক্রুজে ভ্রমণ করে নগরীর জিয়ানগর এলাকার যাত্রী উম্মে রুম্মান বলেন, বে-ক্রুজে ভ্রমণের আগে অসংখ্যবার লঞ্চযোগে ঢাকা-বরিশালে যাতায়াত করেছি। কিন্তু লঞ্চগুলো রাতের বেলা চলাচল করায় কখনো নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারিনি। অবশেষে বে-ক্রুজ স্বপ্ন পূরণ করেছে। ঢাকার রায়েরবাজার থেকে বরিশালে ভ্রমনে আসা জহির সরদার বলেন, ঢাকা থেকে বরিশাল আসতে লঞ্চে ৭/৮ ঘণ্টা ও বাসে ৫/৬ ঘণ্টা সময় লাগে। কিন্তু বে-ক্রুজ মাত্র চার ঘণ্টায় ঢাকা থেকে বরিশালে পৌঁছে দিয়েছে। এ নৌ-যানটি ভ্রমনপিপাসুদের জন্য অনেক সুফল বয়ে এনেছে বলেও তিনি উলে¬খ করেন।  

বে-ক্রুজ ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের পরিচালক লে. কর্নেল (অবঃ) মোঃ আজিজুল আশরাফ জনকণ্ঠকে বলেন, বে-ক্রুজ শুরুতে চার ঘণ্টায় বরিশাল থেকে ঢাকায় পৌঁছাতো। কিন্তু সম্প্রতি বে-ক্রুজের গতি কিছুটা কমিয়ে আনা হয়েছে। এখন ঢাকা থেকে বরিশাল কিংবা বরিশাল থেকে ঢাকা আসতে সাড়ে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা সময় লাগে। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, নদীর বরিশাল বেল্ট, বুড়িগঙ্গা ও পোস্তাখোলা থেকে মুন্সিগঞ্জ পর্যন্ত ধীর গতিতে বে-ক্রুজ চালাতে হয়। কারণ ওই এলাকার নদীতে ছোট বড় অসংখ্য জলযান রয়েছে। বরিশাল বেল্টে জেলে নৌকা এবং পোস্তাখোলা থেকে মুন্সিগঞ্জ এলাকায় সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনীর জাহাজ এবং জেলে নৌকা থাকায় তারা বে-ক্রুজের ঢেউ সামাল দিতে পারছেন না। ফলে ওইসব এলাকায় বে-ক্রুজের গতি কমিয়ে আনা হয়েছে।
বে-ক্রুজের বিভিন্ন বৈশিষ্ট নিয়ে এক্সিকিউটিভ অফিসার লে. কমান্ডার (অবঃ) মোশারফ হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, বে-ক্রুজের সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ২৮ নটিক্যাল মাইল বা ৬০ কিলোমিটার। চেয়ার সিটিং সিস্টেমের এ নৌযানে আসন সংখ্যা রয়েছে ২৫২টি। কৃষ্ণচূড়া, হাসনাহেনা ও রজনীগন্ধা নামের এর আসন বিন্যাস করা হয়েছে। দ্বিতল বিশিষ্ট বে-ক্রুজের দ্বিতীয় তলায় রয়েছে ‘কৃষ্ণচূড়া’। এর ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৮’শ টাকা। এছাড়া নিচতলায় হাসনাহেনা ও রজনীগন্ধার ভাড়া যথাক্রমে এক হাজার ও ১২’শ টাকা। মোশারফ হোসেন আরো বলেন, অত্যাধুনিক এ নৌযানের তলদেশ দু’ভাগে বিভক্ত হওয়ায় নদীর স্রোত ও গতির ভারসাম্য সুরক্ষিত থাকে। ফলে এর দুর্ঘটনার আশঙ্কা খুবই কম। জাহাজটি ছোটখাট ঝড়-তুফান ও দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় নিরাপদে চলাচল করতে সক্ষম। এতে রয়েছে ভেরি হাই ডেফিনেশন (ভিএইচ) সিস্টেম। এতে আবহাওয়া সংকেত আগেভাগেই পাওয়া যায়। আর দুর্যোগ কোন দিক থেকে আসছে তা জানান দেয় ডিরেক্টরি ফাইল্ডিং (ডিএফ) যন্ত্র। এছাড়া রয়েছে লাইফ জ্যাকেট, বয়া ও লাইফ ক্রাফট। যাত্রীদের বিনোদনের জন্য রয়েছে আধুনিক অডিও এবং ভিডিও’র ব্যবস্থা।

বে-ক্রুজ ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের চেয়ারম্যান লে. জেনারেল (অবঃ) আবু তৈয়ব মোঃ জহিরুল জানান, ২২ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১২ সনের অক্টোবর মাসে জাহাজটি বাংলাদেশে আনা হয়। প্রথম দিকে এটি কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন রুটে বঙ্গোপসাগরে চালানো হতো বলেও তিনি উল্লেখ করেন।