বিসিসি নির্বাচন : বরিশালে নগরপিতা হওয়ার দৌঁড়ে তিন মেয়র প্রার্থী

প্রেমানন্দ ঘরামী, বরিশাল থেকে ফিরে ॥  সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনের মাধ্যমে বরিশালের নগরপিতা হওয়ার দৌঁড়ে এখন দিনরাত সমানতালে নির্বাচনী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন বিএনপির এক ও আওয়ামীলীগের দু’মেয়র প্রার্থী। আওয়ামীলীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের মনোনীত সম্মিলিত নাগরিক কমিটির মেয়র পদপ্রার্থী আলহাজ্ব শওকত হোসেন হিরন-টেলিভিশন, বিএনপি সমর্থিত ১৮ দলীয় জোটের মনোনীত জাতীয়তাবাদী নাগরিক পরিষদের আহসান হাবিব কামাল-আনারস ও আ’লীগের বিদ্রোহী মেয়র প্রার্থী মাহমুদুল হক খান মামুন-দোয়াত কলম প্রতীক নিয়ে নির্বাচনী মাঠ গরম করে রাখলেও ভোটের লড়াই হবে দ্বিমুখী।

সাধারন ভোটারদের অভিমত নিয়ে এক জড়িপে দেখা গেছে, এ মহানগরীতে টেলিভিশন ও আনারস প্রতীকের মধ্যে ভোটের লড়াই হবে। অপরদিকে অতীত ও বর্তমানে দলের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ করা (মনোনয়ন প্রত্যাহার করা) জেলা বিএনপির সাবেক সাধারন সম্পাদক এবায়দুল হক চাঁনের নির্বাচনী মাঠে না থাকার বিষয়টি নিয়েও নগরবাসীর মধ্যে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। এখানে বিএনপির ভোটের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত হলেও উন্নয়নের ক্ষেত্রে একমাত্র দাবিদার হিসেবে ক্রমেই হিরনের টেলিভিশন মার্কার সমর্থনে গণজোয়ায়ের সৃষ্টি হচ্ছে।

বসে নেই কাউন্সিলর প্রার্থীরা

মহানগরীর ৩০টি সাধারন ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদপ্রার্থী হিসেবে ১১৫ জন ও ১০টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডের ৪৭ জন কাউন্সিলর প্রার্থীরা জমজমাট ভাবে নির্বাচনী প্রচার প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে ৩০টি ওয়ার্ডের মধ্যে অধিকাংশ ওয়ার্ডেই বিএনপি সমর্থিত একাধিক প্রার্থী কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন। বিএনপি’র গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালনকারী সদ্য বিদায়ী তিনজন প্যানেল মেয়র ছাড়াও অধিকাংশ ওয়ার্ডে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন। ২১নং ওয়ার্ডে মহানগর ছাত্রদলের আহবায়ক আবুল হাসান লিমনের প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন সাবেক প্যানেল মেয়র ও বিএনপির প্রভাবশালী নেতা আলতাফ মাহমুদ সিকদার। ১৮নং ওয়ার্ডে প্রার্থী হয়েছেন মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহবায়ক মীর জাহিদুল কবির তার প্রতিদ্বন্ধিতায় রয়েছেন মহানগর যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক কাজী মাহমুদুল হক। ৯নং ওয়ার্ডে বিএনপি নেতা সৈয়দ জামাল হোসেন নোমানের প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন ওয়ার্ড যুবদলের সভাপতি হারুন-অর রশিদ। ২২নং ওয়ার্ডে মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহবায়ক আ.ন.ম সাইফুল আহসান আজিম, ২৫নং ওয়ার্ডে ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি জিয়াউদ্দিন শিকদার, ১৯নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি শাহ আমিনুল ইসলাম আমিন, ১৬নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি কামরুল হাসান রতন, ১নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারন সম্পাদক সৈয়দ সাইদুল হাসান মামুন, ২নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারন সম্পাদক বি.এম সাইদুল হক হিরু, ১২নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি ও সাবেক প্যানেল মেয়র কে.এম শহীদুল্লাহ, ৭নং ওয়ার্ড বিএনপি নেতা সৈয়দ আকবর, ২৬নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি ফরিদ উদ্দিন হাওলাদার, ১১নং ওয়ার্ড থেকে জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহবায়ক ও সাবেক প্যানেল মেয়র আয়শা তৌহিদা লুনা প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন। এছাড়া অন্যান্য প্রার্থীরাও প্রচার-প্রচারনা ও গণসংযোগের মাধ্যমে নির্বাচনী মাঠ সরগরম করে রেখেছেন।

নয়জন স্বাক্ষরজ্ঞান

সাধারন কাউন্সিলর পদে নয়জন প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা স্বাক্ষরজ্ঞান। এছাড়া ২ জন প্রার্থী তৃতীয় ও ১ জন পঞ্চম শ্রেনী পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। প্রার্থীদের হলফনামায় শিক্ষাগত যোগ্যতার বিবরন থেকে জানা গেছে, অস্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশুনা করেছেন ৩৪ জন। এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে পাশ করতে পারেননি একজন, এসএসসি পাশ করেছেন ২৯ জন। এইচএসসি পাশ করেছেন ২৭ জন, মাস্টার্স সম্পন্ন করেছেন ৮ জন, আইনজীবি আছেন ৩ জন ও স্নাতক পাশ করেছেন ১৬ জন প্রার্থী।
ব্যবসায়ীদের জয় জয়কার ॥ বিসিসি’র নির্বাচনে মোট ১৬৫ জন মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে ৯২ জনই ব্যবসায়ী। হলফনামায় তিনজন মেয়র প্রার্থী আলহাজ্ব শওকত হোসেন হিরন, আহসান হাবিব কামাল ও মাহমুদুল হক খান মামুন নিজেদের ব্যবসায়ী হিসেবে উল্লেখ করেছেন। ১১৫ জন সাধারন কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে ৮৫ জনই ব্যবসায়ী। সংরক্ষিত আসনের ৪৭ জন কাউন্সিলরের মধ্যে চারজন ব্যবসায়ী, ২৪ জন গৃহিণী ও অন্যান্যরা বিভিন্ন পেশার সাথে জড়িত রয়েছেন।

 

পোষ্টার ঝুলাতে নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যবহার

বৈরী আবহাওয়ার কারনে প্রবল বৃষ্টির কারনে পোস্টার সাটানো নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা। প্রতীক বরাদ্দের পর দু’একদফা পোস্টার ঝুলানো হলেও প্রবল বৃষ্টিতে সেগুলো অনেক আগেই নষ্ট হয়ে গেছে। তাই এখন বিকল্প ভাবে পোষ্টার ঝুলানো হচ্ছে। নিষিদ্ধ পলিথিনের (সাদা) মধ্যে পোষ্টার ঢুকিয়ে তা ঝুলানো হচ্ছে। শুক্রবার নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সর্বত্রই নিষিদ্ধ পলিথিন দিয়ে পোষ্টার ঝুলিয়েছেন মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থীরা।

 

টানা বৃষ্টি উপেক্ষা করে

শুক্রবার সকাল থেকে টানা বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে বিসিসি’র মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কুশল বিনিময় করে প্রার্থীরা নিজ নিজ প্রতীকে ভোট দেয়ারও অনুরোধ করছেন। সকাল থেকেই গণসংযোগে নেমেছেন সম্মিলিত নাগরিক কমিটির মেয়র পদপ্রার্থী আলহাজ্ব শওকত হোসেন হিরন-টেলিভিশন, জাতীয়তাবাদী নাগরিক পরিষদের আহসান হাবিব কামাল-আনারস ও আ’লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মাহমুদুল হক খান মামুন-দোয়াত কলম। এছাড়া নগরীর ৩০টি সাধারন ওয়ার্ডের ১১৫ জন ও ১০টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডের ৪৭ জন কাউন্সিলর প্রার্থী ও তাদের সমর্থকেরা প্রতিদিনের ন্যায় হ্যান্ডবিল ও লিফলেট বিতরণের মাধ্যমে গণসংযোগসহ ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভোট প্রার্থনা করছেন।

 

প্রার্থী সমর্থনে ব্যর্থ জাপা

বিভাগীয় প্রতিনিধি সভার পরেও বিসিসি’র নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী সমর্থনে এবারও ব্যর্থ হয়েছেন জাতীয় পার্টি। কথাছিল বৃহস্পতিবার প্রতিনিধি সভা থেকে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্ধি তিন প্রার্থীর মধ্যে একজনকে সমর্থন দিবেন জাপা। কিন্তু সভা অনুষ্ঠিত হলেও প্রার্থী সমর্থনে তারা এবারও ব্যর্থ হয়েছেন।
জাতীয় পার্টির বরিশাল জেলা শাখার সভাপতি মহসিন-উল ইসলাম হাবুলের সভাপতিত্বে প্রতিনিধি সভার প্রধান অতিথি জাপা মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার-এমপি বলেন, দলের চেয়ারম্যানের সাথে আলোচনা করেই প্রার্থী সমর্থনের সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। প্রতিনিধি সভায় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য গোলাম কিবরিয়া টিপু-এমপি, তাজুল ইসলাম চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান নাছরিন জাহান রত্মা।

 

মাঠে নেমেছে জামায়াত-শিবির

প্রকাশ্যে সাংগঠনিক কোনো তৎপরতা চালাতে না পারলেও এবার বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের (বিসিসি) নির্বাচনে ১৮ দলীয় জোট সমর্থিত জাতীয়তাবাদী নাগরিক পরিষদের মনোনীত মেয়র প্রার্থী ও বিএনপি নেতা আহসান হাবিব কামালের আনারস মার্কার সমর্থনে প্রকাশ্যে মাঠে নেমেছে জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীরা। আনারস প্রতীকের বিজয়ের লক্ষ্যে তারা দিনরাত কাজ করছেন।

 

কামালের মতবিনিময়

সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনকে সামনে রেখে শুক্রবার দুপুরে মহানগর মহিলাদলের নেত্রীদের সাথে মতবিনিময় সভা করেছেন জাতীয়তাবাদী নাগরিক ফোরামের মেয়র প্রার্থী আহসান হাবিব কামাল। নগরীর অশ্বিনী কুমার টাউনহল সংলগ্ন দলীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মজিবর রহমান সরোয়ার-এমপি, মহানগর বিএনপির সাধারন সম্পাদক কামরুল আহসান শাহিন, জেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিনসহ মহিলা দলের নেতৃবৃন্দরা উপস্থিত ছিলেন।