বরিশালে হিরণের গণজোয়ারে দিশেহারা কামাল

 

হাসান মাহমুদ, বিশেষ প্রতিনিধি ॥  বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের (বিসিসি) নির্বাচনের মাঠে একের পর এক নতুন কৌশল খাটিয়ে গণজোয়ার সৃষ্টি করেছেন আওয়ামীলীগ সমর্থিত সদ্য বিদায়ী মেয়র ও মেয়র পদপ্রার্থী আলহাজ্ব শওকত হোসেন হিরণ। তার স্মার্ট সব কৌশলে দিশেহারা হয়ে পড়ছেন বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী আহসান হাবিব কামাল। প্রচার প্রচারণা থেকে শুরু করে গণসংযোগের ক্ষেত্রে মেয়র প্রার্থী হিরণের কাজ গোছানো ও পরিকল্পিত বলে মনে করছেন বরিশালে আগত পর্যবেক্ষকরা। হিরণের প্রতিপক্ষ মেয়র প্রার্থী কামালের কাজে তেমন সমন্বয় খুঁজে পাচ্ছেন না তারা।

বরিশালের নির্বাচনে অন্যতম আলোচিত বিষয় হচ্ছে পুরোনগরীর ব্যাপক উন্নয়ন। আর এ উন্নয়নের কারনেই বিএনপির ভোট ব্যাংক বলেখ্যাত বরিশালে এখন অনেকটাই শক্ত অবস্থান করে নিয়েছেন শওকত হোসেন হিরণ। একারনেই নগরীর সাধারন ভোটারদের কাছে ব্যক্তি হিরণের ইমেজের কারনে সবখানেই এগিয়ে যাচ্ছেন হিরণ অনুসারীরা। এখানে মূল ভোটের লড়াই হবে হিরণ ও কামালের মধ্যে। হিরণ ও কামালের পক্ষে কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাদের বিরামহীন ভাবে প্রচার প্রচারনার মাঝে অনেকটাই চাঁপের মধ্যে রয়েছেন স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী মাহমুদুল হক খান মামুন ও তার সমর্থকেরা।

হিরণ ও কামাল দু’জনই বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র। তাই কার সময়ে নগরীতে কতোটা উন্নয়ন হয়েছে তাতেই বিশ্বাসী এখানকার খেটে খাওয়া সাধারন ভোটাররা। ব্যাপক উন্নয়নের কারণে হিরণ জনসমর্থনে অনেকটাই এগিয়ে থাকলেও রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা প্রার্থী কামালের চেয়েও বেশি প্রাধান্য দিচ্ছেন তার নির্বাচনী প্রধান সমন্ময়ক এ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার-এমপি’কে। জনশ্র“তি রয়েছে এখানকার বিএনপির ভোট ব্যাংক সরোয়ারের হাতে। তাই ভোটের হিসেব নিকেশ কি হবে তা নিয়ে এখনও স্পট করে কিছু বলতে পারছেন না বিশ্লেষকেরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বরিশালের বিএনপির দুর্গ বলেখ্যাত পলাশপুর। এখানে বিএনপির রিজার্ভ এরিয়া নামেও অনেকটা পরিচিত। বিএনপির দীর্ঘদিনের রির্জাভ এলাকায় এবার ব্যক্তি হিরণের ইমেজের কারনে ভাঙ্গণ দেখা দিয়েছে। সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী আহসান হাবিব কামালের এ দূর্গে এবার ভাগ বসিয়েছেন ১৪ দল সমর্থিত মেয়র প্রার্থী শওকত হোসেন হিরণ। যে কারনে নির্বাচনে কামালের জন্য অশনি সংকেত দেখা দিয়েছে। পলাশপুর এলাকার ভোটারদের সাথে আলাপকালে জানা গেছে, ওই এলাকার বিশাল এলাকাজুড়ে বস্তি ছিলো। কিন্তু গতবার হিরণ মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর এটিকে কলোনীতে রূপ দিয়েছেন। যে কারনে ওইসব কলোনিবাসী হিরণের প্রতি দুর্বলতা প্রকাশ করেছেন। এখানকার রাস্তার উন্নয়ন, আলো ও পয়ঃনিষ্কাশনের ব্যবস্থাসহ ব্যাপক উন্নয়নে হিরণের অবদানের কথা জানিয়েছেন এলাকাবাসী। হিরণের জনপ্রিয়তার পেছনে অন্যতম আরো একটি কারণ হিসেবে ব্যাপক জনমুখিতার কথাও বলেন নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক এক বিএনপি নেতা। তিনি জানান, হিরণ ঘন ঘন এখানে আসেন। মানুষের সঙ্গে তার আচারণও ভালো। মানুষের সুবিধা-অসুবিধা জানতে চান। এজন্য মানুষ ধীরে ধীরে তাকে পছন্দ করতে শুরু করেছেন। এলাকাবাসী আরো জানান, আহসান হাবিব কামাল এই এলাকাটি নিজের মনে করে নির্বাচনমুখী প্রয়োজনীয় আনাগোনা করেননি। আর এ সুযোগে হিরণের জনপ্রিয়তা বেড়ে গেছে।

এছাড়াও বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, বরিশাল মহানগরীর ৩০টি ওয়ার্ডে ব্যাপক উন্নয়নের মাধ্যমে আধুনিক শহর প্রতিষ্ঠার একমাত্র দাবিদার আলহাজ্ব শওকত হোসেন হিরণের টেলিভিশন মার্কার সমর্থনে ২৩ দফা নির্বাচনী ইশতেহার ষোষণা নিয়ে পুরো নগরীতে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। ইশতেহারে বরিশাল শহরের যানজট নিরসনের জন্য নগরীর শহীদ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন সড়কে উড়াল সেতু (ফ্লাইওভার) নির্মানসহ নদী বেষ্টিত বরিশালের সাথে সারাদেশের রেল যোগাযোগ নিশ্চিত ও ভোলার গ্যাস পাইপ লাইনের মাধ্যমে বরিশাল শহরে এনে গৃহস্থলির কাজে সরবরাহর বিষয়টি সকলের কাছে ব্যাপক গ্রহনযোগ্যতা পেয়েছে। হিরণের গত ৪ বছর ৭ মাস ৩ দিনের মেয়র থাকাকালীন সময়ে এ নগরীতে ৪’শ কোটি টাকার উন্নয়নের পাশাপাশি আগামী নির্বাচনে তিনি (হিরণ) মেয়র নির্বাচিত হতে পারলে তার এ ভবিষ্যত পরিকল্পনাকে তিনি বাস্তবায়ন করতে পারবেন বলে সাধারন ভোটাররা মন্তব্য করেছেন। এছাড়াও হিরণের এ নির্বাচনী ইশতেহারের কথা সাধারন ভোটারদের মাঝে ছড়িয়ে পরলে পুরো নগরী জুরে হিরণের টেলিভিশন মার্কার পক্ষে গণজোয়ারের সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে হিরনের প্রচারনায় নেমেছেন এলাকার বিপুল সংখ্যক নারীকর্মী। নারী ভোটারদের আস্থা অর্জনে সারাদিন এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন তারা। সেক্ষেত্রে হিরণের স্ত্রী নারীনেত্রী জেবুন্নেচ্ছা আফরোজের রয়েছে যথেষ্ট ভূমিকা। তিনি অতীতের ন্যায় এখনও দিনরাত সমান তালে সমাজের অবহেলিত নারীদের উন্নয়নের জন্য বলিষ্ট ভূমিকা পালন করছেন। ফলে নারীরা তার কারণেই হিরণের দিকে বেশি ঝুঁকে পরছেন। হিরণ নিজেও প্রচারণায় হাজার-হাজার মানুষের কাছাকাছি পৌঁছে যাচ্ছেন প্রতিদিন। সেই তুলনায় পিছিয়ে আছেন প্রতিদ্বন্ধী প্রার্থী আহসান হাবিব কামাল। কামালের কর্মীরা তার গুণগান গাওয়ার চেয়ে হিরণের বিরুদ্ধে অপপ্রচারেই বেশি মনোযোগ দিচ্ছেন। যা সচেতন ভোটারদের বিরক্তির কারণ হয়ে উঠছে বলে মনে করছেন অনেকে। এ ঘটনার জের হিসেবে বুধবার সন্ধ্যায় নারীকর্মী আটকের ঘটনা শেষ পর্যন্ত গুলির ঘটনায় পরিণত হয়েছে বলে জানিয়েছেন বরিশাল জেলা বিএনপির এক নেতা। উল্লেখ্য, বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে তিনজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন। এরমধ্যে হিরণ টেলিভিশন প্রতীক, আহসান হাবিব কামাল আনারস প্রতীক এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী মাহমুদুল হক খান মামুন দোয়াত কলম প্রতীক নিয়ে ভোট যুদ্ধে নেমেছেন।

রিটার্নিং অফিস সূত্রে জানা গেছে, বরিশাল পৌরসভা থেকে ২০০২ সনের ২৫ জুলাই সিটি কর্পোরেশনে উন্নীত হওয়ায় এ সিটিতে এবার মোট ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ১০ হাজার ৫৩০ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লক্ষ ৭ হাজার ১৮৪জন এবং মহিলা ভোটার ১ লক্ষ ৩ হাজার ৩৪৬ জন। গত বারের তুলনায় এবার নতুন প্রজন্মের ভোটার বেড়েছে ১৮ হাজার ৩০৩ জন। ৩০টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত এ সিটিতে ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ১’শ টি, স্থায়ী ভোট কক্ষ ৬১৪ টি এবং অস্থায়ী ভোটকক্ষের সংখ্যা ৩৭টি। গত নির্বাচনে শওকত হোসেন হিরণ ৪৬ হাজার ৭৯৬ ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধী এস. সরফুদ্দিন আহমেদ সান্টু পেয়েছিলেন ৪৬ হাজার ২০৮ ভোট। আহসান হাবিব কামাল পেয়েছিলেন ২৬ হাজার ৪১৬ ভোট।