আওয়ামীলীগের গৌরব ও ইতিহাস…

অতিথির কলাম

সৈকত গুহ পিকলু ॥  সুদীর্ঘ রাজনীতি এবং আন্দোলন-সংগ্রামের গৌরব উজ্বল ইতিহাস ও ঐতিহ্য ধারনকারী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ ৬৪ বছর পার করে ৬৫ বছরে পা রেখেছেন। ১৯৪৯ সালের ২৩ ও ২৪ জুন প্রগতিবাদী নেতাদের উদ্যোগে আহুত এক কর্মী সম্মেলনে পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী রোজ গার্ডেনে দেশের অন্যতম প্রাচীন এ রাজনৈতিক দলটির আত্মপ্রকাশ ঘটে। প্রথমে আওয়ামী মুসলিম লীগ নামে দলটি প্রতিষ্ঠা লাভ করে। মুসলিম লীগের প্রগতিশীল নেতা-কর্মীরা বেরিয়ে গিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন আওয়ামী মুসলিম লীগ নামের তৎকালীন নতুন রাজনৈতিক দল। এর প্রায় চার বছর পর ১৯৫৫ সালে আওয়ামী মুসলিম লীগ থেকে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দিয়ে আওয়ামীলীগ নামের বাঙালির লড়াই সংগ্রামের অসাম্প্রদায়িক ধর্মনিরপেক্ষ এ রাজনৈতিক দল গড়ে তোলা হয়।

 

প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকেই বাঙালির অধিকার আদায়ের প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠে আওয়ামীলীগ। ১৯৪৮ সালে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর মতো দিকপাল নেতাদের সঙ্গে মুসলিম লীগের দূরত্ব, উদীয়মান তরুণ নেতা শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর সহকর্মীদের দ্রোহ ও সাহসি পদক্ষেপ ঐতিহাসিক পরিণতি নির্ধারণ করে দেয়। ওই সময় দিক-নির্দেশনা এবং নেতৃত্বহীন অসংগঠিত জনতাকে সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক ও আর্থ-সামাজিক কর্মসূচীর ভিত্তিতে সংগঠিত করা এবং মুসলিম লীগের বিকল্প গড়ে তোলার তাগিদ সৃষ্টি হয়। এ বাস্তবতা থেকেই উৎসারিত হয় আওয়ামীলীগের মতো একটি জাতীয় রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার অপরিহার্যতা। একপর্যায়ে আওয়ামীলীগের নেতৃত্বে আসেন বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে আওয়ামীলীগ ধারাবাহিকভাবে বাঙালির অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন শুরু করে। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামীলীগের আন্দোলন সংগ্রামে নতুন মাত্রা যুক্ত হয়। আওয়ামীলীগের সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে আন্দোলন, ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন, শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে অধিকার আদায়ের আন্দোলন একপর্যায়ে স্বাধীনতার আন্দোলনে রূপ নেয়। ৬৬’র ছয়দফা আন্দোলন, ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান, স্বাধীনতার সংগ্রাম, ৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধ, পাকিস্তানি শাসন আমলে এবং স্বাধীনতার পর সামরিক স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে সব গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামের নেতৃত্ব দেয় ঐতিহ্যবাহী এ রাজনৈতিক দলটি। ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক শাসক-শোষক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বাঙালির যে জাগরণ ও বিজয় সূচিত হয় সেই আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিল আওয়ামীলীগ। ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানের পথ ধরেই ৭০ এর নির্বাচনে আওয়ামীলীগের বিপুল বিজয় সূচিত হয়।

 

গণঅভ্যুত্থান এবং নির্বাচনে বিজয়ের মধ্য দিয়েই বাঙালি জাতি স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সশস্ত্র সংগ্রাম মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। আওয়ামীলীগের নেতৃত্বেই মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতা অর্জিত হয়। ১৯৭১ সালে ২৬ মার্চ বিশ্বের বুকে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে। ১৬ই ডিসেম্বর সশন্ত্র মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জিত হয়। এ সুদীর্ঘ পথ পরিক্রমায় আওয়ামীলীগকে অনেক চড়াই-উৎড়াই এবং ভাঙা-গড়ার মধ্যদিয়ে এগিয়ে যেতে হয়েছে। কখনো নেতৃত্বের শূন্যতা, কখনো ভাঙনের মুখে পড়তে হয়েছে দলটিকে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু সহ তার স্ব-পরিবার ও ৩ নবেম্বর জাতীয় চার নেতাকে হত্যার পর নেতৃত্ব শূন্যতায় পড়ে আওয়ামীলীগ। এরপর দলের মধ্যে একাধীক ভাঙন ও কোন্দল দেখা দেয়। আবার ৬৩ বছরের মধ্যে প্রায় ৫০ বছরই আওয়ামীলীগকে থাকতে হয়েছে রাষ্ট্র ক্ষমতার বাইরে। ১৯৫৬ সালে আওয়ামীলীগ মন্ত্রীসভা গঠন করলেও তা বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু সরকারের সাড়ে তিন বছর এবং ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ৫ বছর এবং বর্তমানে সাড়ে ৪ বছর ধরে আওয়ামীলীগ সরকার পরিচালনা করছে। দলের চরম ক্রান্তিকালে ১৯৮১ সালে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা দেশে ফিরে আওয়ামীলীগের হাল ধরেন। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দ্বিধা-বিভক্ত আওয়ামীলীগ আবার ঐক্যবদ্ধ হয়। তিন দশকের বেশি সময় ধরে তার নেতৃত্বে আওয়ামীলীগ পরিচালিত হচ্ছে। এ সময়ে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন-সংগ্রামের পাশাপাশি দু’বার রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হতে পেরেছে আওয়ামীলীগ।