পবিত্র শব-ই বরাতে করণীয় ও বর্জনীয়


বিশেষ সম্পাদকীয়

মহান আল্লাহ পাকের অশেষ রহমত ও দয়ার মধ্য দিয়েই কেটে যায় জীবনের প্রতিটি মুহুর্ত। বান্দা যদিও সর্বদা আল্লাহর অবাধ্যতায় ব্যস্ত কিন্তু অসীম দয়ালু আল্লাহ পাক বান্দার অবাধ্যতার প্রতিদান না দিয়ে তাকে তার দয়ার দ্বারা ঘিরে রেখেছেন। মহান আল্লাহ পাকের অবাধ্যতা করা সত্ত্বেও তাঁর-ই-দয়া ও রহমত ও নেয়ামত দ্বারা প্রতিটি মানুষের জীবন ভরপুর। আল্লাহ পাক পৃথিবীতে জ্বীন ও মানব জাতিকে একমাত্র তাঁর ইবাদতের জন্য-ই সৃষ্টি করেছেন। ইরশাদ হচ্ছে- আমি জ্বীন ও মানব জাতীকে একমাত্র আমার ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছি-(আল কোরআন)। একজন মানুষের সম্পূর্ণ জীবন মহান আল্লাহ পাকের ইবাদতের মধ্যে দিয়ে অতিবাহিত হওয়াটাই কাম্য। তাইতো বান্দাকে ইবাদতের প্রতি উৎসাহিত করার লক্ষ্যে-ই বৎসরে এমন কিছু রজনী রয়েছে যাতে বান্দার নেক আমলের মূল্যায়ন আল্লাহর নিকট তুলনামূলক অনেক বেশি। যার রয়েছে অশেষ মর্যাদা।

 

শব-ই-বরাতের করণীয়: যখন শাবান মাসের অর্ধেকের রজনী আসে (১৫ তারিখ রাত্র) তখনি সে রাত্রে তোমাদের করণীয় হল তোমরা রাত্রে আল্লাহর ইবাদত কর এবং পরদিন করণীয় হল তোমরা দিনে রোযা রাখ (আল হাদীস)। তাছাড়া সমস্ত রাত্র জাগরণ করা, গোনাহ থেকে মাফ চাওয়া, রিযিক প্রার্থনা করা, রোগ মুক্তি ও ইত্যাদি কামনা করা। এ রাত্রে কবর জিয়ারতের জন্য কবরস্থানে যাওয়া। শব-ই বরাতের বর্জনীয়: রাসূল (সাঃ) বলেছেন, যে আমার এই দ্বীনের মধ্যে যা নেই তার আবিষ্কার করে তা হল বেদআত (আল হাদীস)। বর্জনীয় ঃ অতিরিক্ত আলোক সজ্জাকরা, আতশ বাঁজি ফুটানো, কবরে বাতি দেয়া, অপচয় করা ইত্যাদি।

 

শব-ই বরাতের বরকত লাভের পূর্বশর্ত কুরআন ও হাদীসের আলোকে যে কোনো নেক আমল বা ইবাদত আল্লাহর দরবারে কবুল হওয়ার জন্য তিনটি মৌলিক শর্ত রয়েছে: বিশুদ্ধ ঈমান ও ইখলাস: শির্ক, কুফ্র ও নিফাক-মুক্ত বিশুদ্ধ ঈমান সকল ইবাদত কবুল হওয়ার পূর্ব শর্ত। উপরন্তু ইবাদতটি পরিপূর্ণ ইখলাসের সাথে একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হতে হবে। আল্লাহর সন্তুষ্টি ছাড়া অন্য কোনো রকম উদ্দেশ্যর সামান্যতম সংমিশ্রণ থাকলে সে ইবাদত আল্লাহ কবুল করবেন না। সুন্নাতের অনুসরণ: কর্মটি অবশ্যই রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর সুন্নাত বা পদ্ধতি ও রীতি অনুসারে পালিত হতে হবে। যদি কোনো ইবাদত তাঁর শেখানো ও আচরিত পদ্ধতিতে পালিত না হয়, তাহলে যত ইখলাস বা আন্তরিকতাই থাক না কেন, তা আল্লাহর দরবারে কোনো অবস্থাতেই গৃহীত বা কবুল হবে না। হালাল ভক্ষণ: ইবাদত পালনকারীকে অবশ্যই হালাল-জীবিকা-নির্ভর হতে হবে। হারাম ভক্ষণকারীর ইবাদত আল্লাহর দরবারে কবুল হয় না।

 

আমরা দেখেছি যে, মধ্য শাবানের রাত্রি বা লাইলাতুল বারাআতের ক্ষমা ও বরকত লাভের জন্য সহীহ হাদীসে দুটি শর্ত উল্লেখ করা হয়েছে: শিরক থেকে মুক্ত হওয়া ও হিংসা-বিদ্বেষ থেকে মুক্ত হওয়া। মানুষের জীবনের ভয়াবহতম পাপ হলো শিরক। অন্যান্য সকল পাপের সাথে এর পার্থক্য হলো: সকল পাপই আল্লাহ ইচ্ছা করলে তাওবা ছাড়াও ক্ষমা করতে পারেন, কিন্তু পরিপূর্ণ তাওবার মাধ্যমে শিরক বর্জন ছাড়া শিরকের পাপ তিনি ক্ষমা করেন না। সাধারণ পাপের কারণে মানুষের নেক কর্ম ধ্বংস হয় না, কিন্তু শিরকের কারণে মানুষের সকল নেক কর্ম বিনষ্ট হয়ে যায়। সকল পাপে লিপ্ত মানুষেরই জান্নাতে যাওয়ার আশা থাকে, কিন্তু শিরকে লিপ্ত মানুষের জন্য আল্লাহতায়ালা তার জান্নাতকে চিরতরে হারাম করেছেন এবং তার চিরস্থায়ী নিবাস জাহান্নাম।