বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থেকে নিয়মিত হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর

ছাদেকুল ইসলাম রুবেল, গাইবান্ধা ॥  গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার উচ্চ বিদ্যলয়ের প্রধান শিক্ষক মতিয়ার রহমান দীর্ঘদিন থেকে পলাতক থাকলেও সুকৌশলে হাজিরা খাতায় নিয়মিত স্বাক্ষর করে আসছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।  জানা গেছে, উক্ত বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মতিয়ার ৯ ডিসেম্বর ১৮ দলীয় অবরোধ চলাকালে ১৮ দলীয় নেতাকর্মী ও পুলিশ সংঘর্ষে ও পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা দায়েরে এজাহার ভুক্ত আসামী সে। এবং ২২শে ফের্রুয়ারী তেহিদী জনতা বিক্ষোভ মিছিল চলাকালে দায়ীত্বরত পুলিশের উপর হামলা চালালে পুলিশ নিজেকে রক্ষা করতে ফাঁকা গুলি ছোঁড়ে। উভয় পক্ষের সংঘর্ষে পথচারী কোকিল ও মজনু নামের ২ পথচারী মারা যায়। ওই ঘটনায় থানা পুলিশ তিনটা ( দ্রুত, হত্যা, বিস্ফোরক) মামলা দায়ের করেন।

ওই তিন মামলার ১৫ নং আসামী মতিয়ার রহমান জড়িত থাকায় গ্রেফতার এড়াতে গত ৯ই ডিসেম্বর থেকে পলাতক রয়েছেন। এদিকে তিনি উক্ত মাদ্রাসার সভাপতি আতোয়ার প্রধান এর আর্শিবাদপুষ্ঠ হওয়ায় তার সাথে গোপন আতাত করে সরকারী সুযোগ সুবিধা নেয়ার জন্য পলাতক অবস্থায় বিদ্যালয়ের পিয়ন কর্তৃক হাজিরা খাতা গোপন জায়গায় নিয়ে গিয়ে স্বাক্ষর করে আসছেন। এনিয়ে এলাকাবাসী ও অপর শিক্ষক-কর্মচারীদের মাঝে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তবে থানা পুলিশ জানায় স্থানীয় আ’লীগের সুপারিশের কারণে তাকে আটক করা হচ্ছে না।

 

 

এখন আমার কি হবে?

‘স্যার আমাকে বিয়ের কথা বলে আমার সর্বনাশ করেছেন। আমার যা হয় হোক- স্যারের যেনো চাকরির ক্ষতি না হয়।’বুধবার সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের সামনে এমন আকুতি প্রকাশ করেছে সরকারি কর্মকর্তার লালসার শিকার গাইবান্ধা শিশু পরিবারের নিবাসী একজন এতিম কিশোরী।সন্ধ্যায় সরকারি ওই কর্মকর্তাকে আসামি করে সদর থানায় মামলা দায়ের করেছেন নির্যাতিত ওই ছাত্রী।সমাজ সেবা বিভাগের উপ-তত্ত্বাবধায়ক ও এতিমদের রক্ষক জাহাঙ্গীর আরিফের লালসার শিকার বাবাহীন দরিদ্র পরিবারের ওই কিশোরীর মা আয়সা বেগম অভাবের তাড়নায় মেয়েকে ভরণ পোষণের দায়িত্ব দিয়েছিলেন সরকারি এতিম খানায়। শিশু পরিবারের দশম শ্রেণীর ওই ছাত্রী তার স্যারের অনৈতিক কর্মকাণ্ড বুঝতে পেরে এখন নির্বাক।এ ঘটনায় আতঙ্কে আছেন শতাধিক এতিম শিশু নিবাসী। এ ঘটনায় জেলায় তোলপাড় হলেও সমাজ সেবা বিভাগ ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। আরো জানা যায় অষ্টম শ্রেণীর এক নিবাসীর সঙ্গে তার অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। বিভিন্ন সময়ে নানা প্রলোভন, কথা না শুনলে এতিমখানা থেকে বের করে দেয়ার হুমকি দিয়ে কিশোরীকে অনৈতিক কাজে বাধ্য করেন।শিশু পরিবারের ক্যাম্পাসে কোয়ার্টারে বাস করার সুবাদে ওই কর্মকর্তা সুযোগ পেলেই কিশোরীদের তার বাড়িতে নিয়ে আনন্দ করতেন। অনেক কিশোরী তার এসব অপকর্মের প্রতিবাদ করলে তাদের বের করে দেয়ার হুমকি দেন। এর ফলে খেয়েপরে বেঁচে থাকার জন্য এতিম মেয়েরা ওই কর্মকর্তার অনৈতিক কাজের প্রতিবাদ করতে পারেনি। একই ভাবে দশম শ্রেণীর সুন্দরী ওই ছাত্রীকে প্রলোভনে নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়। এক পর্যায়ে অনৈতিক সম্পর্ক তৈরি করে।জাহাঙ্গীর আরিফের স্ত্রী তার সন্তানদের নিয়ে স্কুলে চলে গেলে ওই সুযোগে তাদের ঘরে ওই ছাত্রীকে নিয়ে যেতো।

 

এ নিয়ে নিবাসীদের মধ্যে কানাঘুষা শুরু হয়। এ বিষয়ে সমাজসেবা অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সাথে উম্মে হাবীবা আলোচনা করলেও তারা কেনো পদক্ষেপ নেয়নি।নিবাসী শিশু-কিশোরীদের বাবা সেজে এ ধরণের যৌননির্যাতনের কারণে নিবাসীদের মধ্যে চরম অসন্তোষ দেখা দেয়। তারা লিখিতভাবে বিষয়টি উপ-তত্ত্বাবধায়ক উম্মে হাবীবাকে জানায়। তিনি ছাত্রীটিকে তার কাছে ডেকে লিখিত বক্তব্য নেন।সরকারি ওই কর্মকর্তার অনৈতিক কর্মকাণ্ড ও পরকীয়ার কথা জানাজানির পর ছাত্রীটি লোকলজ্জা, ক্ষোভে অভিমানে গত ২৩ জুন আত্মহত্যার চেষ্টা করে। তবে প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী ও অন্য মেয়েদের সহযোগিতায় তাকে মুমুর্ষ অবস্থায় হাসপাতালে নেয়া হয়। মঙ্গলবার ছাত্রীটি স্থানীয় সাংবাদিক এবং নারী নেত্রীদের কাছে সাবেক উপ-তত্ত্বাবধায়ক আরিফের সঙ্গে তার সম্পর্কের কথা স্বীকার করে জানায়, তাকে বিয়ে করার প্রলোভন দেখিয়ে স্যার অবৈধ সম্পর্ক গড়ে তোলেন। পরে এ বিষয়টি নিয়ে গত সোমবার জেলা আইন-শৃংখলা কমিটির সভায় আলোচনা হয়। সভার সভাপতি জেলা প্রশাসক ড. কাজী আনোয়ারুল হক বিষয়টি প্রয়োজনীয় তদন্তের জন্য সমাজসেবা বিভাগের গাইবান্ধা উপ-পরিচালককে দায়িত্ব দেন। অপরাধ প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে সভায় জানানো হয়।শিশু সদনের অসহায় মেয়েদের লালসায় শিকার হওয়ার ঘটনায় তারা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন। অভিযুক্ত জাহাঙ্গীর আরিফ ঘটনার সঙ্গে তার সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করেন।