সুন্দরগঞ্জে তিস্তা নদীর ভাঁঙ্গণে ছয়ঘরিয়া গ্রাম বিলীন

ছাদেকুল ইসলাম রুবেল, গাইবান্ধা ॥  গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তিস্তা নদীর ভয়াবহ ভাঁঙ্গণে কঞ্চিবাড়ির ছয়ঘরিয়া গ্রাম বিলীন হতে বসেছে। গৃহহীন হয়ে পড়েছে শত শত মানুষ। ভাঁঙ্গণ আতঙ্কে আরও অসংখ্য পরিবার ঘর-বাড়ি সরিয়ে নিচ্ছে অন্যত্র। ওই গ্রামের কয়েকশ একর জমির তোষাপাট ইতিমধ্যে নদীগর্ভে চলে গেছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, গত কয়েক দিনের অব্যাহত নদী ভাঁঙ্গণে ছয়ঘরিয়া গ্রামে চলছে দূর্গতদের ঘর-বাড়ি সরিয়ে নেয়ার ব্যস্ততা। অনেকে বেড়ি বাঁধে আশ্রয় নিচ্ছে। এছাড়া কেউ কেউ আশ্রয় নিচ্ছে পার্শ্ববর্তী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে। অনেকেই গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগী, পরিবার-পরিজন নিয়ে খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করছেন। স্থায়ী ঠিকানা তাদের কোথায় মিলবে এমন ভাবনায় পড়েছে দূর্গতরা। হুমকির মুখে পড়েছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়ি বাঁধ।

 

এদিকে বেড়িবাঁধটি ভাঁঙ্গনের কবলে পড়লে প্রবাহিত নদীটির দক্ষিণ অঞ্চল, পাঁচপীর বাজারসহ লোকালয় বন্যার পানি প্রবেশ করে দেখা দিতে পারে মহা প্লাবন। এ ব্যাপারে পাউবো, গাইবান্ধা বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা জানান, চলমান ভয়াবহ ভাঁঙ্গণ ঠেকানোর মতো ফান্ড তাদের হাতে নেই। এদিকে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আহসান হাবিব দূর্গত এলাকা পরিদর্শন করে ক্ষতিগ্রস্থদের মধ্যে শান্ত্বনার বানী শুনিয়ে স্থান ত্যাগ করেছেন।

 

প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জহিরুল ইসলামের সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, দূর্গত এলাকার মানুষের মাঝে উপজেলা প্রশাসনের তরফ থেকে নগদ ১০ হাজার টাকা ও ২শ কেজি চাল বিতরণ করা হয়েছে। এদিকে সরকারিভাবে যে ত্রান সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে তা প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত অপ্রতুল বলে এলাকাবাসি জানিয়েছেন।

আ’লীগ নেতার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে দূর্বৃত্তদের অগ্নিসংযোগে

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বামনডাঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের জামালহাটস্থ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে গভীর রাতে দূর্বৃত্তরা অগ্নিসংযোগ করেছে। এতে নগদ অর্থ, মালামাল ও গোডাউন ঘরসহ প্রায় ২০ লক্ষাধিক টাকার মালামাল ভষ্মিভূত হয়েছে। জানা যায়, গতকাল শুক্রবার গভীর রাতে বামনডাঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহেদুল ইসলাম জাবেদের মেসার্স বায়েজিদ এন্টারপ্রাইজ নামক টিন, সিমেন্ট ও প্লাষ্টিক সামগ্রীর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে দূর্বৃত্তরা অগ্নিসংযোগ করে। এতে ওই প্রতিষ্ঠানে রক্ষিত সামগ্রী নগদ অর্থ ও গোডাউন ঘরসহ প্রায় ২০ লক্ষাধিক টাকার মালামাল পুড়ে ভস্মিভূত হয়েছে। খবর পেয়ে দমকল বাহিনী ঘটনাস্থলে এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ঘটনাস্থল পরির্দশন করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন, ইউপি চেয়ারম্যান এমএ মতিন সরকার, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মজনু হিরো ও পুলিশ প্রশাসন। এ বিষয়ে ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ী জাবেদ সুন্দরগঞ্জ থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন।

ই.আর প্রকল্পের কাজ নিয়ে শুভংকরের ফাঁকি

গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলায় বেসরকারী সংস্থা ইএসডিও এবং এলজিইডি’র যোগসাজসে ই.আর প্রকল্পের কাজে শুভংকরের ফাঁকি চলছে। বিশ্বখাদ্য কর্মসূচীর নীতিমালা অনুযায়ী গৃহিত ই.আর প্রকল্পের আওতায় মাটির কাজে হতদরিদ্র নারী শ্রমিক নিয়োজিত থাকার কথা। কিন্তু তা উপেক্ষা করে নারী শ্রমিকের স্থলে পুরুষ শ্রমিক দিয়ে ভূয়া তালিকায় মজুরি প্রদানের নামে চলছে হরিলুট বাণিজ্য। এমন অভিযোগ এনে সংশ্লিষ্ট এলাকার লোকজন জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কাছে পৃথক আবেদন জানিয়েও কোন প্রতিকার না পাওয়ার ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। সংল্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার ২টি ইউনিয়নে গত ২০১১-২০১২ অর্থ বছর থেকে চলতি ২০১২-২০১৩ অর্থ বছর পর্যন্ত বিশ্বখাদ্য কর্মসূচীর সহায়তায় এবং এলজিইডি’র অর্থায়নে ই.আর প্রকল্পের আওতায় মাটির কাজ পরিচালিত হচ্ছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব পেয়েছে বেসরকারী সংস্থা ইএসডিও এবং তদারকি করছেন সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রকৌশল শাখা। বিশ্বখাদ্য কর্মসূচীর নীতিমালা অনুযায়ী হতদরিদ্র নারী শ্রমিক নিয়োগ, দৈনিক মজুরি খাতে মাথা প্রতি ২ কেজি চাল, ১শ’ গ্রাম ভোজ্য তেল, ২শ’ গ্রাম ডাল ও নগদ ৫৮ টাকা করে বিতরণের নিয়ম। এই পরিমাণ মজুরির বিনিময়ে প্রকল্পে নিয়োজিত নারী শ্রমিকদের দ্বারা দেড় কিউব মাটির কাজ করার কথা। কিন্ত মাঠ পর্যায়ে পাওয়া যায় বিপরীত চিত্র। হতদরিদ্র নারী শ্রমিকদের স্থলে পুরুষ শ্রমিকের উপস্থিতি পাওয়া গেলেও সংখ্যায় খুব কম।

 

তালিকাভূক্ত নারী শ্রমিকের অনুপস্থিতিতে ভূয়া পুুরুষ শ্রমিকের নামে মজুরি বিতরণের অভিযোগ চোখে পড়ে। এভাবে গত ২০১২ সালে নানা গোঁজা মিলে প্রকল্পের কাজ শেষে চলতি ২০১৩ সালের ২ মার্চ থেকে কিশোরগাড়ী ইউনিয়নের বেলের ঘাট রাস্তায় এবং হরিনাথপুর ইউনিয়নে প্রকল্পের কাজ শুরু হলেও খাতা-কলমে ভিন্ন চিত্র দেখা যায়। কিশোরগাড়ী ইউনিয়নে ১ হাজার নারী শ্রমিকের স্থলে দৈনিক মাত্র ২শ’ ৫০ থেকে ৩শ’ জন নারী-পুরুষের উপস্থিতি এবং হরিনাথপুর ইউনিয়নে ৫শ’ নারী শ্রমিকের স্থলে ২শ’ ৫০ শ্রমিকের উপস্থিতি থাকলেও বিতরণ তালিকায় সবার নামে পারিশ্রমিক প্রদানের নজির মেলে। এর বাইরেও বিতরণ বৈষম্য, ওজনে কম, শ্রমিক তালিকা প্রণয়নকালে মাথা পিচু ১ হাজর থেকে ২ হাজার টাকার উৎকোচ আদায়ের পাশাপাশি ভূয়া শ্রমিকের তালিকায় ভূয়া মজুরি বিতরণের বিচ্ছিন্ন অভিযোগ পাওয়া যায়। তালিকা প্রণয়নে স্বজনপ্রীতি, স্বচ্ছল, অবস্থাপন্ন ব্যক্তির নামেও মজুরি বিতরণ দেখিয়ে একটি গোপন সিন্ডিকেট অন্যায় সুবিধা অর্জন করেন। এ সব অনিয়ম দূর্ণীতি খতিয়ে দেখার দাবিতে এলাকাবাসী জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চেয়ে পৃথক আবেদন করেছেন। কিন্তু এখনো প্রতিকার না পেয়ে অভিযোগকারীরা ক্ষোভ-অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। ই.আর প্রকল্পের শ্রমিক দিয়ে ৪০ দিনের কর্মসৃজন কাজে করতে দেখা যায়।   এদিকে ইএসডিও প্রকল্প সমন্বয়কারী হায়দার আলীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রকল্পের অনিয়ম-দূর্ণীতির অভিযোগ সরাসরি অস্বীকার করেন। অন্য দিকে উপজেলা প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করা হলে একটি লিখিত অভিযোগ প্রাপ্তির সত্যতা স্বীকার করে বলা হয়, মাঠ পর্যায়ে তদন্ত শেষে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

ম্যানেজিং কমিটির দাতা সদস্যের মনোনয়ন নিয়ে পায়তারা

বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা দাতা সদস্যকে বঞ্চিত করে অন্য সদস্যের মনোনয়ন দিয়ে ম্যানেজিং কমিটি গঠনের প্রতিবাদে পলাশবাড়ীতে সাতআনা নওদা রেজিষ্টার্ড বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে স্বজনপ্রীতি ও স্বেচ্ছারিতার পায়তারা চলছে বলে একটি অভিযোগ আনা হয়েছে। ওই অভিযোগে বলা হয়েছে, বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাকালে ৫০ শতাংশ পরিমাণ জমিদাতা আলহাজ্ব করমত উল্ল্যা ও মোঃ বাবু মিয়ার নাম বিদ্যালয় পরিচালনা ম্যানেজিং কমিটি দাতা সদস্যের তালিকায় মনোনীত ছিলেন। গত ১২/০৩/২০১১ইং তারিখে আলহাজ্ব করমত উল্ল্যা ইন্তেকাল করলেও বাবু মিয়া জীবিত আছেন। কিন্তু প্রধান শিক্ষক নিজ স্বার্থে তার নাম দাতা সদস্য থেকে বাদ দিয়ে মরহুম করমত উল্ল্যার পুত্রের নাম দাতা সদস্য হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করে ম্যানেজিং কমিটি গঠন করেন। যা প্রচলিত নিয়মের পরিপন্থি ও স্বেচ্ছাচারিতা শামিল। এ মর্মে বাবু মিয়া ও তার পুত্র আনছার আলী সংশ্লিষ্ট পলাশবাড়ী উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা শিক্ষা অফিসারের বরাবরে পৃথক অভিযোগ জানালে একটি তদন্তের আদেশ হয়। কিন্তু প্রধান শিক্ষকের অনৈতিক প্রভাবে উক্ত তদন্তের অহেতুক গড়িমসি চলছে। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না। এ দিকে বিদ্যালয়ের জমি ৫০ শতাংশ জমির মধ্যে বর্তমান রেকর্ডে দেখা যায় ৩১ শতাংশ জমি বিদ্যালয়ের রেকর্ড হয়েছে। প্রধান শিক্ষক সেদিকে কোন প্রকার নজর না দিয়ে রেকর্ড না হওয়া জমিতে বিদ্যালয় ভবন নির্মাণ করছেন। দাতা সদস্য বাবু মিয়ার পুত্র আনছার আলী দাবী করেন যেহেতু আমার পিতা বর্তমানে বেঁচে আছেন তাকে দাতা সদস্য মনোনয়ন না দিয়ে অপরকে মনোনয়নের জন্য উপজেলা শিক্ষা অফিসে প্রেরণ করা হয়েছে। অন্য দিকে এই অভিযোগের ব্যাপারে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ্ব একেএম মোকছেদ চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে তদন্তের নির্দেশ দেয়ার সত্যতা স্বীকার করেন। কিন্তু সংশ্লিষ্ট শিক্ষা অফিসার আবু তারেক মোঃ রওনাক আকতার বলেন, বিভিন্ন কাজের ব্যস্ততায় এখনো তদন্ত সম্ভব হয়নি। প্রধান শিক্ষক এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঘটনাটি পাশ কাটিয়ে যান।     

উপজেলা  করার দাবীতে মানববন্ধন

গাইবান্ধা জেলার ৪টি উপজেলার শেষ সীমানা পলাশবাড়ি উপজেলার হরিনাবাড়ী পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রকে প্রসাশনিক থানাসহ উপজেলা করার দাবীতে আজ শনিবার হরিনাবাড়ী হাইস্কুল সম্মুখ সড়কে এক বিরাট মানব বন্ধন কর্মসুচি পালন করে এলাকাবাসী। মানব বন্ধন শেষে প্রায় আধাঘন্টা গাইবান্ধা- হরিনাবাড়ি সড়ক অবরোধ করে রাখে। ১৯৭৩ সালে গাইবান্ধার তদান্তিন ৫জন সংাসদ সদস্য এবং এলাকার পুনবিন্যাস কমিটি হরিনাবাড়ীতে থানা স্থাপনের সুপারিম করেন। ২০০০ সালে এক জনসভায়  কৎকালনি স্বরাস্ট্রমন্ত্রী নাসিম  এখানে পুনাঙ্গ প্রসাশনিক থানা স্থাপনের ঘোষনা দেন। ২০০১ সালে এখানে একটি তদন্ত কেন্দ্র স্থাপন করা হয়। বর্তমানে প্রায় ৩ কোটি টাকা ব্যায়ে সীমানা প্রাচীরসহ ভবন নির্মাণের কাজ চলছে।গাইবান্ধা, পলাশবাড়ি, গোবিন্দগঞ্জ ও সাঘাটা থানার শেষ সীমানা এই স্থানে যৌতিক কারনে প্রসাশনিক থানা করা প্রয়োজন হেতু এলাকাবাসী দীর্ঘ ৪২ বছর থেকে থানা স্থপনের দাবীতে আন্দোলন করে আসছেন।মাজহারুল ইসলাম জিন্নু মিয়ার সভাপতিত্বে মানববন্ধন চলাকালে বক্তব্য রাখেন গোলাম মাকছুদ মিয়া, আসাদুজ্জামান লোকমান, রুহুল আমিন প্রধান, হয়রত জামান গামা , জাহিদুল ইসলাম প্রমুখ।